FALSE CASE AGAINST CPI(M) SUPPORTER

১৩ বছর ধরে কারাবন্দী, নির্দোষ প্রমাণিত সিপিআই(এম) সমর্থক

রাজ্য জেলা

CPIM TMC BJP AIKS WEST BENGAL PANCHAYAT ELECTION WEST BENGAL POLITICS 2023 BENGALI NEWS

২০১১ বিধানসভা নির্বাচনের আগে জামুরিয়ায় গাড়ি দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান তৃণমূল কর্মী রবিন কাজী। রাজনৈতিক প্রতিহিংসা থেকে সেই ঘটনায় ২৪জন সিপিআই(এম) কর্মী সমর্থকের বিরুদ্ধে খুনের মামলা দায়ের করেছিল তৃণমূল। নিম্ন আদালত ২২জনকে নির্দোষ ঘোষণা করলেও যাবজ্জীবন সাজা পান অরবিন্দ ওরফে দীনু বাউড়ি নামে এক সিপিআই(এম) সমর্থক। সোমবার কলকাতা হাইকোর্ট দীনু বাউড়িকে নির্দোষ ঘোষণা করল। 

দীনু বাউড়ি ২০১১ সাল থেকে সংশোধনাগারে রয়েছেন। কলকাতা হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছে, অবিলম্বে তাঁর মুক্তির ব্যবস্থা করতে হবে। 

স্থানীয় সিপিআই(এম) নেতৃত্ব জানাচ্ছেন, ২০১১ সালের ৪ এপ্রিল জামুরিয়া থানার বারুল গ্রামে তৃণমূল মিছিল বের করেছিল। সেখানে একটি গাড়ি দুর্ঘটনা ঘটে, এবং রবিন কাজী নামে এক তৃণমূল কর্মী প্রাণ হারান। সেই ঘটনাকে ঘিরে রাজনৈতিক চক্রান্ত শুরু করে তৃণমূল। ৪ এপ্রিল জামুরিয়া কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী প্রভাত চ্যাটার্জি ২৪জন সিপিআই(এম) কর্মী সমর্থকের বিরুদ্ধে খুনের মামলা দায়ের করেন। কেস নম্বর ১৬৭/২০১১ জামুরিয়া পিএস। 

৫ এপ্রিল মমতা ব্যানার্জি ঘটনাস্থলে এসে আরও রাজনৈতিক উত্তেজনা তৈরি করেন। তৃণমূলের অন্যায় চাপে পুলিশ অরবিন্দ বাউড়ি সহ ২১জন সিপিআই(এম) কর্মী সমর্থককে গ্রেপ্তার করে হেফাজতে নেয়। অভিযুক্তদের মধ্যে প্রায় প্রত্যেকেই খেতমজুর সহ অন্যান্য শ্রমজীবী অংশের মানুষ। কিন্তু তৃণমূলের রাজনৈতিক চক্রান্তের শিকার হন তাঁরা। রাজনৈতিক প্রতিহিংসা থেকে এফআইআরে সিপিআই(এম)’র জামুরিয়া জোনাল কমিটির সম্পাদক মনোজ দত্ত’র নামও ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। 

৯০ দিন পরে আসানসোল আদালত দীনু বাউড়ি ছাড়া বাকি ২০ জনকে জামিন দেয়। মামলা চলতে থাকে। এরমধ্যে অভিযুক্তের তালিকায় নাম থাকা কাঙাল বাউড়ি এবং বিল্টু বাউড়ি মারা যান। ১১ বছর মামলা চলার পরে ২০২২ সালের ২ ডিসেম্বর ২১জন সিপিআই(এম) কর্মী সমর্থককে বেকসুর খালাস করে আসানসোল আদালত। কিন্তু দীনু বাউড়িকে ভারতীয় দন্ডবিধির ৩০২ ধারায় দোষী সাব্যস্ত করে ৭ ডিসেম্বর যাবজ্জীবন সাজার নির্দেষ দেন বিচারক। 

এই রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা হয়। মামলার শুনানি চলাকালীন স্পষ্ট হয়, কিভাবে স্রেফ রাজনৈতিক প্রতিহিংসা থেকে সিপিআই(এম) কর্মী সমর্থকদের ফাঁসানো হয়েছে। শুনানিতে উঠে আসে, দুর্ঘটনাগ্রস্ত গাড়িটির সঠিক চিহ্নিতকরণ হয়নি। তার কোনও মেকানিকাল টেস্টও করা হয়নি, যা থেকে প্রমাণ করা যায় এটি খুন না দুর্ঘটনা। গাড়ির স্টিয়ারিংয়ে দীনু বাউড়ির আঙুলের ছাপ মেলেনি। একইভাবে গাড়ির মালিকের বয়ানও নথিভুক্ত করা হয়নি। কোনও সাক্ষী দীনু বাউড়িকে গাড়ি চালাতেও দেখেননি।

সোমবার বিচারপতি জয়মাল্য বাগচী এবং গৌরাঙ্গ কান্তের ডিভিশন বেঞ্চ দীনু বাউড়িকে নির্দোষ ঘোষণা করে। আদালতের পর্যবেক্ষণ, সাক্ষীরা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে সাক্ষ্য দিয়েছে। একইভাবে এফআইআরে বলা বক্তব্যের সঙ্গে সাক্ষীদের বয়ানের মিল পাওয়া যায়নি। 

এই প্রসঙ্গে সিপিআই(এম) পশ্চিম বর্ধমান জেলা কমিটির সম্পাদক গৌরাঙ্গ চ্যাটার্জি বলেছেন, ‘‘তৃণমূলের করা মিথ্যা মামলাকে হারিয়ে সত্যের জয় হল। আইন সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করল। রাজনৈতিক প্রতিহিংসা থেকে গরীব মানুষকে হয়রানি করা হল, দিনের পর দিন তাঁরা জেলে কাটালেন, মামলায় হাজিরা দিতে গিয়ে নাজেহাল হলেন। দীনু বাউড়ি ২০১১ সাল থেকে জেলে রয়েছেন। তাঁর জীবন থেকে ১৩টা বছর কেড়ে নেওয়া হল। এর খেসারত কে দেবে?’’

সিপিআই(এম) নেতৃত্বের বক্তব্য, গোটা জেলা জুড়ে এমন অজস্র মিথ্যা মামলার খতিয়ান ছড়িয়ে রয়েছে। স্রেফ সক্রিয় ভাবে সিপিআই(এম) করার ‘অপরাধে’ মিথ্যা মামলা ও পুলিশি হয়রানির শিকার হয়েছেন কয়েক হাজার গরিব মানুষ। সিপিআই(এম)-কে এইভাবে দুর্বল করে পশ্চিম বর্ধমান জেলায় বিজেপির পায়ের তলার মাটি শক্ত করেছে তৃণমূল। 

কলকাতা হাইকোর্টে এই মামলা লড়েন আইনজীবী শামিম আহমেদ, অর্ণব সিনহা, সালোনি ভট্টাচার্য, গুলশানওয়ারা পারভিন, অর্করঞ্জন ভট্টাচার্য প্রমুখ। আসানসোল আদালতে আইনী লড়াই চালান আইনজীবী শেখর কুন্ডু প্রমুখ। 

Comments :0

Login to leave a comment