সোমবার রাত থেকে মণিপুরে রয়েছেন অমিত শাহ। তিনি ঘোষণা করেছেন, গোষ্ঠী সংঘর্ষে প্রাণ হারানো প্রত্যেক ব্যক্তিকে ১০ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। একইসঙ্গে তিনি পরিবারের ১ সদস্যকে সরকারি চাকরির প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন।
কিন্তু এরই মাঝে রবিবার থেকে ফের অশান্তি শুরু হয়েছে মণিপুরে। নতুন করে শুরু হওয়া সংঘর্ষে মৃতের সংখ্যা ৮০ ছাড়িয়েছে। আহতের সংখ্যা ১০০ ছুঁইছুঁই। অভিযোগ, আহত এবং নিহতদের প্রায় প্রত্যেকেই কুকি জনজাতির সদস্য। বিভিন্ন সূত্রের থেকে পাওয়া খবর অনুযায়ী, চূড়াচন্দ্রপুর, ইম্ফল পূর্ব, ইম্ফল পশ্চিম, বিষ্ণুপুর, কাকচিং সহ ৫ জেলায় ১৩টি কুকি গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হয়।
যদিও মণিপুরের বিজেপি সরকারের দাবি, আহত এবং নিহতরা প্রত্যেকেই কুকি উগ্রপন্থী সংগঠনের সদস্য। চূড়াচন্দ্রপুর সহ একাধিক এলাকায় মেইতেই সম্প্রদায়ের উপর হামলা চালায় এই সংগঠনগুলির কর্মীরা। তার পাল্টা গুলি চালায় নিরাপত্তারক্ষী বাহিনী।
মণিপুরের বিজেপি মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিং জানান, নিহত উগ্রপন্থীদের কাছ থেকে একে-৪৭ এবং এম-১৬’র মতো স্বয়ংক্রিয় রাইফেল উদ্ধার হয়েছে।
যদিও বিজেপির এই দাবি উড়িয়ে দিয়েছে কুকিদের একাধিক সংগঠন। কুকি ছাত্র সংস্থা প্রেস বিবৃতি দিয়ে জানায়, শনিবার গভীর রাত থেকে কুকি নিধন অভিযান শুরু হয়েছে। কুকি গ্রামগুলি লক্ষ্য করে গণহত্যা চালানো হচ্ছে। কুকি নিবিড় এলাকাগুলিতে মণিপুর পুলিশ এবং আরামবাই টেঙল, মেইতেই লিপুনের মতো সশস্ত্র মেইতেই সংগঠনের কর্মীরা একযোগে হামলা চালাচ্ছে। এই গণহত্যাকে উগ্রপন্থা বিরোধী অভিযান বলে চালাতে চাইছেন বীরেন সিং।
কুকি ছাত্র সংস্থার দাবি, রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসে তাঁদের সংগঠনের যুগ্ম সম্পাদক জেকব টাউথাং খুন হয়েছেন।
এরফলে একের পর এক গ্রাম ছেড়ে নিরাপর আশ্রয়ের খোঁজে পালাচ্ছেন কুকি জনজাতির মানুষ। এই সংক্রান্ত একাধিক ভিডিও ইতিমধ্যেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। সেখানে দেখা গিয়েছে, মাইলের পর মাইল পাহাড়ি পথ হেঁটে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে চলেছে মানুষের স্রোত।
মিজোরাম সরকার জানিয়েছে রবিবার এবং সোমবার মিলিয়ে মিজোরামে আশ্রয় নিয়েছে ৮ হাজার ২০০ কুকি পরিবার।
সোমবার দিল্লিতে ধর্ণা দেন কয়েক হাজার কুকি মহিলা। তাঁরা বীরেন সিং সরকারকে বরখাস্ত করার দাবি জানান। কুকি সংগঠনগুলির অভিযোগ, বিজেপি সরকার কুকিদের রাজ্য ছাড়া করতে চাইছে। সেই জন্য কুকিদের অবৈধ অনুপ্রবেশকারী, আফিম চাষি, উগ্রপন্থী ইত্যাদি তকমা দিচ্ছে বিজেপি।
অপরদিকে মণিপুরে শান্তি ফেরানোর দাবিতে রাষ্ট্রপতিকে ডেপুটেশন দেয় কংগ্রেসের এক প্রতিনিধি দল। প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে। ডেপুটেশনে ১২ দফা দাবি তুলে ধরে কংগ্রেস।
মঙ্গলবার কংগ্রেসের প্রচার বিভাগের দায়িত্ব প্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক তথা প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জয়রাম রমেশ বলেন, মণিপুরে শেষ বার গোষ্ঠী সংঘর্ষ হয়েছিল ২২ বছর আগে। তখনও সে রাজ্যে বিজেপি সরকার ছিল। আরএসএস বিজেপির ‘ভাঙো এবং শাসন কর’ নীতির ফলেই অশান্তি থামানো যাচ্ছে না।
Comments :0