MD SALIM PRESS CONFERENCE

সঙ্ঘের স্ক্রিপ্টে বিজেপির সঙ্গে নাটক মুখ্যমন্ত্রীর

রাজ্য কলকাতা

CPIM west bengal panchayat election TMC BJP communal violence bengali news

রাজ্যে সাম্প্রদায়িক অশান্তি রুখতে কেন্দ্রীয় বাহিনী নামানোর আদালতের নির্দেশে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় রাজ্য সরকারের অপদার্থতা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন সিপিআই(এম)’র রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। 

বুধবার বিকালে সাংবাদিক বৈঠকে তিনি বলেছেন, ধর্মের নামে উন্মাদনাকে রাস্তায় নিয়ে এসেছে তৃণমূল এবং বিজেপি একসঙ্গে পরিকল্পনা করে। মুখ্যমন্ত্রী এখন বিজেপি’র সঙ্গে হাত মিলিয়ে তামাশা করছেন, মন্দির তৈরিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন, রাজ্যের প্রশাসন চালাতে পারছেন না। একমাস আগে থেকে সাম্প্রদায়িক অশান্তির খবর থাকা সত্ত্বেও মুখ্যমন্ত্রী কঠোর হাতে ব্যবস্থা নেননি কেন? এখন আরএসএস’এর তৈরি করা স্ক্রিপ্টে বিজেপি’র সঙ্গে নাটক করছেন মুখ্যমন্ত্রী।

আদালতের নির্দেশের থেকেও সাম্প্রদায়িক অশান্তি বন্ধে সরকারের রাজনৈতিক সদিচ্ছা যে অনেক বেশি জরুরি সেকথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে সেলিম বলেছেন, পশ্চিমবঙ্গের পুলিশ বাহিনী এত অযোগ্য? অপদার্থ? ৯-এর দশকে দাঙ্গা ঠেকাতে কেন্দ্রীয় সরকারের পুলিশ আধুনিকীকরণের টাকায় সব রাজ্যের পুলিশ বাহিনীতে দাঙ্গা দমনের বিশেষ গাড়ি ও সরঞ্জাম কেনা হয়, অ্যান্টি রায়ট স্কোয়াড, র্যাপিড অ্যাকশন ফোর্স ইত্যাদি তৈরি হয়। পশ্চিমবঙ্গে মানুষ যখন শান্তিপূর্ণ গণআন্দোলন করেছে মমতা ব্যানার্জির সরকার তাদের ওপরে এগুলো প্রয়োগ করেছে। হাওড়ায়, রিষড়ায় এগুলো যথাসময়ে ব্যবহার হয়নি কেন?


সেলিম আরও প্রশ্ন তুলেছেন, হাওড়ার পুলিশ কমিশনার বিশ্ব হিন্দু পরিষদকে চিঠি দিয়ে মিছিলে বাইক থাকবে না শর্ত দিয়েছিলেন, মিছিলের সময় ও রুট সব নির্দিষ্ট করেছিলেন। এর কোনোটাই প্রয়োগ করা হয়নি কেন? মুখ্যমন্ত্রী ধরনার তামাশা করলে সরকারের কোটি কোটি টাকা খরচে পূর্ত দপ্তরের ব্যারিকেড করা যায়, পুলিশ ঘিরে রাখে, আর উসকানিমূলক মিছিল আটকাতে পদক্ষেপ নেওয়া গেল না? অস্ত্র বন্দুক নিয়ে মিছিলকারীদের আটকানো গেল না? আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় কোনও নির্দেশ যথেষ্ট নয়, যদি তা প্রয়োগ না হয়। আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এরাজ্যে অপদার্থ প্রমাণিত হয়েছে, স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রীই এর জন্য দায়ী। পুলিশকে ব্যর্থ বলে মুখ্যমন্ত্রী ব্যর্থতার দায় এড়াতে পারেন না।

কিন্তু কেন্দ্রীয় বাহিনীকে নামানোয় তৃণমূল এবং মুখ্যমন্ত্রীও আপত্তি নেই বলে যা জানিয়েছে সেই সম্পর্কে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে সেলিম বলেছেন, তাহলে পঞ্চায়েত নির্বাচনেও কেন্দ্রীয় বাহিনী চাইবেন তো? যে অপদার্থ পুলিশ সাম্প্রদায়িক মিছিল আটকাতে পারে না, তারা পঞ্চায়েতে ভোট লুট আটকাবে? 


আইনশৃঙ্খলা নিয়ে রাজ্যপালের বার্তা সম্পর্কেও সেলিমের জবাব, আইনশৃঙ্খলা নিয়ে কোনও পর্যবেক্ষণ থাকলে রাজ্যপাল মুখ্যসচিব, স্বরাষ্ট্রসচিবকে ডেকে বলতে পারতেন, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রককে জানাতে পারতেন। তা না করে উনি প্রশাসন পরিচালনার যে দায়িত্ব নিচ্ছেন তাতে মমতা ব্যানার্জি আপত্তি করেছেন? কেন করেননি? মুখ্যমন্ত্রী হাতে খড়ি দিয়েছিলেন, এখন রাজ্যপাল বর্ণপরিচয় নিয়ে নেমে পড়েছেন। আবারও প্রমাণ হচ্ছে নবান্ন থেকে আর রাজ্য চালানো হচ্ছে না, দুর্নীতির সাজা থেকে ভাইপো ও পরিবারকে বাঁচাতে রাজ্যটাকে আরএসএস আর কেন্দ্রীয় এজেন্সিগুলির হাতে তুলে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রীই। 


রাজ্যে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে কেন্দ্র ও রাজ্যের শাসক দলের ভরসায় না থেকে এখনই মানুষকে একজোট হওয়ার আবেদন করেছেন মহম্মদ সেলিম। 

তিনি বলেছেন, কেন অশান্তি হচ্ছে? সারা দেশের সঙ্গে এরাজ্যের মানুষ কাজ, মজুরি, ফসলের দাম, শিক্ষা, স্বাস্থ্যের অধিকার চাইছে। আজ দিল্লির বুকে লক্ষ লক্ষ শ্রমিক কৃষক খেতমজুর কর্মচারী লাল ঝান্ডা নিয়ে সংসদ অভিযান করছেন। দিল্লির রামলীলা ময়দান থেকে যখন নতুন রামায়ন লেখা হচ্ছে তখন পশ্চিমবঙ্গে রাবনলীলা হচ্ছে কেন? রাবনের দশমুখের মতো আরএসএস’এর দশটা সংগঠন আছে, এরাজ্যের তৃণমূল তারই একটা, এগুলির মাধ্যমে সাম্প্রদায়িক অশান্তি বাঁধিয়ে সংগ্রামে থাকা মানুষকে ধর্মের নামে ভাগ করার চেষ্টা হচ্ছে। নবজাগরণের উত্তরাধিকার বাংলার বুকে এসব ছিল না। ব্রিটিশদের কায়দায় সাম্প্রদায়িক উন্মাদনা তৈরি করে মানুষকে ভাগ করাটা হিন্দুত্ববাদীদের রাজনৈতিক প্রকল্প, এর সঙ্গে ধর্মের কিছু নেই। কোনও ধর্মের উপাসনা উৎসবে অন্য ধর্মকে আঘাত হানার কথা বলা নেই। বিজেপি এবং তৃণমূল মিলিতভাবে এই প্রকল্পকে এরাজ্যে ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে। 

তিনি বলেন, এরাজ্যের মানুষ যখন দুষ্কৃতী ও দুর্নীতির তন্ত্র থেকে মুক্তি পেতে জোটবদ্ধ হচ্ছেন, লাল ঝান্ডা হাতে রাস্তায় নেমে তৃণমূল বিজেপি’র বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলছেন তখন তৃণমূল এবং বিজেপি একজোট হয়ে মানুষকে ভাগ করতে চাইছে। নইলে অস্ত্র হাতে ধর্মীয় উন্মাদনা ছড়ানো মিছিলে তৃণমূল এবং বিজেপি’র নেতাদের একসঙ্গে দেখা গেছে কেন? দুর্নীতি ও দুষ্কৃতীতন্ত্রের বিরুদ্ধে লড়াই থেকে মানুষের নজর ঘোরাতে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে এগুলি সংগঠিত করা হচ্ছে। তাই তিনটে ‘সি’এর বিরুদ্ধে মানুষকে একজোট করে লড়াই করতে হবে- করাপশন, ক্রিমিনালাইজেশন, কমিউনালাইজেশন। 


তৃণমূল সাংসদ অভিষেক ব্যানার্জি পঞ্চায়েত নির্বাচনে অবাধে যে কেউ মনোনয়ন দিতে পারবেন বলে যে আশ্বাস দিয়েছেন সেই সম্পর্কে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে সেলিম বলেছেন, উনি কে এসব বলার? রাজ্য নির্বাচন কমিশন এতটাই অপদার্থ হয়ে গেছে যে একজন পাচারকারী সুষ্ঠু নির্বাচন পরিচালনার কর্তৃপক্ষ হয়ে গেছেন? ওঁর নিজের সাংসদ এলাকা ডায়মন্ড হারবারে গতবার বিরোধীরা অবাধে মনোনয়ন দিতে পেরেছেন?


কেন্দ্রীয় প্রকল্পের টাকা আদায় নিয়ে তৃণমূলের দাবি সম্পর্কে সেলিম বলেছেন, বিজেপি এবং তৃণমূলের লোকদেখানো তরজা চুলোয় যাক, এরাজ্যের গরিব তাঁদের প্রাপ্য পাক। কেন্দ্রীয় প্রকল্পের টাকায় চুরি দুর্নীতি হয়ে থাকলে অডিট ধরে ধরে ব্যবস্থা নেয়নি কেন কেন্দ্র? রাজ্যের প্রাপ্য নিয়ে কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকার শ্বেতপত্র প্রকাশ করুক, দুই পক্ষই জানাক, ‘কত পেলেন, কত খেলেন’।
 

Comments :0

Login to leave a comment