অযোধ্যায় রাম মন্দিরের উদ্বোধনের প্রস্তুতিতে কোনও খামতি রাখতে চাইছে না উত্তরপ্রদেশ সরকার। কিন্তু সেই প্রচেষ্টায় বাধ সেধেছে উত্তরপ্রদেশের শহর এবং গ্রামে ঘুড়ে বেড়ানো আশ্রয়হীন গবাদী পশু এবং পথকুকুর।
অযোধ্যার পাশাপাশি গোটা রাজ্য জুড়ে পথে ঘুড়ে বেড়ানো গবাদী পশু ধরার উদ্যোগ নিয়েছিল যোগী প্রশাসন। প্রকল্পের ডেডলাইন ছিল ২০২৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর।
হিন্দুস্থান টাইমসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ৩১ ডিসেম্বর পেরিয়ে যাওয়ার পরেও উত্তরপ্রদেশের গ্রাম এবং শহরে ঘুরে বেড়াতে দেখা যায় ২১ হাজারের বেশি গরু সহ অন্যান্য গবাদি পশুকে। তারফলে সময়সীমা বাড়ানো হয় ১৫ জানুয়ারি অবধি। কিন্তু ১৫ জানুয়ারির পরেও উত্তরপ্রদেশের পথে ঘাটে দেখা মিলছে এই প্রাণীগুলির।
যদিও ওয়াকিবহাল মহলের মতে, প্রকৃত সংখ্যাটা ২১ হাজারের অনেকটাই বেশি।
নভেম্বরের গোড়া থেকে পশু আটক প্রকল্প হাতে নেয় যোগী প্রশাসন। ২০২২ সালের উত্তরপ্রদেশ বিধানসভা নির্বাচনের অন্যতম ইস্যু হয়ে উঠেছিল গবাদি পশু। বাধনহীন এই পশুগুলি নির্বিচারে কৃষকদের ফসল নষ্ট করা থেকে শুরু করে অন্যান্য সমস্যায় ফেলে সাধারণ মানুষকে। বহু ক্ষেত্রে পথ দুর্ঘটনার জন্যও দায়ী যত্রতত্র চড়ে বেড়ানো গরু, বাছুর এবং ষাঁড়।
অযোধ্যায় রাম মন্দিরের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের ফুলের সজ্জাও বহু জায়গায় খেয়ে ফেলেছে গরুর পাল।
সরকারি আধিকারিকদের একটা অংশের আশঙ্কা, পরিস্থিতির নিয়ন্ত্রণ নিতে না পারলে, ২০২৪’র লোকসভা নির্বাচনে খেসারত দিতে হবে বিজেপিকে।
সরকারি হিসেব অনুযায়ী, ১ নভেম্বর থেকে ৩১ ডিসেম্বর অবধি চলা পশু আটক অভিযানে ২ লক্ষ ৬ হাজার গবাদি পশুকে উদ্ধার করে বিভিন্ন গো-শালায় নিয়ে যাওয়া হয়। সরকারের হিসেব ছিল, গোটা রাজ্যে ২ লক্ষ ২৮ হাজার পথ-গবাদি পশু রয়েছে। শহরে এই সংখ্যাটা ৫৪,৯৯৪। এবং গ্রামাঞ্চলে এই সংখ্যা ১ লক্ষ ৭৩ হাজার।
যদিও বিরোধীদের দাবি, প্রকৃত সংখ্যার থেকে কয়েকগুণ কমিয়ে দেখানো হয়েছে উত্তর প্রদেশের পথে ঘাটে ঘুরে বেড়ানো গবাদি পশুর সংখ্যাকে।
২০১৮ সাল থেকে ১৪ লক্ষ গবাদি পশুকে রাস্তা থেকে উদ্ধার করেছে বলে দাবি করেছে বিজেপি সরকার। ওয়াকিবহাল মহলের মতে, রাজ্যে পশু বিক্রির বিরুদ্ধে লাগাতার আক্রমণ শানিয়েছে বিজেপি। গো রক্ষার নামে প্রশাসনের মদতে গুণ্ডারাজ চলেছে। গো-তষ্করির নামে পিটিয়ে মারা হয়েছে পশু ব্যবসায়ীদের। তারফলে বয়স হয়ে যাওয়া গবাদি পশুকে বিক্রি করতে না পেরে রাস্তায় ছেড়ে দিচ্ছেন ক্ষুদ্র এবং প্রান্তিক কৃষকরা।
সরকারি হিসেবে, ৬ হাজারের কাছে সরকারি গোশালা রয়েছে। প্রতিদিন গরু পিছু ৯শো টাকা খরচ করা হয়। ২০২৩-২৪ আর্থিক বর্ষে এই খাতে ৭৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে যোগী আদিত্যনাথ প্রশাসন।
গরুর পাশাপাশি পথ কুকুর নিয়েও নাজেহাল অযোধ্যা প্রশাসন। উদ্বোধনের দিন শহরকে পথ কুকুর মুক্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। অযোধ্যা কর্পোরেশনের তরফে কুকুরগুলিকে আটক করে ২০ কিলোমিটার দূরে কর্পোরেশনের ডগ পাউন্ডে পাঠানো হচ্ছে।
কর্পোরেশনের আধিকারিকরা জানাচ্ছেন, উদ্বোধনী অনুষ্ঠানকে সামনে রেখে শহরের প্রধান ৪টি সড়ক- রাম পথ, ভক্তি পথ, জন্মভূমি পথ এবং ধর্ম পথকে কুকুর এবং গরু মুক্ত করা হয়েছে।
যদিও সাধারণ মানুষের অভিযোগ, শহরের কেন্দ্রস্থলে দেখা না মিললেও, গলির ভিতরে দিব্যি দেখা মিলছে পথ-গবাদি পশুর।
Comments :0