Firhad Hakim

গার্ডেনরিচ কান্ডে ফের দায় এড়ালেন ফিরহাদ

রাজ্য কলকাতা

গার্ডেনরিচ কান্ডে শুরু থেকে দায় এড়াতে দেখা গিয়েছে কলকাতা কর্পোরেশনের মেয়র ফিরহাদ হাকিমকে। বুলি আওড়ানোর মত করে তিনি বলে গিয়েছেন, ‘‘শহরের কোথাও বেআইনি নির্মাণ হলে আমি কি করে জানব?’’ 
দায় এড়ানোর সেই মরিয়া চেষ্টা জারি থাকল বৃহস্পতিবারও। গার্ডেনরিচে বাড়ি ভেঙে পড়ার ঘটনার বয়স ৭২ ছাড়িয়ে ৯৬ ঘন্টার দিকে এগোলেও ফিরহাদ রইলেন ফিরহাদেই। 
বৃহস্পতিবার কর্পোরেশনের ১৩৪ নম্বর ওয়ার্ডের লেনে ভেঙে পড়া নির্মীয়মাণ বহুতলটির ধ্বংসাবশেষ সরানোর কাজ তদারকি করতে দেখা যায় ফিরহাদকে। ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ১০জন। ‘শেরু চাচা’ নামে এক স্থানীয় বাসিন্দা এখনও ভেঙে পড়া বাড়ির নীচে চাপা পড়ে রয়েছে। ঘটনায় গুরুতর আহত হয়ে চিকিৎসাধীন ২০’র কাছে হতদরিদ্র মানুষ।
কিছুক্ষণ তদারকির পরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন মেয়র। তাঁকে শহর জুড়ে চলা লাগামহীন অবৈধ নির্মাণ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘‘এগুলো নিয়ে আলোচনা হয়ে গিয়েছে। টিভির পর্দায় আমাকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়ে গিয়েছে। তাই এই বিষয় নিয়ে নতুন করে কোনও কথা বলব না। দায় এড়ানো, জবাব দেওয়া ইত্যাদি রোজ শুনছি। যে যা বলে বলুক। আমি এই বিষয়ে কোনও প্রশ্নের উত্তর দেব না।’’
সাংবাদিকরা তাঁকে ভাইরাল হওয়া একটি বেআইনি বাড়ি সম্পর্কে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ‘‘এটা আমি কি করে জানব? আমি আইন হাতে নিয়ে বসে নেই। এখন আমি রেসকিউ অপারেশনে রয়েছি। মানুষের পাশে থাকতে হবে। বেআইনি নির্মাণ নিয়ে কর্পোরেশনে যখন বসব তখন কথা বলব। এখানে রেসকিউ করতে এসেছি। সেটা ছাড়া অন্য কিছু নিয়ে কথা বলব না।’’
রবিবার মধ্যরাতের পর থেকে মেয়র এবং ১৩৪ নম্বর ওয়ার্ডের কোটিপতি কাউন্সিলর শাসম ইকবাল নিয়মকরে বলে গিয়েছেন, ‘‘বেআইনি নির্মাণ হলে তার দায় সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের আধিকারিকদের। আমরা কি করে জানব!’’
কিন্তু সেই বক্তব্য যে নির্জলা মিথ্যা, তা স্পষ্ট করছেন কর্পোরেশনের ইঞ্জিনিয়ার থেকে আধিকারিকরা। তাঁদের বক্তব্য, ‘‘প্রতি মাসে বরো কমিটির বৈঠক হয়। শহরে ১৭টি বরো রয়েছে। সেখানে কাউন্সিলররা উপস্থিত থাকেন। সেই বৈঠকে বরো’র বিল্ডিং কমিটির তরফে বরো এলাকায় নির্মীয়মাণ সমস্ত বাড়ির তালিকা দেওয়া হয়। সেই তালিকায় স্পষ্ট করা হয়, কোন নির্মাণটি বৈধ, আর কোনটি অবৈধ।’’
আধিকারিকরা মনে করাচ্ছেন, ‘‘কর্পোরেশনের মাসিক অধিবেশনে বড়বাজার অঞ্চলের একটি বেআইনি নির্মাণ সংক্রান্ত অভিযোগের প্রেক্ষিতে মেয়র বলেছিলেন, এবার থেকে বরো’র পাশাপাশি অবৈধ ও বৈধ নির্মাণের তালিকা প্রতিটি ওয়ার্ডের কাউন্সিলরের হাতে তুলে দেওয়া হবে।’’
প্রশাসনিক বৈঠকের ‘মিনিট্‌স’ থেকেই স্পষ্ট, ‘‘কাউন্সিলর এবং মেয়র কিছু জানেনা, জানার কথা নয়’’ জাতীয় কথাকে ডাঁহা মিথ্যা কথা বলাই যায়। সুভাষচন্দ্র বসুর চেয়ারে বসে, জনসমক্ষে কলকাতার মানুষের কাছে টানা ৪ দিন ধরে মিথ্যা কথা বলে চলেছেন কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম। 
গার্ডেনরিচের ঘটনার উত্তাপে শহরের প্রায় প্রতিটি প্রান্ত থেকে জড়ো হচ্ছে অবৈধ নির্মাণ ও পুকুর ভরাটের ভুরুভুরি অভিযোগ। বৃহস্পতিবার বেহালা পশ্চিম অঞ্চলের ১৩১ নম্বর ওয়ার্ডের ৭৫ নম্বর বনমালী নষ্কর রোড ঠিকানায় আবাসন নির্মাণের জন্য পুকুর ভরাটের ঘটনা সামনে আসে। সকাল থেকে এর বিরুদ্ধে তীব্র বিক্ষোভ দেখান সিপিআই(এম) বেহালা পশ্চিম-১ এরিয়া কমিটির কর্মী সমর্থকরা। বিক্ষোভ চলাকালীন পুলিশের সঙ্গে তীব্র বাদানুবাদে জড়িয়ে পড়েন কলকাতা জেলার সিপিআই(এম) নেতা কৌস্তভ চ্যাটার্জি। 
বিক্ষোভের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসা কলকাতা পুলিশের আধিকারিককে তিনি প্রশ্ন করেন, ‘‘এতদিন ধরে যখন পুকুর ভরাট হচ্ছিল তখন কোথায় ছিলেন আপনারা? আপনাদের সহযোগিতা ছাড়া কিভাবে দিনের আলোয় কলকাতা শহরের বুকে এতবড় অন্যায় ঘটে চলতে পারে?’’
সিপিআই(এম) নেতার অভিযোগের কোনও জবাব না দিয়েই সরে যেতে দেখা যায় পুলিশ আধিকারিকটিকে। 
কেবলমাত্র গার্ডেনরিচ কিংবা বেহালা নয়। দক্ষিণ কলকাতার গরচা রোড, সাউথ সিটি সংলগ্ন এলাকায়, কর্পোরেশনের ২ নম্বর ওয়ার্ডের অমৃতলাল ওঝার পুকুর সহ বহু জায়গা থেকে পুকুর ভরাট ও অবৈধ নির্মাণের অভিযোগ সামনে এসেছে। 
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, প্রতিটি ক্ষেত্রে বেআইনি কাজে সক্রিয় সহযোগিতা করে থাকে স্থানীয় থানা। কর্পোরেশনের আধিকারিক এবং ইঞ্জিনিয়ারদের অভিযোগ, বেআইনি নির্মাণ থেকে ১০০ টাকা কাটমানি উঠলে তার শতকরা ৩০-৩৫ টাকা যায় থানার পকেটে। বড় অংশ যায় বিধায়ক এবং কর্পোরেশনের মাথাদের কাছে। সেইদিক থেকে নজর ঘোরাতেই ১৩৪ নম্বর ওয়ার্ডের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাব অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার এবং ১৫ নম্বর বরো’র দায়িত্বপ্রাপ্ত অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ারকে শো’কজ করেছে কর্পোরেশন। এক এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ারকেও শো’কজ করা হয়েছে। 
অন্যায় ভাবে ১৩৪ নম্বর ওয়ার্ডের সাব অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ারকে কর্পোরেশনের মূল ভবনে ডেকে ভর্ৎসনাও করেন মেয়র। কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষের দায় আধিকারিকদের উপর চাপানোর প্রতিবাদে শুক্রবার কর্পোরেশনে বিক্ষোভের ডাক দিয়েছে কেএমসি ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যান্ড অ্যালাইড সার্ভিসেস অ্যাসোসিয়েশন।

Comments :0

Login to leave a comment