CPI(M) RAJASTHAN

রাজস্থানে ১০ আসনে কড়া লড়াই লাল ঝাণ্ডার

জাতীয়

CPIM rajasthan assembly election bengal panchayat election TMC BJP সিপিআই(এম)'র জনসভায় অংশ নিয়েছেন মহিলারা।

ময়ূখ বিশ্বাস
 

(এসএফআই’র সাধারণ সম্পাদক প্রচারে রয়েছেন রাজস্থানে। তাঁর সঙ্গে কথোপকথনের ভিত্তিতে প্রতিবেদন)

ভোটমুখি রাজস্থান। সমানে সমানে টক্কার দিচ্ছে কংগ্রেস এবং বিজেপি। কিন্তু রাজ্যের ২০০টি বিধানসভা আসনেই ছবি এমন নয়। প্রায় ১০টি আসনে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছেন সিপিআই(এম) প্রার্থীরা। 
 

২৫ নভেম্বর রাজস্থান ভোটের লাইনে দাঁড়াবে। গত পাঁচ বছর রাজ্য চালিয়েছে কংগ্রেস। রাজস্থানে গত কয়েকটি নির্বাচনে দেখা গিয়েছে প্রতি পাঁচ বছর অন্তর সরকার বদলায়। সেই অঙ্কে প্রতিষ্ঠান বিরোধিতা রয়েছেই। তার উপর রয়েছে কংগ্রেসের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব। যদিও সেই দ্বন্দ যতটা না মাটিতে রয়েছে, তার থেকেও বেশি রয়েছে বিজেপির প্রচারে। 

দ্বন্দ কিন্তু রয়েছে বিজেপি’তেও। রাজস্থানে বিজেপির প্রধান মুখ চারজন। ধারে এবং ভারে কিছুটা এগিয়ে রয়েছেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা রাজ পরিবারের বসুন্ধরা রাজে সিন্ধিয়া। দলীয় অঙ্কে বেশ কিছুদিন কোণঠাসা থাকার পরে ফের সামনের সারিতে উঠে এসেছেন ‘রানীসা’। 

কিন্তু তাঁর কর্তৃত্বকে চ্যালেঞ্জ করছেন রাজিন্দর রাঠোর, গজেন্দর সিং সেখাওয়াত এবং বিজেপির রাজ্য সভাপতি সিপি যোশি। বেশি বিধায়ক যাঁর অনুগামী, জয়পুরের ‘গদ্দি’তে বসবেন তিনি। 
এরই সঙ্গে রয়েছে গলি-মহল্লা স্তরে নেমে গিয়ে আরএসএস’র বিষাক্ত প্রচার।

 এই অবস্থায় সিপিআই(এম) কড়া লড়াই দেওয়ার জায়গায় রয়েছে শেখাওয়াতি অঞ্চলে। ভদ্রা আসন থেকে দাঁড়িয়েছেন বলবন পুনিয়া। তিনি ২০১৮ সালেও এই কেন্দ্র থেকে বিধায়ক হয়েছিলেন। যেখানেই জনসভা করছেন, সেখানেই জনপ্লাবনে পরিণত হচ্ছে সেই সভা। মাটির কাছাকাছি থেকে প্রতিপক্ষেরও সমীহ আদায় করে নিয়েছেন। ত্রিমুখী প্রতিযোগিতা হলেও তাঁর জেতার সম্ভাবনা প্রবল। 

ধোঁধ কেন্দ্রে দাঁড়িয়েছেন প্রেমা রাম।  এই আসন থেকেই ১৯৯৩ সালে জয়ী হয়েছিলেন অমরা রাম। টানা ৩বার। ২০০৮ সালে এই আসনে দাঁড়ান প্রেমা রাম। জয়ী হয়েছিলেন। যদিও ২০১৮’র নির্বাচনে পরাজিত হতে হয় কংগ্রেস প্রার্থীরা কাছে। কিন্তু ধোঁধ কেন্দ্রের সাধারণ মানুষ বলছেন, এবার সিপিআই(এম)’র যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে।

একই রকম ভাবে জয়ের লক্ষ্যেই প্রচার চালাচ্ছেন দাতা রামগড় কেন্দ্রে জনপ্রিয় কৃষকনেতা এবং সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক অমরা রাম, দুঙ্গরগড়ের গতবারের জয়ী বিধায়ক গিরিধারীলাল মাহিয়া। 
 

এই রাজ্যের বেশ কয়েকটি অঞ্চলে কৃষকদের মধ্যে সিপিআই(এম)’র দারুণ প্রভাব। নির্বাচনের ময়দানে তার প্রতিফলন পড়েছে। জাত এবং ধর্মীয় মেরুকরণ প্রতিহত করে উঠে আসছে সেচের জল, কৃষি ঋণ মকুব, ফসলে সহায়ক মূল্যের নিশ্চয়তার মত কৃষিজীবীর বিষয়। 

রাজস্থানের কমরেডরা বলছেন, এই রাজ্যের কৃষক পরিবারের বহু সন্তান সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। কৃষকের উপর হওয়া অন্যায়ের প্রতিক্রিয়া রয়েছে এই অংশের মধ্যে। একইসঙ্গে অগ্নিবীর প্রকল্পের মাধ্যমে সেনায় যোগ দেওয়ার স্বপ্নকে আঘাত দেওয়া হয়েছে। সেনাতেও ঠিকা নিয়োগ, আলাদা বেতনের ব্যবস্থা চালু করেছে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার। 

রাজস্থানের কৃষিজীবী গ্রামগুলিতে গভীর রাত অবধি চলছে নিবিড় প্রচার। অনেকটা আমাদের বাংলার দাওয়া কিংবা উঠোন বৈঠকের মত। এবারের নির্বাচনে কৃষকদের পাশাপাশি গ্রামীণ ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের একটা অংশের সমর্থনও পেতে পারে সিপিআই(এম)। 

রাজস্থান সহ গোটা উত্তর ভারতে ২০১৯’র নির্বাচনেও নরেন্দ্র মোদীক সামনে রেখে প্রচারে ঝড় তুলেছিল বিজেপি। কিন্তু এবারে সেই হাওয়া অনেকটাই ফিকে। মোদী, অমিত শাহ থেকে শুরু করে জেপি নাড্ডার মত বিজেপি নেতারা নিয়মিত দিল্লি-জয়পুর ডেইলি প্যাসেঞ্জারি করছে। মোদী বলছেন বটে, যে কৃষকরা তাঁর বন্ধু, তাঁর ভাই।  কিন্তু সেই ভাষণের প্রভাব? খুব বিশেষ মালুম হচ্ছে না। 

এবারের নির্বাচনের ফলাফল যাই হোক, হৃদয় জিতে নিয়েছে এসএফআই’র কর্মীরা। বলে রাখা ভালো, রাজস্থানের কোটা শহরকে ছাপিয়ে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার হাব হয়ে উঠেছে সিকর। 

স্বাভাবিক ভাবেই সেখানে গড়ে উঠেছে একের পর এক বৃহৎ বেসরকারি কোচিং সেন্টার। সেই সিকরেই বিকল্প কোচিং সেন্টার চালায় এসএফআই। সেনাবাহিনীতে ভর্তির তালিমও দেওয়া হয় এসএফআই’র উদ্যোগে। সব মিলিয়ে রাজস্থানের সমাজের একটা অংশে বিশেষ ভরসার জায়গা অর্জন করে নিয়েছেন বামপন্থীরা।

Comments :0

Login to leave a comment