ছয় দশক আগে খাদ্য আন্দোলনের শহীদদের স্মরণ করল রাজ্য। সর্বত্র শ্রদ্ধা জানানো হয়েছে শহীদদের। শহীদদের গ্রামে গ্রামে হয়েছে মিছিল।
ছয় দশক আগের স্মরণীয় দিন ৩১ আগস্ট ১৯৫৯। কলকাতার প্রাণকেন্দ্র ধর্মতলায় বর্তমান শহীদ মিনার, তৎকালীন মনুমেন্ট ময়দানে সমাবেশ। সভা শেষ করে রাইটার্স বিল্ডিংসের উদ্দেশ্যে মিছিল শুরু। সেদিন গুলিবর্ষণের প্রয়োজন হয়নি। শুধুমাত্র লাঠিপেটা করেই খুন করা হয়েছিল ৮০ জনকে। তাঁদের অপরাধ, খাদ্যের জন্য তারা দাবি জানাতে এসেছিল। মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদ করছিলেন।
শনিবার খাদ্য আন্দোলনে উত্তরবঙ্গের প্রথম শহীদ আদিবাসী মহিলা কমরেড রাধুনি হেমব্রমের গ্রামে হয়েছে মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত শ্রদ্ধার মিছিল। কালিয়াগঞ্জ ব্লকের কৈপুকুর গ্রামে সারাভারত কৃষক সভার উদ্যোগে খাদ্য আন্দোলনের মিছিল শুরু হয়। কৈপুকুর থেকে শুরু হওয়া মিছিল এসে পৌছায় বুড়িডাণ্ডি গ্রামে। উপচে পড়া মানুষের ভিড়ে হয় সমাবেশ।
রায়গঞ্জে শহীদের শ্রদ্ধা জানানো হয় সিপিআই(এম) উত্তর দিনাজপুর জেলা দপ্তরে। রক্ত পতাকা উত্তোলন শহীদ বেদীতে মাল্য দান করেন পার্টিনেতা উত্তম পাল। সারা ভারত কৃষক সভার উদ্যোগে জেলার ৯৮ টি গ্রাম পঞ্চায়েতর সর্বত্র স্মরণ করা হয়েছে শহীদদের।
সিপিআই(এম) পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা দপ্তরে হয়েছে সভা ও রক্তদান শিবির। উদ্বোধন করেন পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রবীন দেব, সভাপতিত্ব করেন জেলা সম্পাদক বিজয় পাল।
পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা দপ্তরে রক্তদান শিবির।
সিপিআই(এম) জলপাইগুড়ি জেলা দপ্তরেও পালিত হয়েছে দিনটি। বামফ্রন্ট নেতৃবৃন্দ সিপিআই(এম) জেলা দপ্তরে শ্রদ্ধা জানান।
১৯৫৯ সালে অর্ধাহার, অনাহার আর অপুষ্টিতে প্রতিদিন প্রতিনিয়ত মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়তে থাকেন অসংখ্য মানুষ। অথচ সে সময়ে আসীন কংগ্রেস সরকার নির্বিকার। ৩১ আগস্ট খাদ্যের দাবিতে কলকাতার রাজপথে বর্বর হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ জানিয়ে প্রতি বছর ৩১ আগস্ট দিনটিকে খাদ্য আন্দোলনের শহীদ দিবস হিসেবে পালন করে আসছে বামফ্রন্ট। এদিন কোচবিহার সাগরদিঘি চত্বরে পঞ্চ শহীদবেদীতে মালা দিয়ে খাদ্য আন্দোলনের শহীদদের শ্রদ্ধা জানালেন জেলা বামফ্রন্টের নেতা কর্মীরা। ছিলেন কোচবিহার জেলা বামফ্রন্টের আহ্বায়ক অনন্ত রায়, রাজ্যসভার প্রাক্তন সাংসদ তারিণী রায়, সিপিআই(এম) নেতা অখিল প্রামাণিক, মহানন্দ সাহা প্রমুখ, ফরওয়ার্ড ব্লক নেতা বিপ্লব বসু প্রমুখ।
মাথাভাঙায় এই কর্মসূচির নেতৃত্ব দেন সিপিআই(এম) নেতা অরুণ চৌধুরী। সংক্ষিপ্ত আলোচনা করেন জয়ন্ত সাহা। এছাড়াও জেলার দিনহাটা, তুফানগঞ্জ, মেখলিগঞ্জ, হলদিবাড়ি সহ বিভিন্ন এলাকায় শ্রদ্ধার সাথে পালন করা হয় এই দিনটি।
এদিন শিলিগুড়ি সহ সমগ্র দার্জিলিঙ জেলা জুড়ে যথাযোগ্য মর্যাদার সাথে গণ আন্দোলনের শহীদ দিবস শনিবার পালিত হয়েছে। শিলিগুড়িতে অনিল বিশ্বাস ভবনের সামনে জেলা বামফ্রন্টের উদ্যোগে ঐতিহাসিক গণ আন্দোলনের শহীদদের স্মরণ করা হয়। শহীদ বেদীতে মালা দিয়ে শ্রদ্ধা জানান সিপিআই(এম) পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য জীবেশ সরকার, জেলা সম্পাদক সমন পাঠক, পার্টিনেতা অশোক ভট্টাচার্য, সিপিআই নেতা অনিমেষ ব্যানার্জি, ফরওয়ার্ড ব্লক নেতা অনিরুদ্ধ বোস, প্রমুখ।
পুরুলিয়া শহরের ট্যাক্সি স্ট্যান্ডে জেলা বামফ্রন্টের উদ্যোগে শহীদ বেদীতে মাল্যদান করেন জেলা বামফ্রন্টের আহবায়ক প্রদীপ রায় সহ বামফ্রন্টের নেতৃবৃন্দ। রেল শহর আদ্রায় বক্তব্য রাখেন জেলা সম্পাদক প্রদীপ রায়।
দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার বারুইপুরে সিপিআই(এম) জেলা দপ্তরে রক্ত পতাকা উত্তোলন করেন প্রবীণ সিপিআই(এম) নেতা হেমেন মজুমদার। জেলা সম্পাদক রতন বাগচী, পার্টি নেতা রাহুল ঘোষ, চন্দনা ঘোষদস্তিদার প্রমুখ শহীদ বেদীতে মাল্যদান করে শ্রদ্ধা জানান। এরিয়া কমিটির দপ্তর ও শাখা স্তরেও শ্রদ্ধা জানানো হয়। কাকদ্বীপ এরিয়া কমিটির উদ্যোগে খাদ্য আন্দোলনের অমর শহীদদের স্মরণে ও প্রবাদপ্রতিম কৃষক নেতা কমরেড হৃষিকেশ মাইতি স্মরণে রক্তদান শিবির হয়।
হুগলী জেলার চার মহকুমা এলাকায় সমাবেশ হয় এদিন। চন্দননগর মহকুমার সমাবেশ হয় হরিপালের বাসুদেবপুর মোড়ে। এখানে তারকেশ্বর, হরিপাল, সিঙ্গুর, ধনিয়াখালি ও চন্দননগরের শ্রমজীবী মানুষ অংশ নেন।
হরিপালের বাসুদেবপুর মোড়ে সমাবেশ।
শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর পাশাপাশি আর জি কর মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসক ছাত্রীকে নির্মমভাবে ধর্ষণ ও খুনের সঙ্গে যুক্ত অপরাধীদের গ্রেপ্তার ও দ্রুত বিচারের দাবি জানিয়ে মালদহের ইংরেজবাজার বামফ্রন্টের ডাকে পোস্ট অফিস মোড়ে অনুষ্ঠিত হল জনসমাবেশ।
শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানান সিপিআই(এম) নেতা কৌস্তভ চ্যাটার্জি, সিপিআই নেতা সৈকত গিরি, বাবর সরকার, আরএসপি নেতা আদিত্য জোতদার, ফরওয়ার্ড ব্লক নেতা শ্রীমন্ত মিত্র, অগ্রগামী মহিলা সমিতির পূর্ণিমা বিশ্বাস এবং ইংরেজবাজার শহর ও গ্রাম বামফ্রন্টের আহ্বায়ক তুষার গোস্বামী ও জয়ন্ত পোদ্দার সহ বামফ্রন্টের নেতৃবৃন্দ।
এদিন এই সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন জয়ন্ত ভ পোদ্দার।
মালদহের ইংরেজ বাজারে সমাবেশ।
Comments :0