কেন্দ্র ও রাজ্যের বঞ্চনা ক্রমাগতই বেড়ে চলেছে মিড ডে মিল কর্মীদের প্রতি। ন্যায্য মজুরি, ভাতা থেকে শুরু করে অন্যান্য সুযোগ সুবিধার কিছুই জুটছে না এ রাজ্যের মিড-ডে-মিল কর্মীদের। এর বিরুদ্ধে অচিরেই আরও শক্তিশালী বৃহত্তর আন্দোলনে যাবেন তাঁরা। শুক্রবার মিড ডে মিল কর্মী ঐক্য মঞ্চের কনভেনশনে একথাই সোচ্চারে জানিয়ে দিলেন মিড ডে মিল কর্মীরা।
সরকারি এবং সরকার পোষিত বিদ্যালয়ে শিক্ষার মানোন্নয়ন থেকে প্রতিষ্ঠানগুলির ছাত্র-ছাত্রীর পুষ্টি বিধান, তাদের সার্বিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থা, তাদের জন্য বরাদ্দ পোশাকের জোগান— সব ক্ষেত্রেই রাজ্য এবং কেন্দ্রের সরকারের অনীহা। তারা চায় বিদ্যালয় শিক্ষার দায়িত্ব থেকে সরে যেতে এবং শিক্ষাক্ষেত্রে বেসরকারি সংস্থার আমদানি করতে। এরই জেরে মিড ডে মিল কর্মীদের ওপর নেমে আসছে নানা দিক থেকে বঞ্চনার খাঁড়া।
বিদ্যালয়গুলিতে ‘মিড ডে মিল’ প্রকল্পের রন্ধনকর্মীদের সরকার দাস-দাসীর মতো মনে করে বলে বক্তব্য কর্মীদের। বছরের পর বছর তাঁদের প্রাপ্য মজুরি থেকে তাই বঞ্চিত করা হচ্ছে। এইসব রন্ধনকর্মীদের ও ছাত্র-ছাত্রীদের প্রতি রাজ্য ও কেন্দ্রের সরকারের চরম বঞ্চনার বিরুদ্ধে পূর্ব ঘোষণামাফিক শুক্রবার কলকাতায় ইউনিভার্সিটি ইনস্টিটিউট হলে মিড ডে মিল কর্মী ঐক্য মঞ্চের উদ্যোগে রাজ্য স্তরে কনভেনশনে যোগ দেন তাঁরা।
কানায় কানায় পূর্ণ কনভেনশন হলে এদিন যে দাবিগুলি ফের সোচ্চারে উচ্চারিত হয় তা হলো; রন্ধনকর্মীদের ২৬ হাজার টাকা মাসিক মজুরি অবিলম্বে লাগু করতে হবে। যতোদিন না তা চালু হচ্ছে ততোদিন রাজ্য সরকারের নির্ধারিত ন্যূনতম মজুরি দিতে হবে। ১০ মাসের বদলে ১২ মাসের মজুরি চাই। বিদ্যালয় ছাত্র-ছাত্রীদের পুষ্টিকর রান্না খাবারের বরাদ্দ বাড়িয়ে তা সুনিশ্চিত করতে হবে।
দাবি, রন্ধনকর্মীদের সরকারি কর্মীর স্বীকৃতি ও পরিচয়পত্র দিতে হবে। ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে রন্ধনকর্মীদের ভাতা দিতে হবে। চাই উৎসবকালীন ভাতা ও সরকারি বিধিবদ্ধ ছুটি, মৃত্যুকালীন ক্ষতিপূরণ, পোশাকের খরচ। মিড ডে মিল প্রকল্পের বেসরকারিকরণ করা চলবে না। পুষ্টিকর ও সুষম খাদ্য দিতে হবে ছাত্র-ছাত্রীদের। পশ্চিমবঙ্গ মিড ডে মিল কর্মী ইউনিয়ন, পশ্চিমবঙ্গ সংগ্রামী রন্ধনকর্মী ইউনিয়ন, সারা বাংলা মিড ডে মিল কর্মী ইউনিয়ন, অ্যাসোসিয়েশন অফ মিড ডে মিল অ্যাসিস্ট্যান্টস এবং পশ্চিমবঙ্গ স্বরোজগারি ও রাঁধুনি ইউনিয়ন— এই পাঁচটি সংগঠনের মিড ডে মিল কর্মী ঐক্য মঞ্চ, পশ্চিমবঙ্গ আগামীদিনে আরও বৃহৎ আন্দোলনে নামবে বলে জানিয়ে দিয়েছে।
কর্মীদের দাবি আদায়ের সংগ্রামকে আরও তীব্র করতে এবং ‘ইনসাফ’ দাবি করতে এদিন কনভেনশনে বক্তব্য রাখেন মিড ডে মিল কর্মী ঐক্য মঞ্চের পক্ষে সিআইটিইউ নেত্রী তথা কর্মী ইউনিয়নের পক্ষে মধুমিতা ব্যানার্জি, এআইইউটিইউসি নেত্রী সুনন্দা পন্ডা, এআইসিসিটিইউ’র নেত্রী জয়শ্রী দাশ, এসএমএস নেত্রী নমিতা হালদার, মিড ডে মিল অ্যাসিস্ট্যান্টস (আম্মা)–র পক্ষে ধীমান বসাক প্রমুখ।
এদিন মধুমিতা ব্যানার্জি জানান, কেন্দ্র ও রাজ্যের দেয় মজুরি মিলিয়ে সাকুল্যে মাত্র ১৫০০ টাকা পান এ রাজ্যের মিড ডে মিল কর্মীরা, এর মধ্যে কেন্দ্র দেয় ৬০০ টাকা। যেখানে হরিয়ানায় সব মিলিয়ে তাঁরা পান ৭ হাজার টাকা। কেরালায় এই ভাতা দৈনিক ৬০০ টাকা অর্থাৎ ১৮ হাজার টাকা মাসে, সেখানে উৎসব ভাতা সহ অন্যান্য সুযোগ সুবিধাও আছে বেশ কিছু। পুদুচেরিতে এই ভাতা ১২ হাজার টাকা। হিমাচল এবং কর্ণাটকে ৪ হাজার করে। সুতরাং এটা পরিস্কার যে এ রাজ্যে কী ভীষণভাবে বঞ্চিত হচ্ছেন মিড ডে মিল কর্মীরা। এর জবাব চাই সরকারের কাছে। অবিলম্বে মজুরি বাড়াতে হবে মিড ডে মিল কর্মীদের।
১২ মাসের বদলে ১০ মাসের মজুরি পান মিড ডে মিল কর্মীরা। এর ওপর কেন্দ্রীয় সরকার এই প্রকল্পের বাজেটে প্রায় ১২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ কমিয়ে দিয়েছে। প্রথম শ্রেণি থেকে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত মাথাপিছু মাত্র ৫ টাকা ৪৭ পয়সা এবং পঞ্চম শ্রেণি থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত মাথাপিছু মাত্র ৮ টাকা ১৪ পয়সা ধার্য রয়েছে মিড ডে মিলের জন্য। অথচ অন্যান্য রাজ্যে এর পরিমাণ অনেকটাই বেশি। মধুমিতা ব্যানার্জি বলেন, এই টাকায় কিভাবে পুষ্টিকর খাবার দেওয়া সম্ভব তার জবাব দিতে হবে দুই সরকারকেই। এর ওপর রয়েছে যখন তখন ছাঁটাইয়ের কোপ। শাসক দলের কথা মতো কাজ না করলে বসিয়ে দেওয়া হচ্ছে মিড ডে মিল কর্মীদের— এই নজির রয়েছে কলকাতাতেই।
মিড ডে মিল কর্মী ঐক্য মঞ্চের বক্তব্য, এরাজ্যে এখন মিড ডে মিল প্রকল্পে ২ লক্ষ ৩৩ হাজার রন্ধনকর্মী পদ থাকলেও প্রতিটি সেন্টারে প্রতি পদের জন্য এক বা একাধিক স্ব-নির্ভর গোষ্ঠী কাজ করার জন্য ৮ লক্ষাধিক রন্ধনকর্মী কাজ করছেন অত্যন্ত স্বল্প মজুরিতে। এই প্রকল্পে রয়েছে কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকারের দায়ভার। মঞ্চের পক্ষ থেকে এদিন কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারকে দাবি দাওয়া সংবলিত চিঠি দেওয়া হয়েছে। নেত্রীবৃন্দের বক্তব্য, ১৫ দিনের মধ্যে সুরাহা না হলে এরপর বৃহত্তর ও শক্তিশালী আন্দোলনে শামিল হবেন মিড ডে মিল কর্মীরা।
Comments :0