Sujan Chakraborty

জেল-খাটা আর জেলবন্দিকে দিয়ে বিভ্রান্তি তৈরির চেষ্টা

রাজ্য

বেলাগাম দুর্নীতির পাহাড়ের মাথায় বসে এখন জনগণের তীব্র বিক্ষোভে ভয় পেয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে তৃণমূল। বৃহস্পতিবার সিপিআই(এম) নেতাদের দুর্নীতি যোগ নিয়ে তৃণমূলের অভিযোগ সম্পর্কে এই মন্তব্য করেছেন বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু। সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেছেন, পাহাড়প্রমাণ দুর্নীতি আর ধামাচাপা দিতে পারছে না, এখন মানুষের নজর ঘোরাতে নানা বিভ্রান্তিকর কথাবার্তা বলছে। মুখ্যমন্ত্রীর নিজের দলের চুরি দুর্নীতি ঢাকার ও দুর্নীতিগ্রস্ত নেতা, মন্ত্রীদের বাঁচানোর কৌশল এটা। 
   যখনই একটা করে দুর্নীতি ফাঁস হয় মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি একবার করে বামফ্রন্ট আমলের ফাইল খোলার হুমকি দেন। এখন শিক্ষক নিয়োগ থেকে পৌরসভায় নিয়োগ, সর্বক্ষেত্রে দুর্নীতিতে তৃণমূল যোগ প্রকাশ হতে থাকায় নাজেহাল তৃণমূল ফের বাম আমলে ফিরে গেছে। বৃহস্পতিবারই প্রথমে তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বামফ্রন্ট আমলে নিয়োগ দুর্নীতির অভিযোগ করে সিপিআই(এম) নেতা সুজন চক্রবর্তীর স্ত্রী মিলি চক্রবর্তীর একটি কলেজে নিয়োগ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। এর আগে চিট ফান্ড দুর্নীতিতে জেল বন্দি সুদীপ্ত সেনকে দিয়ে লেখানো চিঠি দেখিয়ে তৃণমূল অভিযোগ করেছিল, বিমান বসু, সুজন চক্রবর্তী, অধীর চৌধুরিরা চিট ফান্ডের সুবিধাভোগী। এবার আরেক জেলবন্দি পার্থ চ্যাটার্জিকে দিয়েও প্রায় একইরকম কাজ করানো হলো। 
   ১৯৮৭ সালে দীনবন্ধু অ্যান্ড্রুজ কলেজে গ্রুপ সি পদে চাকরিতে যোগ দিয়েছিলেন মিলি ভট্টাচার্য (চক্রবর্তী)। এই পদে থেকেই কর্মজীবন শেষ করে তিনি বর্তমানে অবসর নিয়েছেন। ৩৬ বছর আগে সেই কাজে যোগদানের দিনে মিলি চক্রবর্তী অধ্যক্ষকে যে জয়েনিং রিপোর্ট করেছিলেন, তার কপি বের করে তৃণমূলের পক্ষ থেকে তাঁর নিয়োগ নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। বিস্ময়করভাবে এদিনই কোর্ট লকআপে তোলার সময় ৮ মাস ধরে জেলে থাকা প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চ্যাটার্জিও বলেছেন, ‘সুজন চক্রবর্তী, দিলীপবাবু, শুভেন্দুবাবুরা বড় বড় কথা বলছেন, তাঁরা নিজের দিকে দেখুন। ২০০৯-১০ সালের সিএজি রিপোর্ট পড়ুন। সমস্ত জায়গায় তদ্বির করেছে, কোনও রকম সাহায্য তো দূরের কথা, আমি বলে দিয়েছিলাম এব্যাপারে কোনও বেআইনি কাজ করতে পারব না।’
    এই প্রসঙ্গেই এদিন সাংবাদিকরা বিমান বসুকে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, গোপনে আরএসএস-বিজেপি’র সঙ্গে সখ্য রেখে চলা তৃণমূল এখন বামফ্রন্ট সরকারের আমলের দুর্নীতির ভুয়ো বুলি আউড়ে মানুষের নজর ঘোরানোর চেষ্টা চালাচ্ছেন। তৃণমূল ১২ বছর ধরে সরকারে রয়েছে। বামফ্রন্ট সরকারের সময়ে একাধিক বিষয়ে তদন্তের জন্য মুখ্যমন্ত্রী কমিশনও তৈরি করেছিলেন। আজও কোনও অভিযোগের সত্যতা প্রমাণ করতে পারেননি কেন? মুখ্যমন্ত্রী ক্ষমতায় এসেই ২১জুলাই নিয়ে তদন্ত কমিশন তৈরি করেছিলেন, আমাকেও সেই তদন্ত কমিশনে হাজির হতে হয়েছিল। কিন্তু আজও সেই তদন্তের কী সুরাহা হলো? আসলে নিজেরা দুর্নীতিতে ফেঁসে আছে বলে একটা ধোঁয়াশার মতো তৈরি করে রাখা হচ্ছে। বাজার গরম করে মানুষের নজর ঘুরিয়ে দেওয়ার কৌশল। অপরাধীদের আড়াল করতে তৃণমূল এর-ওর ঘাড়ে ভুয়ো দোষারোপ করার যে কৌশল নিয়ে চলছে তাতে অপরাধীরা আরও উৎসাহিত হবে। রাজ্যজুড়ে তৃণমূল চুরি, দুর্নীতি, লুট, দাঙ্গা হাঙ্গামার মধ্য দিয়ে যে অপসংস্কৃতি কায়েম করেছে, সেটা রাজ্যের পক্ষে ভালো নয়। এই অপসংস্কৃতি ভেঙে রাজ্যের মানুষকে মুক্ত করার লক্ষ্যে বামপন্থীরা লড়ছেন। মিথ্যা অপবাদ দিয়ে এই লড়াইকে দুর্বল করা যাবে না। 
   এদিন সাংবাদিকরা তাঁর নামে উত্থাপিত তৃণমূলী অভিযোগ সম্পর্কে প্রশ্ন করলে সুজন চক্রবর্তী বলেছেন, পার্থ চ্যাটার্জির কথা শুনে ঘোড়ায় হাসছে, এসব কথার উত্তর দেবো না। তৃণমূলের হাল এত খারাপ যে এখন জেলে থাকা পার্থ চ্যাটার্জিকে দিয়ে অভিযোগ করাতে হচ্ছে! প্রথমে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য সম্পর্কে অসত্য রটিয়েছিল। তারপরে সূর্য মিশ্র সম্পর্কে, গৌতম দেব সম্পর্কে। জেলে থাকা চিট ফান্ড মালিককে দিয়ে বিমান বসু সহ আমাদের নাম লিখিয়েছিল। কিন্তু সবেতেই ওরা ফেল! ওদের রন্ধ্রে রন্ধ্রে মিথ্যা কথা। গুরুত্বই দিচ্ছি না ওদের কথার। আমার স্ত্রীর জয়েনিং লেটার দেখিয়ে অস্বচ্ছতা কী দেখাচ্ছে? এটা তো চাকরির সুপারিশপত্র নয়, এতে অসঙ্গতিটা কী আছে? ১৯৮৭ সালের জয়েনিং লেটার অবিকৃতভাবে তৃণমূল পেয়েছে, মানে বোঝা যাচ্ছে বামফ্রন্ট সরকারের আমলের সব নথি আছে, এটাকেই তো স্বচ্ছতা বলে। 
  ২০০৯-১০ সালের সিএজি রিপোর্টের উল্লেখ করেছেন পার্থ চ্যাটার্জি। এই প্রসঙ্গে সুজন চক্রবর্তী বলেছেন, ঐ সময়কালের সিএজি রিপোর্ট বিধানসভায় পেশ করার দায়িত্ব তো এরপরে আসা তৃণমূল সরকারের, তারা করেনি কেন? দুর্নীতি হয়েছে কিনা দেখার দায়িত্ব কাদের ছিল? 
 

Comments :0

Login to leave a comment