RG Kar Student Death

''আমাদের মেয়ে চলে গেল, আমরা বিচার চাইব না?’’
মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্যে ক্ষোভ পরিবারের

রাজ্য

RG KAR STUDENT DEATH BENGALI NEWS

মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্যে আহত হয়েছে  নির্যাতিতার পরিবার। বৃহস্পতিবার সংবাদমাধ্যমের প্রশ্নে ক্ষোভ গোপন করেননি নিহত চিকিৎসকের বাবা-মা। তাঁরা বলেছেন, ‘‘আমাদের মেয়ে চলে গেল আর আমরা বিচার চাইব না?’’

মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় বৃহস্পতিবার এই ভাষাতেই খেদ জানিয়েছেন আর জি কর হাসপাতালে নিহত চিকিৎসকের মা। বুধবার তৃণমূল ছাত্র পরিষদের কর্মসূচিতে মুখ্যমন্ত্রী বিচারে বিলম্বের জন্য দায়ী করেন পরিবার এবং আন্দোলনকারীদের। তিনি বলেছিলেন, ‘‘পাঁচদিন সময় চাওয়া হয়েছিল। পুলিশ কমিশনার নিজে দেখা করেছিলেন। ওরা সিবিআই চাইল।’’

পরিবার বলেছে, ‘‘পুলিশের ওপর ভরসা থাকছিল না। আমরা গিয়েছিলোম হাইকোর্টে। হাইকোর্ট সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে। আমাদের মেয়ে আমরা বিচার চাইব না? আন্দোলনকারীরা বিচার চাইছে না এমন কথাও সমর্থন করেনি পরিবার।’’

বাস্তবে পুলিশের তদন্তে অনাস্থা জানিয়েছে হাইকোর্ট এবং তারপর সুপ্রিম কোর্টও। ঘটনাস্থল, অর্থাৎ আরজি কর হাসপাতালের সেমিনার রুমে ঢুকতে না দিয়ে পরিবারকে তিন ঘন্টা বসিয়ে রাখা হয়েছিল কেন? ময়না তদন্তের পরও থানায় ডায়েরি এবং এফআইআর করতে দেরি করা হয়েছিল কেন? সুপ্রিম কোর্টের এমন একের পর এক প্রশ্নে কোনও জবাব ছিল না রাজ্যের আইনজীবীর কাছে। 

বৃহস্পতিবার সোশ্যাল মিডিয়া এবং সংবাদ মাধ্যমে ছড়িয়েছে হাসপাতালের অ্যাসিস্ট্যান্ট সুপারের সঙ্গে নিহত চিকিৎসকের মায়ের কথোপকথন বলে চর্চিত একটি অডিও ক্লিপ। নিহতের  পরিবার যদিও  জানায় কিভাবে সেই ক্লিপ ছড়ালো তাঁরা জানেন না। তবে অ্যাসিস্ট্যান্ট সুপার যে প্রথম আত্মহত্যা বলেছিল, এই বিষয়টি তাঁরা জানিয়েছিলেন ৯ আগস্টের কিছু পরই। 

হাসপাতালের অ্যাসিস্ট্যান্ট সুপার এর সাথে পরিবারের মধ্যে ফোনের কথোপকথন ভাইরাল হওয়া নিয়ে নির্যাতিতার বাবা বৃহস্পতিবার জানিয়েছেন, ‘‘কোথা থেকে কিভাবে ভাইরাল হয়েছে আমরা জানিনা। আমরা এর দায় নেব না।’’

ফোনের কণ্ঠস্বর তারই কিনা সে ব্যাপারে নির্যাতিতার বাবা জানান ‘‘আপনারা বলছেন বটে, তবে আমি শুনে দেখিনি।’’ এ বিষয়টি তদন্তে কোন প্রভাব ফেলবে না বলেও জানান তিনি। বৃহস্পতিবার দুপুরে সংবাদ মাধ্যমের কর্মীদের সামনে এই মন্তব্য করেন নির্যাতিতার বাবা-মা। 

সিবিআর তদন্তভার নেওয়ার পর প্রায় দুই সপ্তাহ সময় কেটে গেলেও এখনো উল্লেখযোগ্য কোনো অগ্রগতি আসেনি।  স্বাভাবিকভাবে হতাশ নির্যাতিতার বাবা-মা এদিন জানিয়েছেন,  উপায় না থাকায় সিবিআই এর উপরেই আপাতত ভরসা রাখছেন তাঁরা। 

পরিবারের তরফে এদিন ক্ষোভের সুরে বলা হয়েছে, ‘‘গতকাল মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন আমরা নাকি কেসটাতে জল ঢেলে দিচ্ছি। ঘুরিয়ে ‘ওরা’ বলতে আমাদেরকেই বোঝাতে চেয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। উনি হয়তো সিবিআই’কে পছন্দ করেন না, বা অন্য যে কারণে উনি বলেছেন সেটা ওনার ব্যাপার। কিন্তু আমরা চাইছি আমরা যাতে বিচার পাই এবং কোটি কোটি মানুষ যারা আন্দোলন করছে তাদের পাশেই আমরা রয়েছি। উনিই কিন্তু প্রথম থেকে বলেছিলেন সিবিআই দিয়ে তদন্ত করানোর কথা, সুতরাং উনি এখন কি বলতে চাইছেন বুঝতে পারছি না।’’

গতকাল কলকাতার মঞ্চ থেকে মুখ্যমন্ত্রীর করা ‘‘ওরা বিচার চায় না’’ মন্তব্যের প্রেক্ষিতে নির্যাতিতার মা বলেন,  ‘‘উনি (মমতা) যেটা গতকাল বলেছেন সেটায় কষ্ট লেগেছে। গোটা বিশ্ব আমার মেয়ের পাশে দাঁড়িয়েছে। তারা প্রতিবাদ করছে, ন্যায় বিচারের দাবিতে আন্দোলন করছে, আর আমরা বিচার চাইবো না আমরা চাইছি যতদিন না ন্যায় বিচার মিলছে, তারা যেন আন্দোলন চালিয়ে যান। সেখানে মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন পরিবার বিচার চায় না!’’

তিনি আরও বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আমাদের একটাই দাবি ছিল যে আমরা যেন বিচার পাই, কিন্তু পুলিশের কর্মকাণ্ড থেকে আমরা ভরসা রাখতে পারিনি, যেই কারণে আমরা সিবিআই দাবি করেছিলাম।’’

প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার আন্দোলনরত ডাক্তারি পড়ুয়াদের ঘুরিয়ে হুমকি দিয়েছিলেন মমতা ব্যানার্জি। তার বক্তব্য ছিল, ‘‘আমরা চাইছি না ওদের কেরিয়্যার খারাপ করে দিতে। একটা এফআইআর হয়ে গেলে ভিসা, পাসপোর্ট পেতে সমস্যা হবে।’’ 

এই মন্তব্যের পরে তুমুল চাপের মুখে পড়েন মমতা ব্যানার্জি। বৃহস্পতিবার ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে তিনি বলেছেন, ‘‘আমি আন্দোলনের পক্ষে। আমার মন্তব্যের ভুল ব্যাখ্যা হয়েছে।’’

পরিবারের সঙ্গে দেখা করে আক্রান্ত আমরার প্রতিনিধিদলও। ছিলেন অম্বিকেশ মহাপাত্র এবং এই মঞ্চের প্রতিনিধিরা। তাঁরাও মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য নিয়ে প্রশ্ন করেন। বলেন যে বরুণ বিশ্বাসের হত্যা, কাকদ্বীপ, ধুপগুড়িতে ধর্ষণের মতো বহু ঘটনার তদন্ত তো রাজ্য পুলিশই করেছে। সেগুলিতে শাস্তি হয়নি কেন

অম্বিকেশ জানান, ‘‘আমাদের রাজ্যে দুষ্কৃতী, শাসক দল এবং পুলিশ মিলে দুর্নীতি ও দুষ্কৃতীতন্ত্রকে প্রশ্রয় দিচ্ছে। এবং গোটাটা পরিচালনা করছেন  মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি, যিনি একদিকে স্বাস্থ্যমন্ত্রী আবার অপরদিকে পুলিশমন্ত্রী। মুখ্যমন্ত্রী প্রমাণ লোপাটের জন্য যত রকম কৌশল আছে তার সবকটি কৌশল ব্যবহার করতে শুরু করেছেন।’’

Comments :0

Login to leave a comment