ভোট গ্রহণ প্রক্রিয়া শেষে ফলাফলের অপেক্ষা করছে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশ ইন্দোনেশিয়া। রাষ্ট্রপতি পদ সহ সরকারের বিভিন্ন স্তরের ২০,৬০০ আসনে ভোট গ্রহণ হয় মঙ্গলবার। নির্বাচনে অংশ নেন আড়াই লক্ষের বেশি প্রার্থী।
যদিও আন্তর্জাতিক মহল সহ সমস্ত অংশের নজর ইন্দোনেশিয়ার পঞ্চাম রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ফলাফলের দিকে। ১৯৯৮ সালে স্বৈরতান্ত্রিক শাসন থেকে মুক্ত হয় ইন্দোনেশিয়া। তারপর থেকে গণতান্ত্রিক ভাবেই রাষ্ট্রপ্রধান নির্বাচিত হচ্ছে এশিয়ার এই দেশটিতে।
প্রাথমিক পূর্বাভাষ অনুযায়ী, রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে এগিয়ে রয়েছেন সেদেশের সামরিক বাহিনীর প্রাক্তন অফিসার প্রাবোয়ো সুবিয়ানতো। সেদেশের রাজনীতিতে তিনি অত্যন্ত বিতর্কিত চরিত্র। ইন্দোনেশিয়ার প্রাক্তন স্বৈরতান্ত্রিক রাষ্ট্রপতি সুহার্তোর আমলে সেনার বিশেষ বাহিনী বা কোপাস্সুসের কমান্ডার ছিলেন সুবিয়ানতো। সেই সময় তাঁর বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বহু অভিযোগ উঠেছিল।
১৯৯৮ সালে ইন্দোনেশিয়ায় গণতন্ত্র ফেরার পরে সুবিয়ানতো’র বিরুদ্ধে তদন্ত হয়। সুহার্তো জমানায় রাষ্ট্রপতির বিরোধিতা করা ব্যক্তিদের অপহরণ এবং তাঁদের উপর অত্যাচার চালানোর ঘটনায় দোষী সাব্যস্ত হন সুবিয়ানতো। এরপর তাঁর মর্যাদা কেড়ে নিয়ে বিতাড়িত করা হয় সেনাবাহিনী থেকে।
যদিও নিজের সেই ভাবমূর্তি পালটে ফেলার জন্য চেষ্টায় কোনও খামতি রাখেননি সুবিয়ানতো। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, টিকটক ইত্যাদি ব্যবহার করে নতুন প্রজন্মের মধ্যে জনপ্রিয়তা অর্জন করেন তিনি। অতীতের বিতর্ককে ধামাচাপা দিতে সুবিয়ানতো প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, রাষ্ট্রপতি পদে জিতলে তিনি ২ কোটি কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করবেন।
২৭ কোটির জনসংখ্যার দেশে ২ কোটি চাকরির দাবি ঘিরে যদিও সংশয় তৈরি হয়েছে রাজনৈতিক মহলে।
সুবিয়ানতো’র পাশাপাশি রাষ্ট্রপতি হওয়ার দৌড়ে রয়েছেন ইন্দোনেশিয়ার রাজনীতির পরিচিত মুখ গাঞ্জার প্রাণোবো এবং আনেইস বাসওয়েদান।
ইন্দোনেশিয়ার নির্বাচনে ২০ কোটির বেশি মানুষ ভোট দিয়েছেন। ভারত এবং প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ঠিক মাঝামাঝি জায়গায় ইন্দোনেশিয়ার অবস্থান। বর্তমানে চীন এবং আমেরিকার দ্বৈরথের মাঝে স্বাভাবিক ভাবে ভৌগলিক অবস্থানের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে ইন্দোনেশিয়ার ভূমিকা। ইন্দোনেশিয়ার আগামী রাষ্ট্রপতি কূটনৈতিক স্তরে চীন কিংবা আমেরিকার দিকে থাকবেন, নাকি তিনি নিরপেক্ষ অবস্থান নেবেন, সেদিকে তাকিয়ে গোটা বিশ্ব।
প্রসঙ্গত, ইন্দোনেশিয়ার সদ্য প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি উইডোডো ওয়াশিংটন কিংবা বেজিং, কোনও পক্ষের দিকেই ঢলে পড়েননি। কিন্তু তারপরেও ইন্দোনেশিয়ায় বিপুল বিনিয়োগ করে চীন। তারমধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হল ৭.৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যে হাইস্পিড রেল সংযোগ। এছাড়া সামরিক স্তরেও চীনের সঙ্গে সখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে জাকার্তার। অপরদিকে আমেরিকার সঙ্গেও একাধিক সামরিক মহড়া করেছে ইন্দোনেশিয়ার সেনাবাহিনী।
Comments :0