প্রতীম দে
২৯ মার্চ, ২০২৩। শহীদ মিনারে দলের সভা থেকে তৃণমূল সাংসদ অভিষেক ব্যানার্জি বলেছিলেন, ‘‘যদি প্রমাণ করতে পারেন আমি কোনোরকম দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত, তা হলে যাই হোক না কেন, যে ইস্যুতেই হোক না কেন এই শহীদ মিনারেই ফাঁসির মঞ্চ বরণ করে নেব’।
তৃণমূল সাংসদের অভিযোগ, তাঁর নাম বলতে চাপ দিচ্ছে তদন্তকারী সংস্থা। অভিষেক বলেছিলেন, ‘‘এই তো মদনদা জেলে ছিলেন। কুণাল ঘোষও জেলে ছিলেন। এঁদের বলা হয়েছিল, আমার নাম নিলেই ছেড়ে দেবে। আমার জন্য আলাদা আইন করার দরকার নেই।’’
নিয়োগ দুর্নীতি সহ কয়লা পাচার একাধিক দুর্নীতিতে নাম জড়িয়েছে ডায়মন্ড হারবারের তৃণমূল সাংসদের। তাকে ইডি তলবও করেছে। সিবিআইও তলব করেছে। তিনি হাজিরা দিয়েছেন। বেরিয়ে এসে সাংবাদিক সম্মেলনও করেছেন। তাঁকে আবার ১৩ সেপ্টেম্বর তলব করেছে ইডি। শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলার তদন্তের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাঁকে তলব করা হয়েছে।
অভিষেকের এই তলব নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি সোমবার নবান্নে সাংবাদিক সম্মেলনে বলেছেন, ‘‘অভিষেককে সারাক্ষণ বিরক্ত করা হচ্ছে। অকারণে হেনস্তা করা হচ্ছে ওকে। কোনও প্রমাণ নেই।’’
প্রশ্ন উঠছে, সত্যি নির্দোষ হয়ে থাকলে হাজিরা এড়ানোর জন্য বার বার আদালতে ছুটছেন কেন অভিষেক ব্যানার্জি। সমাবেশে ফাঁসির মঞ্চে চড়ে যাওয়ার ভাষণ দিলেও বাস্তবে হাইকোর্ট থেকে সুপ্রিম কোর্টে ঘুরছেন তৃণমূলের এই নেতা।
২৯ আগস্ট নিয়োগ দুর্নীতির এই মামলায় কলকাতা হাইকোর্টে বিচারপতি অমৃতা সিনহা প্রশ্ন তুলেছিলেন যে কেন এই সংস্থার এক কর্ণধার সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রকে গ্রেপ্তার করা হলে অভিষেক ব্যানার্জিকে সমন পাঠানো হবে না? ইডি’র আইনজীবীর অভিষেক ব্যানার্জির আরেকটি বিচারাধীন মামলার উল্লেখ করেন। বিচারপতি সিনহা বলেন, মামলা বিচারাধীন থাকলে সমন পাঠানো যাবে না কেন! তদন্তের অগ্রগতির রিপোর্ট ১৪ সেপ্টেম্বরের মধ্যে আদালতে জমা দেওয়ার নির্দেশ দেন তিনি। সেই সময়সীমার আগের দিন, ১৩ সেপ্টেম্বর অভিষেককে তলব করেছে ইডি।
এই সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র চলতি বছর ফেব্রুয়ারি মাসে সংবাদমাধ্যমের সামনে বলেছিলেন, ‘‘আমার সাহেব অভিষেক ব্যানার্জি। তাকে কেউ ধরতে পারবে না।’’ নিয়োগ দুর্নীতি কান্ডে ধৃত গোপাল দলপতির মুখে শোনা যায় কালিঘাটের কাকু তথা সুজয় কৃষ্ণ ভদ্রের কথা।
সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রর মন্তব্যের অনেক পরে তলব করা হয় অভিষেক ব্যানার্জিকে। নিয়োগ দুর্নীতি মামলা থেকে নিষ্কৃতি পেতে হাইকোর্ট এবং সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানিয়েছিলেন অভিষেক ব্যানার্জি। জেরা থেকে নিস্তার পাওয়ার আরজি জানিয়েছিলেন, কিন্তু সেই আবেদন আদালতে খারিজ হয়ে গিয়েছে আগস্টেই। তার আগে বিচারপতি বদলের জন্য দায়ের হয়েছে মামলা। বিচারপতি বদল হলেও এই মামলা থেকে নিস্তার পাননি তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। চলতি বছর পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে ২০ মে সিবিআই’র কাছে হাজিরা দেন অভিষেক ব্যানার্জি।
তারপর কেটে গিয়েছে দু’মাস। নিয়োগ দুর্নীতি তদন্তে বার বার আদালতে মুখ পুড়েছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারি সংস্থার। এখনও বিভিন্ন সময় তাদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। বিচারপতি শুনানি চলাকালিন বলছে মাথা থেকে তদন্ত করতে, মাথাকে ধরতে। তাই হয়তো চাপে পড়ে আবার ‘ভাইপো’কে ডাকা হচ্ছে।
Comments :0