WEST BENGAL KISAN MANDI

মান্ডির ‘ড্রিম’ ভুলেছেন মমতা, চাষে পিছোচ্ছে রাজ্য

রাজ্য

kisan mandi west bengal agriculture mamata banerjee  bengali news

মমতা ব্যানার্জির ‘ড্রিম প্রজেক্ট’ ছিল কিষান মান্ডি বা কৃষক বাজার। প্রতিশ্রুতি ছিল তাঁর — কৃষক বাজারে সবজি, ফসল, মাছ সংরক্ষণের ব্যবস্থা থাকবে। পশ্চিমবঙ্গে ১৮৬টি কৃষক বাজার বানানো হয়েছে। নীল সাদা রং হয়েছে। খরচ হয়েছে সরকারি হিসাবে ১১৭১ কোটি ২০লক্ষ টাকা।

এখন সেই ‘ড্রিম প্রজেক্ট’-র কথা ঘুণাক্ষরেও উচ্চারণ করেন না মুখ্যমন্ত্রী। ভুলিয়েই দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে কৃষক বাজার প্রকল্পকে। 
কেন?


সেই প্রসঙ্গে নিয়ে যাবে রাজ্যের কৃষি উৎপাদন সংক্রান্ত চলতি মাসে প্রকাশিত রিপোর্ট। আখ, লঙ্কা, তরমুজ, মাছ। সেই সূত্রেই উত্তরপ্রদেশের ‘সুগার লবি’ এবং পশ্চিমবঙ্গের বাজারে চিনির দামের প্রসঙ্গও হাজির হয়েছে পর্যালোচনায়। 

রাজ্যে আখ চাষের স্বার্থে, চিনির উৎপাদন বাড়াতে কোনও ভূমিকা তৃণমূল সরকার নেয়নি। রাজ্যগুলির দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে কেন্দ্রীয় পরিসংখ্যান এবং প্রকল্প বাস্তবায়ন মন্ত্রকের রিপোর্ট জানাচ্ছে, ২০১২-তে রাজ্যে আখ উৎপাদন হত ২৭৭১লক্ষ টাকার। তা ২০২১-এ পৌঁছেছে ১৫৯৮ লক্ষ টাকায়। এই সময়ে উত্তর প্রদেশ, বিহার, পাঞ্জাব তো বটেই, দেশের সিংহভাগ রাজ্যে আখের উৎপাদন বেড়েছে।
আখ একটি উদাহরণ। চিনি এসেছে তার পিছনে— একই প্রবণতা নিয়ে।


উত্তর প্রদেশে চিনি উৎপাদন বেড়েছে। আর এই সময়েই রাজ্যে চিনি উৎপাদন কমে গেছে। ফসল, সবজি, মাছ, চিনি, গুড় উৎপাদন সংক্রান্ত দশ বছরের পর্যালোচনা রিপোর্টে এমন উল্লেখযোগ্য তথ্য দেখতে পাচ্ছেন রাজ্যের কৃষি দপ্তরের আধিকারিকরা।
মমতা ব্যানার্জির শাসনে উত্তর প্রদেশের চিনির বাজার হয়ে উঠছে পশ্চিমবঙ্গ। 

২০১১-১২তে রাজ্যে চিনি উৎপাদিত হয়েছিল ৫৩৪ কোটি ০২লক্ষ টাকার। ২০২১-এ তা পৌঁছেছে ৪৫৩ কোটি ৪৬লক্ষ টাকায়। কমেছে প্রায় ৮ কোটি ৫৬ লক্ষ টাকার উৎপাদন। রাজ্যের বাজারে চিনির দাম গত দশ বছরে লাগাতার বেড়েছে। ভিন রাজ্য থেকেই মূলত চিনি আসে রাজ্যে। মূলত উত্তর প্রদেশ থেকে চিনি আসে। কিছু আসে বিহার থেকেও। এই দশ বছরে উত্তর প্রদেশে চিনি উৎপাদন বেড়েছে প্রায় ১২০৬০ কোটি ৪১ লক্ষ টাকার। বিহারেও বেড়েছে কিছুটা। পশ্চিমবঙ্গের চিনির চাহিদা মেটাচ্ছে এই দুই রাজ্য। 

লঙ্কার কী হাল? বামফ্রন্ট সরকারের সময়কালে সাগরদ্বীপ, কাকদ্বীপের মত কিছু এলাকায় লঙ্কার প্রভূত চাষ বেড়েছিল। এখন কী অবস্থা? ২০১২-তে রাজ্যে ৮৬৪ কোটি ০১লক্ষ টাকার লঙ্কা উৎপাদিত হয়েছিল। ২০২১-এ? তা নেমে এসেছে ৭০কোটি ১৭লক্ষ টাকায়!
বেগুন, ফুলকপির মত সবজির ক্ষেত্রেও এই দশ বছরে রাজ্যে উন্নতি হয়নি।


একই হাল তরমুজের। উৎপাদিত ফসলের দাম বাড়েনি। ছিল ৩৮৬ কোটি ৬২লক্ষ টাকার। পৌঁছেছে ৩৫৫ কোটি ৯৯লক্ষ টাকায়। মূলত এই ধরনের ফসল সংরক্ষণের উপযুক্ত ব্যবস্থা করার উপর কৃষকের লাভ নির্ভর করে। মমতা ব্যানার্জি কথা দিয়েছিলেন যে, তিনি তার ব্যবস্থা করবেন। তৈরি করেছে ১৮৬টি কৃষক বাজার। কিন্তু সেগুলি কোনও কাজে লাগেনি। 

স্বভাবতই খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্পের যে সম্ভাবনা বামফ্রন্ট সরকারের সময়কালে উজ্জ্বল হয়েছিল তা হোঁচট খেয়ে পড়েছে পশ্চিমবঙ্গে।

ধান চাষ কৃষকের স্বাভাবিক প্রবণতা। কিন্তু তার দাম নেই। এই পরিস্থিতিতে পরিবেশ অনুসারে কৃষককে অন্য অর্থকরি কিংবা লাভজনক ফসল উৎপাদনে কোনও ভাবেই উৎসাহিত করেনি রাজ্যের তৃণমূল সরকার। ফলে ‘কৃষক দরদি’ বলে সরকার গঠনের আগে নিজেদের ভাবমূর্তি গড়ে তুললেও, আরও অন্যান্য রাজ্যের মত ‘কৃষক বন্ধু’ নামে কিছু আর্থিক সহায়তা দেওয়ার প্রকল্প নিলেও বাস্তবে কৃষিকে লাভজনক করে তোলার কোনও উদ্যোগ রাজ্যের সরকার নেয়নি।
তাদের রিপোর্টই তাই বলছে।


ধান, গমের মত খাদ্যশস্য উৎপাদনও এই দশ বছরে রাজ্যে বেড়েছে খুবই সামান্য। ২০১১-১২-তে দেশের মোট যত টাকার খাদ্যশস্য উৎপাদন হয়েছিল, তার ৬.৯% হয়েছিল পশ্চিমবঙ্গে। সর্বশেষ সমীক্ষা, ২০২১-এ তা পৌঁছেছে ৭%-এ। অর্থাৎ বৃদ্ধি — ০.১%।

মাছের উৎপাদনেও রীতিমত চ্যালেঞ্জের মুখে পশ্চিমবঙ্গ। ২০১১-১২-তে পশ্চিমবঙ্গ ছিল প্রথম স্থানে। দেশে মোট যত টাকার মাছ উৎপাদন হয়েছিল, তার ২৪.৬% হয়েছিল পশ্চিমবঙ্গে। এগারো বছর পর তা নেমে এসেছে ১৫.৩%-এ। আর এই সময়ে প্রথম স্থানে উঠে এসেছে অন্ধ্রপ্রদেশ। ২০১১-১২-তে দেশের মোট যত টাকার মাছ উৎপাদন হয়েছিল ১৭.৭% উৎপাদিত হয়েছিল। ২০২০-২১-এ তা পৌঁছেছে ৪০%-এ। 


অন্ধ্রের মাছ ছেয়ে যাচ্ছে বাজার। মমতা ব্যানার্জির ‘ইলিশ উৎপাদন কেন্দ্র’র হাল কৃষক বাজারের মতই।
ফল এবং সবজি উৎপাদনে এখনও প্রথম স্থান বজায় আছে। কিন্তু ঘাড়ের উপর নিঃশ্বাস ফেলছে মধ্যপ্রদেশ। ২০১১-১২-তে দেশের মোট ফল উৎপাদনের ১৩.৯%-র অধিকারী ছিল পশ্চিমবঙ্গ। এখন নেমে এসেছে ১১.৭%। এই এগারো বছরে মধ্যপ্রদেশে উৎপাদন ৬.৩% থেকে পৌঁছেছে ১০.৮%-এ।
 

Comments :0

Login to leave a comment