SAMBA MAGIC IN WORLD CUP

অন্যদের ঘুম উড়িয়ে দিল ব্রাজিল

খেলা

FIFA WORLD CUP QATAR FOOTBALL 2022 WORLD CUP

অভূতপূর্ব। জাদুকরী। মায়াবী। এই তিন শব্দই কি ব্রাজিলের ফুটবলকে বর্ণনা করার জন্য যথাযথ? আমার মনে হয় না। সোমবার রাতে ফুটবল বিশ্ব সাম্বার জাদুতে যেভাবে মোহিত হলো, শব্দ খুঁজে পাচ্ছি না। অপার বিস্ময়ে ভাষা হারিয়ে ফেলছি। অপেক্ষায় ছিলাম, চলতি বিশ্বকাপে কবে এরকম ফুটবল উপহার দেবে, অবশেষে দেখতে পেলাম জোগো বোনিতো! তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করেছি। নেইমার, ভিনিসিয়াস জুনিয়র, রিচার্লিসনদের সাম্বার ঝলকে দুরমুশ হয়ে গেল হিউন মিন সনের দক্ষিণ কোরিয়া। ৪-১ গোলে জিতে কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত করল ব্রাজিল।


রীতিমতো আমার ছোটবেলায় ফিরে গিয়েছিলাম। ভীষণ নষ্টালজিক লাগছিল। গ্যারিঞ্চা, টোস্টাওয়ের কোমর দোলানি, রিভাল্ডো, রবিনহোদের স্কিল, রোমারিও, বেবেতোদের ফুটবল মনে করিয়ে দিল ব্রাজিল। মাঠে বসে আমার আটটা ব্রাজিলের খেলা দেখার অভিজ্ঞতা রয়েছে। কোরিয়ার বিরুদ্ধে এত টেকনিক্যালি নিখুঁত সুন্দর ফুটবল খেলল ব্রাজিল, ঠিক এরকম খেলাই খেলেছিল ১৯৯০ বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার বিরুদ্ধে। 

পুরো ম্যাচটায় সেদিন খেলেছিল ব্রাজিল। কিন্তু দিয়েগো মারাদোনার থ্রু ধরে ক্লডিও কানাজিয়া ব্রাজিলের স্বপ্ন ভেঙে দিয়েছিল। এদিন কোরিয়ার বিরুদ্ধে জিতেছে ব্রাজিল। আমি বারবার ফিরে যাচ্ছিলাম সেদিনটায়। প্রথম ম্যাচটা জাপান টাইব্রেকারে হেরে যাওয়ায় মন খারাপ হয়ে গিয়েছিল। ব্রাজিলের খেলা আমার সমস্ত দুঃখ লাঘব করে দিয়েছে। এই ধরনের শৈল্পিক খেলা দেখার জন্যই তো যে কোনও ফুটবলপ্রেমী হাপিত্যেশ করে বসে থাকে। 


সত্যি বলতে কি, আমার অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, এই খেলাটাই যদি ব্রাজিল পরের ম্যাচগুলিতে খেলতে পারে কোনও বিপক্ষের রোখার সাধ্য নেই। ব্রাজিল বিপক্ষ কোচেদের ঘুম উড়িয়ে দিল, সঠিক সময়ে ছন্দ পেয়ে। আরও দূর এগোবে ব্রাজিল। কোরিয়ার বিরুদ্ধে নেইমারের থাকা না থাকার পার্থক্য আরও একবার পরিষ্কার হলো। নেইমার খুব বড় ফুটবলার। একজন বল প্লেয়িং ফুটবলার। 

নেইমার মাঠে থাকলেই ভিনিসিয়াস, রিচার্লিসনরা বাড়তি উদ্যম পায়। সতীর্থদের মধ্যে থেকে সেরাটা বের করে আনে। নেইমারের খেলা দেখে তাকে ফিট মনে হয়েছে আমার। 
আর্জেন্টিনা নিঃসন্দেহে ভালো দল। তবে কিছু দুবর্লতার জায়গা রয়েছে। কিন্তু তিতের ব্রাজিলের মধ্যে সেটা লক্ষ্য করছি না। এর পেছনে তিতের গুরুত্ব অনেক। 

তিতে সম্পর্কে বিভিন্ন ভাবে পড়ি তাই জানি ব্রাজিলের কোচই দলটা সংঘবদ্ধ করে তুলেছেন। আমার মনে পড়ে যাচ্ছে, ক’দিন আগেই সাংবাদিক সম্মেলনে তিতে বলেছিলেন, আমার দলের ২৬ জনই প্রথম দলের ফুটবলার। এই কথাটাই ফুটবলারদের বাড়তি প্রেরণা দেয়। তিতে কথাও রাখলেন। খেলায় অ্যালিসন অতগুলি শট বাঁচানোর পরও দ্বিতীয়ার্ধে উইএভারটনকে নামিয়ে দিলেন। 


কোরিয়ার বিরুদ্ধে ব্রাজিলের খেলায় দেখলাম, থিয়াগো সিলভাকে স্যুইপারের মতো ব্যবহার করে, ব্রাজিল মাঝমাঠ ও দু’প্রান্ত ধরে সুইচ ওভার ফুটবল খেলছিল। মাঝখান থেকে একেবারে পেন্ডুলামের মতো দু’প্রান্ত ত্রিশ গজের ক্রস রাখছিল। ভিনিসিয়াসের কথা বহুদিন ধরে শুনছি, বিশ্ব মঞ্চে প্রথমবার গোল করে বুঝিয়ে দিলেন, ভিনির টেকনিক কতটা উন্নতমানের। ছেলেটার বল নিয়ন্ত্রণ অনবদ্য। 

আসলে এটা ছোটবেলার অভ্যাস ব্রাজিলের ফুটবলারদের। ওরা ছোট থেকেই বিপ ছাড়া খালি গায়ে একটা বল নিয়ে অনুশীলন করে, এই কারণেই ভিনিদের বল নিয়ন্ত্রণ ভালো হয়। ব্রাজিল দ্বিতীয় গোলটা পায় পেনাল্টি থেকে, অনেকেরই মনে হয়েছে পেনাল্টির সিদ্ধান্ত বিতর্কিত। একদমই তা নয়। 

ফিফার নিয়মানুযায়ী, বক্সের মধ্যে পাশ-সামনে থেকে ট্যাকলই হোক বা পিছন থেকে, সেটা পেনাল্টি হিসাবে গণ্য হবে। নেইমার যে টেকনিকে পেনাল্টি মারলো, ঠান্ডা মাথায় গোল করে গেল। এভাবে পেনাল্টি মারতেন ভারতের সুরজিৎ সেনগুপ্ত। ও একবার এভাবেই জেসিটির বিরুদ্ধে মিসও করেছিল। ওই টেকনিকে পেনাল্টি মারা কখনোই বন্ধ করেনি।


তৃতীয় গোলটা নিয়ে কী বলবো, এগুলি হচ্ছে শিল্পের গোল। আমি নিজে ভালো হেডার ছিলাম। বল মাথায় নিয়ে নাচাতে পারতাম। রিচার্লিসন যেভাবে তিনবার বলটা মাথায় নাচালো বাহবা পাওয়ার যোগ্য। তারপর একজন ফুটবলারের সঙ্গে ওয়াল খেলে, থিয়াগো সিলভার পাস ধরে বাঁ-পায়ে অসাধারণ ফিনিশ। এই রিচার্লিসন ছেলেটা আরও কয়েকটা বিশ্বকাপ খেলবে। এরকম গোল করে মানুষকে আনন্দ উপহার দেবে।

লুকাস পাকুয়েতার গোলটাও ভালো। তবে কোরিয়ার খেলা দেখে যেটা বুঝলাম, প্রথম থেকেই ব্রাজিলের বিরুদ্ধে এত ওপেন খেলা উচিত হয়নি। আক্রমণাত্মক খেলেছে বলেই, প্রথম দশ মিনিটের মধ্যে দু’গোল খেয়ে গেলে, মনোবলে চিড় ধরবেই। তবুও কোরিয়া শেষ অবধি কিন্তু লড়াই করে গেছে। গোল করার চেষ্টা করেছে। দূরপাল্লার শটে গোল করার চেষ্টা করেছে। কোরিয়ার গোলটাও পেল সেই বক্সের বাইরে থেকে দূরপাল্লার শটে। কোরিয়া লড়াই নজর কাড়লেও ব্রাজিলের ফুটবলে মুগ্ধ। বিশ্বকাপ জেতার দাবিদার ব্রাজিল। এই খেলাটা ধরে রাখলে।

 

Comments :0

Login to leave a comment