নতুনপাতা : বইকথা
দুই বাংলার উপকথা: এক ভিন্নস্বাদের আখ্যান কাহিনি
সৌরভ দত্ত
বাংলার উপকথাগুলি শিশু সাহিত্যের অন্যতম মাধ্যম।
উপকথা হল সাহিত্যের একটি বিশেষ প্যাটার্ন। পশুপাখি, গাছগাছালির চরিত্র অবলম্বনে উপকথা রচিত হয়। মূলত কৌতূকরস পরিবেশন ও নীতিকথার প্রচার উপকথাগুলির মূল উদ্দেশ্য।বাঘ,চড়ুই,কাক, টুনটুনি, শৃগাল প্রমুখ উপকথার লোকসমাজের বিশেষ দিককে ঈঙ্গিত করা হয়। উপকথার গভীর সঞ্জাত থাকে লোককথার প্রচ্ছায়া। নান্টু গঙ্গোপাধ্যায় সম্পাদিত কামিনী প্রকাশনায় থেকে প্রকাশিত দুই বাংলার উপকথা বইটি শিশু সাহিত্যের মনোজগতে গভীরভাবে অভিনিবেশ করে । ভূমিকা অংশে লেখক স্পষ্টতই জানিয়েছেন–“গল্প–সে নিছক কল্পনায় তৈরি রূপকথাই হোক অথবা প্রতিদিনের জীবনের ঘটনার ছায়ায় তৈরি করা উপকথার গল্পই হোক –সব রকম গল্পই ছোটদের প্রিয়।” বইয়ে রয়েছে ৩৭টি গল্প। প্রথম গল্পটির শিরোনামটি চমকপ্রদ–‘ল্যাজের বদলে রাজকন্যা ’। যেখানে দেখা যায়–“কোন এক সময় ছিল,যে সময় বেড়ালেরা মানুষের মতো কথা বলতো।”বিড়াল ঠিক করে যে সে একজন সৌখীন নাপিতের কাছে গিয়ে গোঁফ ছেঁটে আসবে।” ‘নিষ্ঠুর ডাইনিং বুড়ি’ গল্পের সূচনাটি এরকম–“সমস্ত সমস্তিপুরের রাজা অন্ধ হয়ে যায়। রাজ্যের সকলেই চিন্তিত হয়ে পড়ে।”দেশের চিকিৎসকরা রাজাকে সুস্থ করে তুলতে পারে না।এমন সময় হঠাৎ এক খয়েরি কুকুর রানীর কাছে আসে ও অভয় দেয়।এবং রাজার অন্ধত্ব দূর করার কথা বলে।সে একটি শর্তে রাজার অন্ধত্ব ঘোচাবে ।রাজা দৃষ্টিশক্তি ফিরে পেলে কুকুরটির সাথে রাজকুমারী পদ্ম কুমারীর বিয়ে দিতে হবে।‘জলদৈত্যের দৌরাত্ম্য’ গল্পটিতে হৃদয়পুর গ্রামের এক চাষী তার স্ত্রী ও ছেলের কথা।পথ চলতে চলতে একদিন চাষী ও তার পরিবার জঙ্গলে এসে পড়ে।সকলেই ক্লান্ত ও ক্ষুধার্ত। তারপর তারা এক পুকুরের টলটলে জল দেখতে পায়।লেখক বলেছেন–“চাষী জানতো না যে কোন পশু পাখী যদি এই পুকুরে জল খেতে আসে তবে এই পুকুরের গভীর জলে লুকিয়ে থাকা জলদৈত্য মুহূর্তের মধ্যে খেয়ে ফেলে।”ঘটনা পরম্পরায় চাষী জলদৈত্যটাকে একটা কাঠের বাক্সে ঢুকিয়ে কাঁধে করে বাড়ীতে নিয়ে আসে। উপকথার রোমাঞ্চকর কিছু মণিমুক্তা ছড়িয়ে রয়েছে এই গ্রন্থে। বিভিন্ন জন্তু জানোয়ারের কাহিনি স্থান পেয়েছে বইয়ে।অনেক গল্পের শেষেই রয়েছে নীতি কথার রেশ।
গ্রন্থ নাম–‘দুই বাংলার উপকথা’
সম্পাদনা–নান্টু গঙ্গোপাধ্যায়
প্রচ্ছদ–অঞ্জন বসু
অলংকরণ–অমল চট্টোপাধ্যায়
প্রকাশক–কামিনী প্রকাশনালয়
Comments :0