CPI(M)

বাড়ি ফিরলেন শাসনে সন্ত্রাসে ঘরছাড়া সিপিআই(এম) কর্মীরা

রাজ্য

CPIM west bengal panchayat election TMC BJP সিপিআই(এম) নেতৃবৃন্দের সঙ্গে শাসনের ঘরছাড়া সিপিআই(এম) কর্মীরা।

পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে তৃণমূলী সন্ত্রাসে প্রায় সাড়ে তিনমাস ঘরছাড়া হয়ে থাকার পর শাসনের ১৬জন সিপিআই(এম) কর্মী বৃহস্পতিবার কীর্তিপুর গ্রামে তাঁদের বাড়িতে ফিরলেন। সিপিআই(এম)’র পক্ষ থেকে বারংবার জানানোর পরেও শাসন থানার আইসি দীর্ঘদিন ধরে টালবাহানা করছিলেন। অবশেষে হাইকোর্টে অভিযোগ দায়েরের পর শাসন থানার আইসি এদিন নিজ দায়িত্বে ওই ১৬জনকে পুলিশের গাড়িতে গ্রামে পৌঁছে দিলেন। ওই ১৬জনের মধ্যে ৪জন অর্থাৎ সাবির আটা, মায়া বিবি, ইমান আলি ও আলি আটা কীর্তিপুর ১ গ্রাম পঞ্চায়েতে সিপিআই(এম) প্রার্থী ছিলেন এবং ইকবাল হোসেন ছিলেন পঞ্চায়েত সমিতির প্রার্থী। এদের কেউ এমনকি ভোট দিতেও গ্রামে ঢুকতে পারেননি। বলা সত্ত্বেও শাসন থানার আইসি এদের গ্রামে ঢোকাতে রাজি হননি, এমনকি ভোটের দিনও। 
সিপিআই(এম) কর্মীদের অপরাধ ছিল, গত ৬জুন বারাসত কাছাড়ি ময়দানে পার্টির সমাবেশের প্রচারের জন্য ১জুন কীর্তিপুর ১নং গ্রাম পঞ্চায়েতের কৃষ্ণমাটি গ্রামে পার্টির পোস্টার ও ঝান্ডা লাগাচ্ছিলেন। সেই সময় তৃণমূলের নেতা আবদুল মান্নান ও ইজরায়েল লাঠি, রড ও আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে কোনও কারণ ছাড়াই পার্টিকর্মীদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। তৃণমূলীদের হুমকি ছিল, শাসন অঞ্চলে কোনও লাল পতাকা থাকবে না। ওই দিন আক্রান্ত হয়েছিলেন ১৬জন সিপিআই(এম) কর্মী। একজন মহিলাকর্মী ছিলেন। প্রত্যেকেই রক্তাক্ত হয়েছিলেন। এদের মধ্যে আবদুল্লা মোল্লা গুরুতর জখম হয়ে প্রথমে বারাসত হাসপাতালে ভর্তি হন। পরে তাঁকে আরজি কর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। পরে একটি বেসরকারি হাসপাতালে তাঁকে ভর্তি করতে হয়। প্যারালাইসিস হয়ে গিয়েছিল।  তাঁকে কিছুটা সুস্থ করা গেছে। শুধু হামলাই নয়, ওইদিন যে সমস্ত পার্টিকর্মী আক্রান্ত হয়েছিলেন, তাঁদের নামে মিথ্যা মামলাও করেছিল তৃণমূল। ২জনকে গ্রেপ্তারও করে পুলিশ। পরবর্তী সময়ে জামিন পাওয়ার পর ওই দু’জনকে গ্রামে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। হুমকি দেওয়া হয়েছিল, গ্রামে ঢুকলেই খুন করে ফেলা হবে। 


সিপিআই(এম) নেতা আহমেদ আলি খান এদিন জানান, পার্টির পক্ষ থেকে শাসন থানার আইসি মণিরুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হয়েছিল। যোগাযোগ করা হয় নির্বাচন কমিশন, জেলা শাসক, এসডিও, বিডিও, এসডিপিও’র সঙ্গেও। কিন্তু কেউই নিরাপত্তার আশ্বাস দেয়নি। থানার আইসি’র সঙ্গে বারবার যোগাযোগ করা হয়েছে ঘরছাড়াদের ঘরে ফেরানোর উদ্দেশ্যে। কিন্তু প্রথমে আইসি জানান, ভোট মিটুক। পরে বলেন, ভোটের গণনা হয়ে যাক। তারপর বলেন, ওদের একুশে জুলাই হয়ে যাক, ২৪জুলাই গ্রামে ফিরিয়ে নেব। তারপর আবার যোগাযোগ এরপর বলেন, ২৯জুলাই মহরম হয়ে যাক। তারপর বলেন, আমি কোন দায়িত্ব নিতে পারবো না। নিরাপত্তা দিতে পারবো না। এই ঘটনাটির পর উত্তর ২৪ পরগনা জেলা শাসককে লিখিতভাবে চিঠি দেওয়া হয়। আর এই কপির চিঠি পাঠানো হয় ডিআইজি, ভবানী ভবন, জেলার পুলিশ সুপার, নির্বাচন কমিশন, এসডিও’কে। 
আহমেদ আলি খান বলেন, এত করেও যখন কিছু হলো না, তখন এই সব ঘটনার বিবরণ দিয়ে হাইকোর্টে মামলা রুজু করা হয়। হাইকোর্টের আইনজীবী মহম্মদ জামিলউদ্দিন থানায় ফোন করলে আইসি জানান, আমি দায়িত্ব নিয়ে ঘরে ফিরিয়ে দেব। এরপর আইসি আর ফোন ধরেন না। পরে আইসি জানান, ৫ সেপ্টেম্বর চাকলা চলো শেষে ওদের গ্রামে ফিরিয়ে নেব। সেই অনুযায়ী বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টায় সময় দেন ঘরছাড়াদের ঘরে ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য। 
এদিন আহমেদ আলি খান, কুতুবউদ্দিন আহমেদ, সালাউদ্দিন, মহাদেব ঘোষ, বিধান ঘোষের নেতৃত্বে ১৬জন পার্টিকর্মীকে শাসন থানায় পৌঁছে দেওয়া হলে থানার আইসি তাঁদের কৃষ্ণমাটি গ্রামে পৌঁছে দেন। যে ১৬জন পার্টিকর্মী ঘরছাড়া ছিলেন তারা হলেন, সাবির আটি, শেখ জাহাঙ্গির, সাবুর আলি, শেখ আবদুল্লা মোল্লা, ইকবাল হোসেন, মায়া বিবি, জাহাঙ্গির হোসেন, সাহারাব আলি, ইমান হোসেন, বরকত আলি, লিয়াকত আলি, আলি আটা, হাকিবুল আটা, সালামত আটা, নুরউদ্দিন দফাদার ও মহম্মদ বাপ্পা। 

Comments :0

Login to leave a comment