ELECTION COMMISSION

কাল মুখ্যসচিব, ডিজির সঙ্গে বৈঠক, পঞ্চায়েত থেকে শিক্ষা নেওয়ার ডাক বাম-কংগ্রেসের

রাজ্য কলকাতা

election commission congress cpim bjp bengali news

২০২৪’র লোকসভা নির্বাচনের প্রস্তুতি বৈঠকের পরতে পরতে জুড়ে থাকল ২০২৩’র পঞ্চায়েত নির্বাচনের কালো ছায়া। ঠিক যেন ‘নেমেসিসের’ মত। 

রাজ্যের মুখ্যসচিব এবং রাজ্য পুলিশের ডিজি’র সঙ্গে মঙ্গলবার বৈঠকে বসবে কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ। এই উপলক্ষে রবিবার রাজ্যে পৌঁছেছে নির্বাচন কমিশন। তার আগে সোমবার, কলকাতার গ্র্যান্ড হোটেলে রাজ্য এবং জাতীয় স্তরে স্বীকৃত রাজনৈতিক দলগুলির প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করে কমিশন। 

এদিন সকাল সাড়ে নয়টা থেকে শুরু হয় রাজনৈতিক দলগুলির প্রতিনিধিদের সঙ্গে কমিশনের বৈঠক। সিপিআই(এম), তৃণমূল, কংগ্রেস, বিজেপি সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা কমিশনের সঙ্গে কথা বলেন, এবং তারপর সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হন তাঁরা। 

এদিন সিপিআই(এম)’র তরফে বৈঠকে যোগ দেন শমীক লাহিড়ী, কল্লোল মজুমদার এবং পলাশ দাস। সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে শমীক লাহিড়ী বলেন, ‘‘ রাজ্যে অবাধ ও সুষ্ঠু লোকসভা নির্বাচন করাতে গেলে পঞ্চায়েত ভোট থেকে শিক্ষা নিতে হবে কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনকে।’’

সাংবাদিকদের শমীক লাহিড়ী বলেন, কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনের উচিত ২০২৩ পঞ্চায়েত নির্বাচনের অভিজ্ঞতা পরখ করে দেখা। কমিশন খতিয়ে দেখুক রাজ্যের কত পঞ্চায়েত বিরোধীশূন্য, কোথায় কোথায় মনোনয়ন জমা দিতে দেওয়া হয়নি। রাজ্য প্রশাসন ভোট লুটের সঙ্গে যুক্ত। কমিশনের বেঞ্চকে এই তথ্য জানানো হয়েছে। এই প্রশাসনিক মেশিনারি দিয়ে ফ্রি এন্ড ফেয়ার নির্বাচন সম্ভব নয়। 

এদিন সিপিআই(এম)'র তরফে দাবি জানানো হয়েছে, ভোট লুট এবং কারচুপির অভিযোগ রয়েছে, এমন কোনও সরকারি আধিকারিককে লোকসভা নির্বাচনের কাজে যুক্ত রাখা যাবে না। একইসঙ্গে ভোটার তালিকায় থাকা অসংখ্য মৃত, ভুয়ো এবং একাধিক জায়গার ভোটার লিস্টে নাম থাকা ব্যক্তিদের ভোটার লিস্ট থেকে মুক্ত করারও দাবি জানিয়েছে সিপিআই(এম)। 

এদিন কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনের ফুল বেঞ্চ সিপিআই(এম) প্রতিনিধিদলের কাছে কিছু প্রশ্ন রাখে। এই প্রসঙ্গে লাহিড়ী বলেছেন, কমিশন আমাদের কাছে জানতে চেয়েছে কিভাবে এরাজ্যে নির্বাচনে কারচুপি হয়। আমরা সবিস্তারে তুলে ধরেছি কিভাবে খাতায় কলমে ট্রান্সফার করার নামে সরকারি আধিকারিকদের পুরনো জায়গায় রেখে দেওয়া হয়। এছাড়াও অন্যান্য কারচুপি তুলে ধরা হয়। কমিশন মনোযোগ দিয়ে আমাদের কথা শুনেছে। 

একইসঙ্গে তিনি বলেছেন, কেন্দ্রীয় বাহিনী কে থানার হাতে ছাড়লে বাহিনীর অপচয়ের সম্ভাবনা রয়েছে । তাই সিইও’র মাধ্যমে সরাসরি হস্তক্ষেপের দাবি জানানো হয়েছে। 

বিজেপির প্রতিনিধিদলে ছিলেন শিশির বাজোরিয়া, জগন্নাথ ভট্টাচার্য ও ওম পাঠক। জগন্নাথ ভট্টাচার্য বলেছেন, ‘‘কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনের কাছে ১জন করে বিশেষ পুলিশ এবং সাধারণ পর্যবেক্ষক পাঠানোর আবেদন করা হয়েছে। পর্যবেক্ষক হিসেবে প্রাক্তন ডিজি কিংবা প্রাক্তন মুখ্যসচিব পদমর্যাদার কোনও অফিসারকে পাঠানো হোক। রাজ্যে ৫টি প্রশাসনিক ডিভিশন রয়েছে। এই বিশেষ পর্যবেক্ষকদের অধীনে ডিভিশন ভিত্তিক আরও ৫জন করে পর্যবেক্ষক নিয়োগ করুক কমিশন। এবং দেখা উচিত, তাঁদের যেন কোনওভাবেই রাজ্য সরকার প্রভাবিত করতে না পারে।’’

এর পাশাপাশি বিজেপির দাবি, রাজ্যের সিইও অফিস তৃণমূলের পার্টি অফিসে পরিণত হয়েছে। সেই ঘুঘুর বাসা ভাঙা দরকার। 

তৃণমূলের তরফে যদিও দাবির বদলে কার্যত আবদার জানানো হয়েছে নির্বাচন কমিশনের কাছে। তৃণমূলের প্রতিনিধি দলে ছিলেন সুব্রত বক্সী, ডেরেক ও’ব্রায়েন এবং কল্যাণ ব্যানার্জি। কল্যাণ ব্যানার্জি সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘‘এরাজ্যে এক দফায় ভোট হোক। প্রয়োজনে আরও বেশি কেন্দ্রীয় বাহিনী আনুক কমিশন।’’

রাজ্যের মানুষের অভিজ্ঞতায় রয়েছে ২০২৩’র পঞ্চায়েত নির্বাচন। সেই নির্বাচন এক দফায় হয়েছিল। এবং সেখানে কিভাবে এবং কোন পর্যায় ভোট লুট ও গণনার ফলাফলে কারচুপি করা হয়েছে তা রাজ্যের মানুষ দেখেছেন। সেই আবহে তৃণমূলের এই দাবির অর্থ, রাজ্যের শাসক দল ২০২৪’র ভোটকেও প্রহসনে পরিণত করার আবদার করা। 

যদিও তৃণমূলের যুক্তি, একাধিক দফায় ভোট হলে নরেন্দ্র মোদী এবং অমিত শাহ বারবার বাংলায় আসবেন। তাতে ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ ব্যাহত হবে।

এদিন কংগ্রেসের তরফে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়েছিলেন আশুতোষ চ্যাটার্জি। প্রতিনিধি দলে ছিলেন শঙ্কর ঘোষ, বিশ্বজিৎ দে।  আশুতোষ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘২০১৯ সালের নির্বাচনে বহরমপুরে অধীর রঞ্জন চৌধুরীকে নিজের উদ্যোগে বহিরাগতদের তাড়া করতে হয়েছিল। কেন্দ্রীয় বাহিনী নিরব ভূমিকা পালন করে। এবারেও সেই ঘটনা আটকাতে বাড়তি উদ্যোগ নিক কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশন।’’

কংগ্রেসের অভিযোগ, দলের সম্ভাব্য প্রার্থীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগে মামলা দায়ের করছে পুলিশ। নির্বাচনের প্রচার চলাকালীন তদন্তের নামে প্রার্থীদের থানায় আটকে রাখার চেষ্টা চলছে এই ভাবে। 

কংগ্রেসও বলেছে, ‘‘কেন্দ্রীয় বাহিনীকে স্থানীয় থানার ভরসায় ছেড়ে দিলে হবে না। সেটা তৃণমূলের হাতে ছেড়ে দেওয়ার শামিল। তার বদলে বিরোধীদের থেকে তথ্য সংগ্রহ করে নিজেদের মত এরিয়া ডমিনেশন এবং দুষ্কীতি দমনের কাজ শুরু করুক কেন্দ্রীয় বাহিনী।’’

Comments :0

Login to leave a comment