উত্তর ২৪ পরগণা জেলা প্রশাসনের অসহযোগিতার যোগ্য জবাব দিয়ে জনপ্লাবনের সাক্ষী থাকল বারাসাতের কাছারি ময়দান। মঙ্গলবার কানায় কানায় পূর্ণ কাছারি ময়দানের সভা থেকে তৃণমূল এবং বিজেপিকে এক আসনে বসিয়ে তীব্র আক্রমণ করলেন সিপিআই(এম)’র রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম।
সেলিম বলেন, ‘‘রাজ্যকে বাঁচাতে হলে পঞ্চায়েতকে বাঁচাতে হবে। সরকার মানে গ্রাম সভা। জেলা পরিষদ, পঞ্চায়েত সমিতি। মমতা ক্ষমতায় এসেই গ্রাম সভা তুলে দিল। আর মোদী লোকসভা তুলে দিল। বিধানসভা, লোকসভা, গ্রামসভা, পৌরসভায় কেউ কথা বলতে না পারলে দেশ বেচতে সুবিধা হবে।’’
সেলিম এদিন বলেন, ‘‘বালেশ্বরে রেলে দুর্ঘটনা ঘটল। বাংলার ছেলেরা মরল। এরাজ্যে কাজ না পেয়ে পরিযায়ী শ্রমিক হয়ে ভিন রাজ্যে যাচ্ছিল তাঁরা। তাঁদের হাতে জেনারেল টিকিট। সেই টিকিটে যাত্রীর নাম লেখা থাকে না। লাশ হয়ে ওডিশায় পড়ে রয়েছেন তাঁরা। কিন্তু ৩টে ট্রেন বেলাইন হলে ৩০০ লোক মারা যায়। আর রাজ্য বেলাইন হলে, দেশ বেলাইন হলে কত লোক মারা যাবে? আমরা দেশকে, রাজ্যকে বেলাইন হতে দেব না। রক্ত দিয়ে আটকাবো।’’
এদিন কাছারি ময়দানের সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সিপিআই(এম) কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী, উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সম্পাদক মৃণাল চক্রবর্তী, রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য পলাশ দাস প্রমুখ।
এদিনের সভা থেকে তিনি অভিষেক ব্যানার্জিকে কটাক্ষ করে বলেন, আরএসএস মমতাকে জিতিয়েছে। মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশনেও চোর, স্কুল কমিশনেও চোর। স্কুল ও বন্ধ হচ্ছে । মাদ্রাসা ও বন্ধ হচ্ছে। আজ বিজেপি’তে, সেদিন তৃণমূল সরকারের মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীও দুর্নীতিতে যুক্ত। স্কুল মাদ্রাসা কোনটিই খোলার কথা না বলে দুই দলই এখন বলছে স্কুল আলাদা, মাদ্রাসা আলাদা। হিন্দু আলাদা, মুসলিম আলাদা।
সভা থেকে সেলিম বলেন, দুর্নীতি রুখতে গেলে একজোট হতে হবে। মানুষ দুর্বল হলে লুঠ করতে সুবিধা হবে। দিদির লুঠ আর মোদীর লুঠ রুখতে গেলে সব মানুষকে এক জোট করতে হবে।
তিনি বিজেপিকে তীব্র আক্রমণ করে বলেন, ‘‘নারদাতে শুভেন্দু টাকা নেয়নি? তৃণমূলের নেতাদের সঙ্গে মিলে টাকা নেয়নি? লোকসভায় বিজেপির স্পিকার ওই ভিডিওতে দেখতে পাওয়া একজন সাংসদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেননি। তার বদলে তৃণমূলের সাংসদরা বিজেপির একের পর এক বিল সমর্থন করেছে ওয়াক আউটের নামে।’’
সেলিম বলেন, ‘‘বসিরহাটে দাঙ্গা হল। আমাদের যেতে দিল না। ধূলাগড়ে ঢুকতে দিল না। পার্টির সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরিকে নিয়ে আমরা গিয়েছিলাম। এই সরকার শুধু বিজেপি আরএসএসকে ঢুকতে দেবে দাঙ্গা করতে। আসানসোলে ইমামের ছেলে খুন হল। আমাদের যেতে দিল না। আগুন আটকাতে দিল না। বাংলায় শ’য়ে শ’য়ে দাঙ্গা হয়েছে। আর মমতা বলে গিয়েছে, কোথাও কোনও দাঙ্গা হয়নি। আর হাওড়ায় যখন হিন্দু মুসলিম একজোট হয়ে দাঙ্গা আটকানোর চেষ্টা করছিল, তখন ধর্ণা মঞ্চ থেকে মমতাই বলে দিলেন, হাওড়ায় দাঙ্গা হচ্ছে।’’
একইসঙ্গে রাজ্য পুলিশকে নিশানা করে সেলিম বলেন, ‘‘হাওড়া পুলিশ দাঙ্গায় ঢিলে দিল। আর আমরা মিছিল করতে গেলে টাইট দিতে চাইল। কোর্টে থাপ্পড় খেয়েছে। এখনও গালে হাত বোলাচ্ছে। ’’
তৃণমূল ও বিজেপির বোঝাপড়া সম্পর্কে সাধারণ মানুষকে সতর্ক করে তিনি বলেন, তৃণমূল খাল কেটে বিজেপিকে নিয়ে এসেছে। সাবানের সঙ্গে শ্যাম্পু ফ্রি। তৃণমূল বাড়লেই বিজেপি বাড়বে।
একইসঙ্গে তিনি দাবি করেন, কালীঘাটের কাকুকে ধরলেই হবে না। পিসিকেও ধরতে হবে। সিবিআই-ইডি’র হিম্মত হবে না নোটিশ পাঠিয়ে কোনও লালঝাণ্ডার মানুষকে কোমড়ে দড়ি পরিয়ে গ্রেপ্তার করতে। কিন্তু তৃণমূল জেলে যাওয়ার প্যারেড করছে।
তৃণমূলের সংখ্যালঘু নীতিকে কটাক্ষ করে সেলিম বলেন, ‘‘ত্বহা সিদ্দিকি, ইমাম বরকতি কিংবা সিদ্দিকুল্লা চৌধুরীদের এখন আর মমতা ব্যানার্জির আশেপাশে দেখা যাচ্ছে না। মমতা ব্যানার্জি এখন যেখান থেকে পারছে একজন গেরুয়াধারীকে জোগাড় করে নিজের সঙ্গে নিয়ে ঘুরছে। ধর্ম আর রাজনীতিকে মেশাবেন না।’’
তৃণমূল এবং বিজেপি, দু’দলকেই লক্ষ্য করে বলেন, ‘‘আমরা বলছি, দেশটাকে সংবিধান অনুযায়ী, আইন অনুযায়ী পরিচালনা করুন।’’
এদিন রাজ্য প্রশাসনের দিকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়ে সেলিম বলেন, এটা ২০২৩ সাল। ২০১৮ সাল নয়। আমরা ডিএম, এসপি, নবান্ন, ছাপ্পান্ন সবাইকে বলছি, গঙ্গা দিয়ে অনেক জল গড়িয়েছে। দুটোকে এক করবেন না। সব হিসেব গুলিয়ে দেওয়া হবে।
সোমবার বিকেলে পূর্ব বর্ধমানের মঙ্গলকোটে সিপিআই(এম) কর্মী সঞ্জীব মন্ডলকে খুন করার অভিযোগ উঠেছে তৃণমূল কর্মীদের বিরুদ্ধে। সেই প্রসঙ্গে সেলিম বলেন, লালঝাণ্ডার কর্মীদের জীবন নিয়ে খেলার চেষ্টা করবেন না। তাহলে বাংলার রঙ নীল সাদা থাকবে না। অন্য রকম হবে, অন্য রঙ হবে।
Comments :0