কলকাতা কর্পোরেশনের বাজেট অধিবেশন চলাকালীন কর্পোরেশনের পাব্লিক অ্যাকাউন্টস কমিটির চেয়ারপার্সন মধুছন্দা দেবকে বর্ণবাদী কটূক্তি করেন তৃণমূল কাউন্সিলর অরিজিৎ দাস ঠাকুর। সেই ঘটনার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার ঢাকুরিয়ায় তীব্র বিক্ষোভ দেখালেন বামফ্রন্ট কর্মী সমর্থকরা।
প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার ছিল কর্পোরেশনের বাজেট অধিবেশনের শেষ দিন। বক্তব্য রাখতে গিয়ে কলকাতা শহরের অত্যধিক আলো লাগানোর ফলে ক্ষুব্ধ সাধারণ মানুষের কথা তুলে ধরেন ৯২ নম্বর ওয়ার্ডের বামফ্রন্ট কাউন্সিলর মধুছন্দা দেব।তিনি বলেন, অত্যধিক আলোর ফলে জনজীবন ব্যহত হচ্ছে। আলোক বিভাগে প্রয়োজনের তুলনায় বেশি অর্থ বরাদ্দ করা হচ্ছে। কিন্তু প্রয়োজনীয় বিভাগগুলি টাকা পাচ্ছে না।
মধুছন্দা দেবের বক্তব্যকে সমর্থন জানাতে দেখা যায় তৃণমূলের একাধিক কাউন্সিলরকে। এরপরেই ক্ষেপে ওঠে তৃণমূলের একটা বড় অংশ। পরের পর তৃণমূল কাউন্সিলর নিজেদের বক্তব্যে মধুছন্দা দেবের বলা নির্দিষ্ট ওই অংশের তীব্র বিরোধীতা করতে শুরু করেন।
সমস্ত শালীনতার সীমা ছাড়িয়ে ১০৬ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর অরিজিৎ দাস ঠাকুর বলেন, ‘‘কলকাতা শহরে এত বেশি আলো লাগানো হয়েছে, যে মধুছন্দা দেবকেও ফর্সা লাগছে।’’
তৃণমূলের এই ন্যাক্কারজনক বর্ণবাদী আক্রমণের প্রতিবাদে সরব হয় নাগরিক সমাজ। মহিলা আন্দোলনের তরফেও জানানো হয় তীব্র নিন্দা। ৯২ নম্বর ওয়ার্ড বামফ্রন্টের তরফে ডাক স্থানীয় জনপ্রিয় কাউন্সিলরের অপমানের প্রতিবাদে বিক্ষোভের ডাক দেওয়া হয়।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টার সময় ঢাকুরিয়া রামচন্দ্র হাইস্কুলের সামনে থেকে শুরু হয় বিক্ষোভ মিছিল। বাবু বাগান, মহারাজ ঠাকুর রোড সহ এলাকার বিস্তীর্ণ অঞ্চল ঘুরে মিছিল এসে পৌঁছয় ঢাকুরিয়া বাসস্ট্যান্ডের সামনে। ১৫ মিনিট ধরে প্রশস্ত রাস্তার সমস্ত লেন অবরোধ করে তৃণমূল কাউন্সিলরের বর্ণবিদ্বেষী আক্রমণের বিরুদ্ধে ঘৃণা উগড়ে দেন মানুষ। এই বিক্ষোভ কর্মসূচিতে বহু মহিলাকে অংশ নিতে দেখা গিয়েছে।
অবরোধের পরে লেক থানার সমানে গিয়ে পৌঁছয় মিছিল। থানায় স্মারকলিপি জমা দেওয়া হয়। সেখান থেকে ঢাকুরিয়া উড়ালপুলের নীচ দিয়ে গিয়ে ফের রামচন্দ্র স্কুলের সামনে এসে মিছিল শেষ হয়।
এদিনের বিক্ষোভ কর্মসূচির নেতৃত্ব দেন সিপিআই’র কলকাতা জেলা সম্পাদক প্রবীর দেব, মধুছন্দা দেব,সিপিআই(এম)’র কলকাতা জেলা সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য উৎপল দত্ত, ৯২ নম্বর ওয়ার্ড বামফ্রন্টের আহ্বায়ক অচ্যুৎ চক্রবর্তী, শুভ চক্রবর্তী, কলকাতা কর্পোরেশনের সিপিআই(এম) কাউন্সিলর নন্দিতা রায় প্রমুখ।
এদিন সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন প্রবীর দেব এবং অচ্যুৎ চক্রবর্তী। তাঁরা বলেন, কর্পোরেশনের অধিবেশনে বর্ণবিদ্বেষী মন্তব্যই নয়, সন্দেশখালির প্রতিবাদী মহিলাদের বিরুদ্ধে প্রতিদিন অশালীন, কুরুচিকর মন্তব্য করে চলেছেন শাসক দলের নেতা, নেত্রী, জনপ্রতিনিধিরা। এমনকি, মহিলাদের অভিযোগের প্রমাণস্বরূপ কোনও ভিডিও ফুটেজ আছে কি না, এই ধরনের মন্তব্যও করেছেন ৮১ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর যুঁই বিশ্বাস। এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ শামিল হতে সমস্ত অংশের মহিলাদের কাছে আবেদন জানিয়েছে বামফ্রন্ট।
Comments :0