Malda Migrant Family

মিজেরামে মৃত শ্রমিকদের পরিবার এখনও পায়নি সহায়তা

জেলা

চৌদুয়া গ্রামে মৃত শ্রমিকদের পরিবারের সঙ্গে দেবজ্যোতি সিনহা।

উৎপল মজুমদার

উচ্চ মাধ্যমিকে খুবই ভালো রেজাল্ট করেছিল শাহিন আখতার। ইচ্ছে ছিল বেঙ্গালুরুতে যাবে পড়তে। বাড়িত টাকা কোথায়। মিজোরামে চলে গিয়েছিল রেল ব্রিজের কাজ করতে। কিছু টাকা জমলে চলে যাবে বেঙ্গালুরু।

প্রায় দেড় মাস আগে শাহিনদের দেহ কফিনবন্দি হয়ে পৌঁছেছিল মালদহে। মিজোরামে রেলের ব্রিজ ভেঙে পড়ে মারা গিয়েছিলেন মালদহের ২৩ জন শ্রমিক। রেলের ব্রিজ তৈরির কাজেই যুক্ত ছিলেন তাঁরা। একাধিক পরিবার দেড় মাস পরেও পাননি ডেথ সার্টিফিকেট। মেলেনি প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী আর্থিক ক্ষতিপূরণ। 

মিজোরামে মৃতদের মধ্যে মালদহের চৌদুয়া গ্রামেরই ১১ জন। এই গ্রামে মৃত শ্রমিকদের পরিবারের সঙ্গে দেখা করলেন সিআইটিইউ নেতবৃন্দ। তাঁদের কাছে একরাশ সমস্যা জানিয়েছেন মৃত শ্রমিকদের বাবা-মা বা স্ত্রী। দেখা করতে যান সিআইটিইউ’র মালদা জেলা সম্পাদক দেবজ্যোতি সিনহা। নির্মাণ শ্রমিক ইউনিয়নের রাজ্য কমিটির সদস্য তবরেজ, কৃষক নেতা মেসের আলি, ছাত্রনেতা দীপঙ্কর ঘোষও ছিলেন সঙ্গে। 

এ বছরেরই ২৪ আগস্ট আইজলের কাছে সারঙে ভেঙে পড়েছিল রেলের নির্মীয়মান সেতু। পরিযায়ী শ্রমিকদের কী পরিস্থিতিতে কাজ করানো হয় সেই বিবরণও দিয়েছেন তাঁদের পরিজনরা। একটি বেসরকারি সংস্থাকে কাজের বরাত দেওয়া হয়েছিল। জীবনের ঝুঁকি সত্ত্বেও নিরাপত্তা বিধি না মেনে কাজ করানো হয়েছে শ্রমিকদের, বলছেন পরিজনরা।

পরিজনরা জানিয়েছেন, সংশ্লিষ্ট ইঞ্জিনিয়ারদের এবং রেলের নজরদারিতে ভয়াবহ গাফিলতি রয়েছে। তাড়াহুড়োয় কাজ করতে বাধ্য করা হত। সেতু আচমকা ভেঙে পড়েনি। কাঁচা কাজে ওপরের ভার সহ্য করতে পারেনি ব্রিজ, ভেঙে পড়েছে। সেই সঙ্গে কেড়ে নিয়েছেন তাঁদেরই প্রিয়জনদের প্রাণ।

ঘটনার পর কেন্দ্রের বিজেপি সরকার এবং রাজ্যের তৃণমূল সরকার বহু প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। সেই সময়ই ছুটে গিয়েছিলেন বামপন্থী আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ, গিয়েছিলেন সিআইটিইউ’র নেতা কর্মীরা। 

দেবজ্যোতি সিনহা জানিয়েছেন, চৌদুয়ার বিভিন্ন পরিবারই তাঁদের আসতে বলে। বহু সমস্যায় রয়েছেন তাঁরা। বিধবা ভাতার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল রাজ্য। কারও সেই ভাতা মেলেনি। অনেক বাড়িতে ঋণ নিয়ে বাইক কেনা হয়েছিল। কেউ কেউ বাড়ির কাজের জন্য বেসরকারি ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নিয়েছিলেন। আচমকা পরিবারের আয় চলে যাওয়ায় সেই টাকা মেটাতে পারছেন না। 

প্রশাসনিক স্তর থেকে জানানো হয়েছে ডেথ সার্টিফিকেট না পেলে কাজ এগবে না। তার জন্য এই পরিবারগুলিকেই যেতে হবে সারঙে। কঠিন সময়ে পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন শ্রমিক নেতৃবৃন্দ। 

মিজেরামে ঘটনার বিষয়ে জানেন এমন একজনের সঙ্গে কথা বলেন দেবজ্যোতি সিনহা। ঘটনার সময় থেকে চূড়ান্ত অব্যবস্থার কথা জানিয়েছেন মিজেরামের সেই বাসিন্দাও। ব্রিজ ভেঙে পড়ার পর অনেকক্ষণ শ্রমিকদের চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়ার কোনও গাড়ি ছিল না। আহতরা যন্ত্রণায় আর্তনাদ করতে করতে এক সময় স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলেন।

Comments :0

Login to leave a comment