Haryana

আক্রন্তদের পাশে সিআইটিইউ-কৃষকসভা

জাতীয়

হরিয়ানায় বুলডোজার অভিযান চলছে বিজেপি সরকারের। পাশপাশি প্রকাশ্যে মুসলিমদের বিরুদ্ধে হিংসার উসকানি দিয়ে প্রচার চলছে হিন্দুত্ববাদীদের, অবাধে। এরমধ্যেই সিআইটিইউ এবং কৃষক সভার এক প্রতিনিধি দল শনিবার নূহতে যায়। বুলডোজার চালিয়ে  মানুষের ঘর, দোকান-বাজার ভেঙে ফেলার কাজ দ্রুত বন্ধ করার দাবি জানিয়েছেন দুই সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। 


শনিবারও নূহতে মানুষের আস্তানা, দোকান ভেঙে দিয়েছে প্রশাসন। নলহরের শহীদ হাসান খান মেওয়াতি হাসপাতালের কাছে বহু দোকান এদিন ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়েছে প্রশাসন। এসডিএম অশ্বিনী কুমার জানিয়েছেন, হিংসার ঘটনায় যুক্তদের বাড়ি-দোকানেই বুলডোজার চালানো হয়েছে। শুক্রবারই হরিয়ানা সরকারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছিল, বেআইনি দখলদারদের দোকান উচ্ছেদ করা হচ্ছে। নূহতে সাম্প্রদায়িক হিংসার সঙ্গে এর কোনও যোগ নেই। কিন্তু এদিন এসডিএম অশ্বিনী কুমারের কথায় স্পষ্ট হয়েছে, হিংসায় যুক্ত তকমা দেগেই বুলডোজার চালানো হচ্ছে। বৃহস্পতিবার থেকে বুলডোজার চালানো শুরু হয়। নূহ থেকে ২০কিলোমিটার দূরের তাউরুতে প্রথম পরিযায়ী শ্রমিকদের আস্তানা গুঁড়িয়ে দেয়। সেই থেকে বিভিন্ন জায়গায় মুসলিমদের বিশেষত ফুটপাতে যাঁরা দোকান বানিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন, তাঁদের উপরে হামলা চালানো হচ্ছে। 


শনিবার সারা ভারত কৃষকসভার সর্বভারতীয় সহ সভাপতি ইন্দরজিৎ সিং, সিআইটিইউ হরিয়ানা রাজ্য কমিটির সম্পাদক জয় ভগবান, কোষাধ্যক্ষ বিনোদ কুমার এবং আখতার হুসেইন প্রমুখ নূহের বিভিন্ন জায়গায় যান। তাঁরা রোজকামেবা, ঘাসেড়া, নূহ, নলহার গ্রাম এবং মেডিক্যাল কলেজে যান। প্রতিনিধি দল নূহের কংগ্রেস বিধায়ক আফতাব আহমদ, নূহের বার অ্যাসোসিয়েশনের পদাধিকারী, বুদ্ধিজীবী এবং গণ্যমান্য নাগরিকদের সঙ্গেও কথা বলেন। 
নূহ জেলায় যখন মুসলিমদের দোকান, বাড়িঘর বুলডোজার চালিয়ে ভাঙছে বিজেপি সরকারের পুলিশ প্রশাসন, তখন হিসার জেলার হাঁসি শহরে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ এবং বজরঙ দলের পক্ষ থেকে মিছিল বার করে মুসলিমদের উপরে আক্রমণ করার জন্য প্রকাশ্যে মাইকে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। ৩০ সেকেন্ডের এমন একটি ভিডিও সোশাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে। সেখানে দেখা যাচ্ছে হিন্দুত্ববাদী এক নেতা এক বাজার এলাকায় মিছিলের গাড়ি থেকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, ফুটপাতে দোকান চালাচ্ছে যে সব মুসলমান, তাদের এই এলাকা খালি করে দিতে হবে। এখানে শুধু হিন্দুরা দোকান করবে। দুই দিন সময় দেওয়া হচ্ছে। দুই দিনের মধ্যে এলাকা খালি না করে দিলে যে পরিস্থিতি হবে, তার দায় মুসলমানদের নিতে হবে। মিছিল থেকে উন্মত্ত হিন্দুত্ববাদীরা উসকানিমূলক স্লোগান দিতে থাকে— ‘যব মুল্লে কাটে জায়েঙ্গে, তব রাম রাম চিল্লায়েঙ্গে। দেশকে গদ্দারোকো গোলি মারো শালো কো’।  


হাঁসি শহরের পুলিশের এসএইচও উদয় ভান গোদারা এদিন জানিয়েছেন, বিশ্ব হিন্দু পরিষদ এবং বজরঙ দল নূহতে তাদের নেতাদের উপরে আক্রমণের প্রতিবাদে মিছিল করতে চেয়েছিল। আমরা শান্তিপূর্ণ মিছিলের অনুমতি দিই। কিন্তু মিছিল থেকে ঘৃণা ছড়ানো ভাষণ দেওয়ার পরে এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়েছে। মুসলিম দোকানদাররা এলাকা ছেড়ে পালাতে শুরু করেছে বলেও পুলিশের এসএইচও স্বীকার করেছেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে এফআইআর হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি। তবে বিষয়টি সংবেদনশীল বলে বাকি এফআইআরটি হরিয়ানা পুলিশের ওয়েবসাইটে আপলোড করা হয়নি। হাঁসি শহরের দরগার দায়িত্বে থাকা চাঁদ মিয়া বলেন, অনৈক্যের পরিবেশ তৈরি করার জন্য এমন ঘটনা নিন্দনীয়। তিনি বলেন, এই এলাকায় মানুষের মধ্যে সম্প্রীতি রয়েছে। দরগায় যত মানুষ আসেন, তার ৯০ শতাংশ হিন্দু বলে তিনি জানান। হরিয়ানার অন্যত্রও এইধরনের ঘটনা ঘটাচ্ছে হিন্দুত্ববাদীরা। রেওয়ারি জেলার মহেন্দ্রগড়ের বিভিন্ন গ্রামেও একইধরনের ঘটনা ঘটেছে। মুসলিম দোকানদারদের দোকান খুলতে দেওয়া হচ্ছে না। অর্থাৎ একদিকে ভিএইচপি, বজরঙ দলের মতো আরএসএসের বিভিন্ন সংগঠনগুলি, অন্যদিকে সরকার-প্রশাসন উভয় পক্ষ থেকেই মুসলিমদের রুটি-রুজির উপরে আঘাত করতে দোকান, বাজার, ব্যবসার কেন্দ্রগুলো ভেঙে দেওয়া হচ্ছে বা বন্ধ করে রাখতে বাধ্য করা হচ্ছে। পাশাপাশি গুরগাঁও সহ যেসব এলাকায় বহু পরিযায়ী শ্রমিক এসে কাজ করেন, তাঁদের ভয় দেখিয়ে তাড়ানো হচ্ছে। যাঁদের বড় অংশ সংখ্যালঘু। এই ঘটনায় অবশ্য আবার বেকায়দায় পড়েছে হরিয়ানার বিজেপি সরকার। কারণ সস্তার এই শ্রমিকরা চলে গেলে গুরগাঁওয়ের শিল্প-কারখানা এবং পরিকাঠামোর কাজে লোক পাওয়া যাচ্ছে না। গুরগাঁওয়ের পুলিশ কমিশনার এদিন শহরের বিভিন্ন বস্তি এলাকায় যেখানে শ্রমিকরা থাকেন, সেখানে গিয়ে তাঁদের নিরাপত্তা নিয়ে আশ্বাস দিয়েছেন। পুলিশ, র্যা ফ, জেলা প্রশাসনের আধিকারিকরা এখন বারে বারে এই সব শ্রমিক মহল্লায় গিয়ে নিরাপত্তার আশ্বাস দিচ্ছেন, যাতে আরও শ্রমিকরা পালিয়ে না যান। যাঁরা প্রাণ ভয়ে পালিয়েছেন, তাঁরাও যাতে ফিরে আসেন, সেই চেষ্টাও চালানো হচ্ছে। 


কৃষকসভা, সিআইটিইউ প্রতিনিধি দল এক বিবৃতিতে বলেছে, প্রকৃত দোষীদের ছেড়ে নির্দোষদের হেনস্তা করা হচ্ছে। পুলিশ অসংখ্য যুবককে বেপরোয়াভাবে গ্রেপ্তার করছে। আতঙ্কের কারণে গ্রামের পর গ্রাম পুরুষশূন্য হয়ে গেছে। পুরো মেওয়াত অঞ্চলে ভয়ের পরিবেশ তৈরি করা হচ্ছে। এরফলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। প্রতিনিধি দল বলেছে, নূহতে কোনও অশান্তি নেই। সমস্ত সম্প্রদায়ের লোক কোনও ভয়ডর ছাড়াই নিজেদের মধ্যে মিলেমিশে থাকে। কিন্তু কারফিউ জারি করে রাখায় সমস্ত কাজকর্ম বন্ধ হয়ে রয়েছে। চাল-ডাল এবং জরুরি জিনিসের দাম বাড়ছে। শ্রমিকরা নিরন্ন অবস্থায় রয়েছেন, পালাতে বাধ্য হচ্ছেন। রাজ্য সরকারকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে দ্রুত পদক্ষেপের দাবি জানিয়েছে প্রতিনিধি দল। 
 

Comments :0

Login to leave a comment