রামমন্দির নিয়ে দলের কর্মীদের প্রচারে জোর দিতে বলে গেলেন অমিত শাহ। পাশাপাশি জানিয়ে গেলেন যে, কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলির উপর নির্ভর করে চললে হবে না। নিজেদের শক্তি বাড়াতে হবে। প্রচারে জোর দিতে হবে সোশাল মিডিয়ায়।
‘ভাইপো কবে গ্রেপ্তার হবে?’ জাতীয় গ্রন্থাগারের সভায় চিৎকার করে প্রশ্ন করেছেন কর্মীরা, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ভাষণের মাঝপথেই। তিনি তখন কোন কোন তৃণমূল নেতা দুর্নীতির অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়েছেন, সেই তালিকা বলছিলেন। ‘ভাইপো’ নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় থেমে যান কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তারপর বলেন, ‘‘আমি শুধু যাঁরা গ্রেপ্তার হয়েছেন তাঁদের নাম বলছি...।’’
মমতা ব্যানার্জির ভাইপো অভিষেক ব্যানার্জির বিরুদ্ধে জ্যোতিপ্রিয় তথা বালুর থেকেও বেশি অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও তাঁকে কেন গ্রেপ্তার করা হবে না—এর জবাব এই ভাবেই এদিন এড়িয়ে গেছেন অমিত শাহ। গত ২৯নভেম্বর ধর্মতলার সভাতেও তিনি অভিষেক ব্যানার্জির বিষয়ে কোনও কথা বলেননি।
তারপর থেকেই শুভেন্দু অধিকারীর মত নেতারা নিজেদের সুর বদলে ‘ভাইপো’র বিরুদ্ধে বলা বন্ধ করে দেন। ইতিমধ্যে অভিষেকও অনেকটাই সরে থাকছেন কেন্দ্রীয় সরকার-বিরোধী ভাষণ থেকে।
রাজ্যে শুভেন্দু-সুকান্ত টিমের উপর পুরোপুরি ভরসা করতে পারছেন না বিজেপি’র নেতারা। মঙ্গলবার তাও বুঝিয়ে দিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এবং বিজেপি’র সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডা।
লোকসভা নির্বাচন নিয়ে প্রাথমিক আলোচনায় এদিন তাই তাঁদের কথাতেই ডাকা হয়েছিল দিলীপ ঘোষ, রাহুল সিনহার মত নেতাদের। এদিন দিলীপ ঘোষ সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, ‘‘দল এই রাজ্যকে কতটা গুরুত্ব দিচ্ছে সেটা পরিষ্কার। শীর্ষ নেতা, বিশেষত অমিত শাহ, যাঁর নেতৃত্বে বিজেপি এ রাজ্যে বেড়ে ১৮ হয়েছে, তিনি বারবার রাজ্যে আসছেন। সঙ্গে সভাপতি এসেছেন। আশা করা আছে এবারও বাংলা বিমুখ করবে না। মাঝে কয়েক বছর লাগাতার অত্যাচারে কর্মীরা মনোবল হারিয়েছেন। সেটা ফেরাতেই তাঁদের বারবার আসা।’’
সোমবার রাতে কলকাতায় এসেছিলেন অমিত শাহ, নাড্ডা। মঙ্গলবার তাঁরা প্রথমে জোড়াসাঁকোর বড়া শিখ সঙ্গত গুরুদ্বারে গেছেন। তারপর কালীঘাট মন্দিরে পুজো দিয়েছেন। মন্দির থেকে নিউটাউনের হোটেলে ফিরে দলের নেতাদের সঙ্গে একপ্রস্থ বৈঠক করেছেন তাঁরা। বিকালে জাতীয় গ্রন্থাগারে দলের আরও নেতাদের সঙ্গে আর এক প্রস্থ বৈঠক করে নয়াদিল্লি ফিরেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং নাড্ডা।
এদিন ১৫জনের একটি টিম বানিয়ে দিয়ে গেছেন অমিত শাহ। সেই টিমে আছেন সুকান্ত মজুমদার, শুভেন্দু অধিকারী, দিলীপ ঘোষ, রাহুল সিনহা, অমিতাভ ভট্টাচার্য, সতীশ ধন, আশা লাকড়া, অমিত মালব্য, মঙ্কল পান্ডে প্রমুখ। অমিত শাহ সোশাল মিডিয়ায় জোর দিতে বলেছেন কর্মীদের। প্রধানমন্ত্রীর ইউটিউব চ্যানেলের সাবস্ক্রাইবার ২কোটি ছুঁয়েছে। মোদী ছাড়াও অন্য নেতাদের ইউটিউব চ্যানেলও ছড়িয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন শাহ। পাশাপাশি আগামী দিনগুলিতে রামমন্দির উদ্বোধনের প্রচারে জোর দিতে বলা হয়েছে। এছাড়া কেন্দ্রীয় বিভিন্ন প্রকল্পের প্রচারও করতে বলা হয়েছে।
শুভেন্দু অধিকারী-সুকান্ত মজুমদার গোষ্ঠীই রাজ্য বিজেপি চালাচ্ছেন। তাঁদের বিশ্বস্তরাই বিজেপি’র বিভিন্ন পদে আছেন। কিন্তু রাজ্যে বিজেপি’র স্থানীয় সংগঠনের তাতে বিশেষ হাল ফেরেনি। গত লোকসভা নির্বাচনের সময় রাজ্য বিজেপি’র সভাপতি ছিলেন দিলীপ ঘোষ। সেবার ১৮টি আসনে বিজেপি জিতেছিল। কিন্তু সাম্প্রতিককালে বিজেপি’র সংগঠনের বেহাল দশা স্পষ্ট হয়েছে। দলের নেতাদের ডাকা কর্মশালায় নির্বাচিত পঞ্চায়েত সমিতির একটি অংশ আসেননি। গ্রামে, মফস্বলে বিজেপি’র কর্মসূচি দেখা যায়নি।
Comments :0