Flowers in Siliguri

মূল্যবৃদ্ধির ঝাঁঝ শিলিগুড়ি ফুল বাজারেও

জেলা

ছবি রাজু ভট্টাচার্য।

অনিন্দিতা দত্ত- শিলিগুড়ি

দীপাবলী উৎসবকে কেন্দ্র করে এবার শিলিগুড়িতে সেভাবে ফুল বাজার জমেনি। অন্যান্য বছর দীপাবলীতে হিলকার্ট রোড, সেবক রোড হলুদ রঙের বন্যায় ভেসে যায়। সেই পরিচিত দৃশ্য একরকম উধাও। বিপুল পরিমান হলুদ গাঁদা ফুলের সম্ভার নিয়ে ফুল ব্যবসায়ীদের রাস্তায় দুই পাশে বসে থাকা আর ক্রেতাদের সারাদিন ধরে ভিড় জমানো তা এবছর হয়নি। অল্প কিছু সংখ্যক ব্যবসায়ীরা বসেছেন। তবে সমস্ত জিনিসপত্রের সাথে পাল্লা দিয়ে ফুলের দামও অনেক বেড়েছে। গাঁদা ছাড়া অন্যান্য ফুলের দাম ছিল অনেক বেশি। কদর দেখা গেছে প্লাষ্টিকের ফুলের। একটা সময় ছিলো যখন উত্তরের শিলিগুড়িতে মুলত নদীয়া জেলার রানাঘাট থেকে পরম্পরা মেনে অসংখ্য ফুল ব্যবসায়ীরা আসতেন। শিলিগুড়ি থেকে উত্তরের ডুয়ার্সের নানা প্রান্তে ফুল যেতো। এখন বাইরে জেলা থেকে আসা সেই ব্যবসায়ীদের সংখ্যা হাতেগোনা। তবে এবছর যে কিছু সংখ্যক ব্যবসায়ীরা ফুল নিয়ে বসেছেন তারা যে পরিমান লাভের মুখ দেখবেন বলে আশা করেছিলেন তা হয়নি। 
নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিষপত্রের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি সাধারণকে ভাবাচ্ছে। সর্বস্তরে মজুরি বৃদ্ধি না পাওয়ায় অগ্নিমূল্যের বাজারে কোন কিছুতেই হাত দিতে ঠিক সাহস হচ্ছে না নিম্নবিত্তদের। সাধ থাকলেও সামর্থ্যে কুলোচ্ছে না। অন্যান্য বছর সেবক রোড ও শিলিগুড়ি চার্চ রোডে দীপাবলী উৎসবের দিন হলুদ কমলা রঙের গাঁদা ফুলের সাজে ভরে ওঠে। এবার সেই রঙ অনেকটাই ফ্যাকাসে। সাধারণের বাড়িতে ও দোকানে ব্যবসায়ীরা কিছু ফুলের চেইন টানিয়ে দিয়ে নিয়ম রক্ষা করলেও, শহর সেজেছে আলোক সজ্জায়। মূল্যবৃদ্ধি উৎসবের বাজারে বড় অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। অন্যান্যবার শারোদৎসব পেরিয়ে যাবার পরেও ভাইফোঁটা পর্যন্ত উৎসবের একটা রেশ থাকে। এছাড়াও এবছর দীপাবলী উৎসব উপলক্ষ্যে উত্তরের ডুয়ার্সের বিভিন্ন এলাকা থেকে উৎসবের কেনাকাটার জন্য শিলিগুড়িতে মানুষের সমাগম হয়নি। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা উৎসবের বাজারে ক্ষতির মুখে পড়েছেন। সমতল থেকে পাহাড়ে কিছু গাঁদা ফুল গেছে। যে সমস্ত বড় বড় ফুল ব্যবসায়ীরা প্রতিবছর শিলিগুড়িতে পাহাড়ের বিভিন্ন এলাকা থেকে ফুল কিনতে আসেন তারা আসেননি।
দীপাবলী উৎসবে পাহাড় জমজমাট থাকে। কিন্তু এবছর দার্জিলিঙ পার্বত্য এলাকার বাগিচা শ্রমিকদের উৎসবভাতা মেলেনি। পাহাড়ের অনেক বাগান বন্ধ রয়েছে। শ্রমজীবি মানুষের হাতে টাকা নেই। তাই পাহাড় লাগোয়া সমতলের শিলিগুড়িতে উৎসবের বাজারে একটা বড় অংশের মানুষের ভিড় জমেনি। একটা সময় দীপাবলী আর ভাইফোঁটা উৎসবকে কেন্দ্র করে মাদলের আওয়াজ ভেসে যেত এক বাগান থেকে এক বাগানে। দীপাবলী উৎসবকে কেন্দ্র করে শিলিগুড়ি থেকে প্রচুর ফুল গাড়ি বোঝাই হয়ে পাহাড়ে পৌঁছে যেতো। কিন্তু এবছর পাহাড়ের মানুষের ঘর বাড়ি সাজেনি ফুলের সাজে। চা বাগানগুলির বিভিন্ন শ্রমিক মহল্লায় এবছর দীপাবলী উৎসবের রেশ সেরকম নেই। বরং ন্যায্য ও সম্মানজনক উৎসব ভাতার দাবিতে শুরু হয়েছে আরো বৃহত্তর আন্দোলনের প্রস্তুতি। ৫০ হাজার বাগিচা শ্রমিকদের গণস্বাক্ষর সংগ্রহ করে নিয়ে আটটি শ্রমিক সংগঠনের যৌথ উদ্যোগে আগামী ৬ নভেম্বর কলকাতার সভায় যোগ দিতে পাহাড়ের সর্বস্তরের চা বাগানের শ্রমিকরা তৈরী হচ্ছেন।

Comments :0

Login to leave a comment