Central Team

কেন্দ্রীয় টিমের সামনে ক্ষোভে ফেটে পড়ল গ্রাম

রাজ্য

ক্যাপশন: কেন্দ্রের নজরদারির দলের উপস্থিতিতেই আবাস যোজনা নিয়ে ক্ষোভ উগড়ে দিচ্ছেন মানুষ।

রাজ্যের ত্রুটি না রাখা ‘খাতির যত্ন’ গ্রহণ করেই ফের আবাস যোজনার কাজের পরিদর্শন করল কেন্দ্রীয় সরকারের দল। সেই পরিদর্শনে ফের তারা সাক্ষী হলেন মানুষের চূড়ান্ত ক্ষোভ, দেদার দুর্নীতির অভিযোগের। কেন্দ্রের দল ঘুরলেন, মানুষের কথা নামমাত্র শুনলেন এবং ফিরেও গেলেন। আর প্রশাসনের কর্তারা তৎপর রইলেন কেন্দ্রের দলের তদারকিতে ও ক্ষুব্ধ মানুষকে শান্ত করতে। 

ঘটনাস্থল বীরভূম। বীরভূমের বোলপুরের শুক্রবার পা দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার কাজের পরিসংখ্যান ও পরিচ্ছন্নতা নজরদারি করতে আসা কেন্দ্রের প্রতিনিধিরা। একদিন আগেই দুই সদস্যদের দল এসে পৌঁছেছিল জেলায়। এদিন সকালে তারা হাজির হন বোলপুরের রূপপুর পঞ্চায়েতের লোহাপাড়া, পূর্ব বাহাদুরপুর, মোলডাঙা সহ সংলগ্ন গ্রামগুলিতে। গ্রামে পা দিতেই ক্ষোভের আঁচ টের পান প্রশাসনিক কর্তারা। গ্রামের মানুষ জোট বেঁধে ক্ষোভ উগড়ে দেন প্রতিনিধিদের সামনেই। লোহাপাড়ার মমতা লোহার, পারি লোহারের বক্তব্য, ‘‘ত্রিপল টাঙিয়ে বাস করছি। দু’বার ছবি নিয়ে গেল। এখনও বাড়ি হলো না।’’ গ্রামেরই জগন্নাথ লোহারের ক্ষোভ, ‘‘আমার তিন তিনবার ছবি তুলে নিয়ে গেল নেতারা। তারপর আর কোনও সাড়া নেই। অথচ অনেকেই আছেন যারা একটি নয়, দুটো তিনটে করে বাড়ি পেয়ে গেছে।’’ 

এদিন গ্রামে যে বাড়িগুলি তৈরি হয়েছে সেগুলিরই একাংশে পা দিয়েছিলেন কেন্দ্রের দল। কেন্দ্রের দল আসবে বলে কাজের খতিয়ানের তথ্য সংবলিত বোর্ড বাড়িগুলিতে রাতারাতি লাগিয়ে দিয়ে গেছেন তৃণমূলের নেতারা বলেই জানিয়েছেন গ্রামের মানুষ। যেমন রাখী দাসের কথায়, ‘‘আমি তিন বছর হলো বাড়ি পেয়েছি। এক লাখ টাকা পেয়েছি মোট। বাকি কুড়ি হাজার টাকা এখনও পাইনি। আজকে সকালেই বাড়িতে বোর্ড লাগিয়ে দিয়ে গেছে।’’ গ্রামের মানুষের সঙ্গে কথা বলে এটাও স্পষ্ট হয়েছে, কেন্দ্রের দলের সামনে কি কি বলতে হবে তাও নাকি পাখি পড়া করে বুঝিয়ে দিয়ে গেছে পঞ্চায়েতের হর্তাকর্তারা। সেই সঙ্গে বাড়ি পাওয়া অনেকেই নাম প্রকাশের শর্তে জানিয়েছেন ,‘‘বাড়ির জন্য কুড়ি হাজার টাকা করে দিতে হয়েছে আমাদের।’’ 

সদ্য তৈরি হওয়া বাড়িগুলিতে পরিদর্শনের ঢুকলে কেন্দ্রের দলের উদ্দেশ্যে বাড়ি পাওয়া থেকে বঞ্চিতরা গলা ফাটাতে শুরু করেন, ‘কেন আমরা বাড়ি পেলাম না ? কবে পাব ?’ যেমন ছায়া লোহারের ক্ষোভ, ‘‘যে পেছে সে নিজে একটা, ছেলের জন্য, মেয়ের জন্য একটা-দুটো তিনটে করে বাড়ি পেয়ে গেছে। আমার মতো গরিবরা  ভাঙা ঘর সারাইতে পারছি না।’’ মানুষ ক্ষোভের সঙ্গে কেন্দ্রের দলের দিকে প্রশ্ন করতে উদ্যত হলে ব্লকের কর্তারা ছুটে আসেন তাদের ক্ষান্ত করতে। পরিস্থিতি সামাল দিতে সাফাই দেন, যে বাড়িগুলি হয়েছে সেগুলি ঠিকঠাক দেখে গেলেই তো পরের বাড়ির বরাদ্দ আসবে। স্পষ্ট হয়ে যায়, তৃণমূলের লুটের রমরমায় তৈরি হওয়া মানুষের ক্ষোভকে ধামাচাপা দিতে কতটা মরিয়া স্থানীয় প্রশাসনকে। তার কারণও অবশ্য একান্তে খোলসা করেছেন ব্লকেরই এক কর্তা। বলেছেন, ‘‘কেন্দ্রের দলের যাতে কোনোরকম অসুবিধা না হয়, খাতির যত্ন যাতে ঠিকঠাক হয় তা দেখার জন্য উপর থেকে নির্দেশ আছে।’’ তবে কেন্দ্রের প্রতিনিধিরা তাদের পর্যবেক্ষণ কি, মানুষের এত ক্ষোভের প্রেক্ষিতে কি ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে তা নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি।

 

Comments :0

Login to leave a comment