Tripura Election

সংশয়-শঙ্কার মধ্যেই আজ ভোট ত্রিপুরায়

জাতীয়

স্বর্ণেন্দু দত্ত: আগরতলা 
 

ভোটের আগের দিন রাতে টাকা বিলি করতে গিয়ে ধরা পড়লেন মোদীর মন্ত্রী প্রতিমা ভৌমিক। উত্তেজিত জনতার তাঁর সঙ্গী বিজেপি কর্মীদের বেধড়ক মার দিয়েছে। খবর পেয়ে মন্ত্রীকে নিরাপত্তা বাহিনী উদ্ধার করে নিয়ে এসেছে। বুধবার রাতে ধনপুর কেন্দ্রের দক্ষিণ তুইবান্দালে এই ঘটনা ঘটেছে। এদিন রাতেই গন্ডাছড়ার রাইমা ভ্যালি কেন্দ্রেও লক্ষাধিক টাকা সহ দুই বিজেপি কর্মী ধরা পড়েছে। গোটা রাজ্যের সর্বত্র অকাতরে টাকা বিলি করার অভিযোগ উঠেছে বিজেপি’র বিরুদ্ধে। সিপিআই (এম), কংগ্রেস, তিপ্রা মথার স্থানীয় নেতাদের কাছ থেকে লাগাতার এই অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। কোথাও ধরা পড়ছে, কোথাও তাড়া খাচ্ছে টাকা বিলি করতে এসে। অধিকাংশটাই থেকে যাচ্ছে নজরের বাইরে। 
ভোটপ্রচারের শুরু থেকেই কেন্দ্রীয় সামাজিক ন্যায় ও ক্ষমতায়ন প্রতিমন্ত্রী প্রতিমা ভৌমিকের বিরুদ্ধে অশান্তি, হিংসা ছড়ানোর অভিযোগ উঠছিল। ধনপুর কেন্দ্রে তিনি প্রার্থী হয়েছেন। ভোট প্রচার শেষ হওয়ার পরেও বিভিন্ন গ্রামে গ্রামে ঘুরে সভা করে যাচ্ছিলেন মোদীর মন্ত্রী। সঙ্গে চলছিল দেদার টাকা বিলি। এদিন রাতে উপজাতিদের ওই গ্রামে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী টাকা বিলি করতে এসেছিলেন বলেই অভিযোগ স্থানীয়দের। তখনই গ্রামবাসীরা হাতেনাতে ধরেন প্রতিমা ভৌমিক এবং তাঁর সঙ্গীদের। মন্ত্রীকে ঘেরাও করে রাখলেও সঙ্গী বিজেপি কর্মীদের উত্তম মধ্যম দেয় জনতা। 
ত্রিপুরা পশ্চিম লোকসভা কেন্দ্র থেকে সাংসদ হয়েছিলেন প্রতিমা ভৌমিক। সেই ভোটকে প্রহসনে পরিণত করে এমন ভোট লুট হয়েছিল, তার জেরে পূর্ব ত্রিপুরা কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ পিছিয়ে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু পশ্চিম কেন্দ্রের ভোট বাতিল করা হয়নি। লোকসভা ভোটে ছিল কেন্দ্রীয় বাহিনী। হয়েছিল কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনের আওতায়। তারপরে এই ধরনের ঘটনায় বড় ধাক্কা খেয়েছেন মানুষ। নির্বাচন কমিশন বারে বারে আশ্বস্ত করার পরেও মানুষ ভরসা পাচ্ছেন না যে বৃহস্পতিবার ভোটটা তারা দিতে পারবেন কিনা। অশান্তির আশঙ্কায় এদিন বিকেলের পর থেকেই আগরতলা শহরে লোকজন ঘরে ঢুকে যেতে শুরু করে। দোকান-বাজার, শপিং মল সাতটার পর থেকেই বন্ধ হতে থাকে। অটো-টোটো অমিল হয়ে যায় ন’টার মধ্যে। রাস্তার ধারে একটা চায়ের দোকান পর্যন্ত খোলা পাওয়া যায়নি। 
যদিও এদিন সকালে ত্রিপুরার মুখ্য নির্বাচন আধিকারিক কিরণ গিত্যে জোরের সঙ্গে রাজ্যবাসীর উদ্দেশে বলেছিলেন, নির্বাচন কমিশনের উপর আস্থা রাখুন। আপনার নিরাপত্তা ও ভোটের গোপনীয়তা অটুট থাকবে। বুথে যে পর্যাপ্ত সুরক্ষা ব্যবস্থার চাই, তার থেকে অনেক গুণ বেশি সুরক্ষা দেওয়া হয়েছে। গিত্যে বলেন, রাজ্যে রাজনৈতিক হিংসা যে অবস্থায় ছিল দেড় মাস আগেও, তা ৩০ শতাংশেরও কমে নামিয়ে আনা হয়েছে। তিনি বলেন, বুধবার রাত, বৃহস্পতিবার ভোটের সারাদিন এবং ভোটের পরেও যাতে কোনও হিংসার ঘটনা না ঘটে, কমিশন সেদিকে নজর রাখবে। গিত্যে জানান, রাজ্যে মোট ৩৩৩৭টি ভোট কেন্দ্র আছে। সর্বত্র নিরাপত্তার ব্যবস্থা হয়েছে। সব ভোট কেন্দ্রই মেন রোডের উপরে। ভোট কর্মীদের তিনশো মিটার বেশি যেতে হবে না। তিনি বলেন, আগে নির্বাচন কমিশন জানিয়েছিল জিরো পোল ভায়োলেন্স বা হিংসামুক্ত ভোট। এখন কমিশন চাইছে ভোটের দিন জিরো রিপোর্টিং। অর্থাৎ অভিযোগহীন ভোট। যাতে কোথাও পুনর্নির্বাচন করতে না হয়। গিত্যে উৎসবের মেজাজেই মানুষকে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। কিন্তু মানুষ তাতে কতটা ভরসা পাচ্ছেন, সেটা বৃহস্পতিবার বোঝা যাবে। 
এদিন রাতের দিকে বিভিন্ন জায়গায় ছোটখাট হিংসা, হুমকির খবর পাওয়া গেছে। বুধবার রাতে বিশালগড়ে সাংবাদিক কৃষ্ণ পালের বাড়িতে বোমা হামলা চালায় বিজেপি দুষ্কৃতীরা। গোটা এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। বিলোনিয়া মহকুমার আসনগুলি, খোয়াই জেলাতে বিভিন্ন জায়গায় হামলার চেষ্টা চালিয়েছে বিজেপি। পালটা প্রতিরোধের মুখেও পড়েছে। গত দুই –তিন ধরে বিভিন্ন জায়গায় হামলা চালাতে এসে প্রতিরোধের মুখে পড়ছে এবং জখম হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে বিজেপি কর্মীরা। এদিনও তার ব্যতিক্রম হয়নি। 
বুধবার সকালে আগরতলার দক্ষিণ রামনগর এলাকার বাসিন্দা রিপন মিঞা বলেন, লোকসভা, পৌরসভায় ভোট দিতে পারিনি। ভোট দিতে গেলে বিজেপি’র দুর্বৃত্তরা হুমকি দিয়ে বলে, ‘তোমাদের আবার ভোট কিসের? বামফ্রন্টের সময় চলে গেছে। এখন বিজেপি সরকার। বিজেপি আমলে মুসলিমদের ভোট নেই। আমরা দিয়ে দেব। তোমরা বাড়ি যাও।’ রিপন মিঞা বললেন, এখানে ৭০০ ভোটার। কমপক্ষে ৭০ শতাংশ লোককে ভোট দিতে দেওয়া হয়নি আগের দুটো ভোটে। পুলিশও কোনও ভূমিকা নেয়নি। 
এবারও যদি একইরকম অবস্থা হয়? দক্ষিণ রামনগরের বাসিন্দারা বললেন, এখনও পর্যন্ত তো নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা ভালো। কাল কী হয় দেখা যাক। তাদেরই একজন এরশাদ আলি বললেন, এবার সব জোট বেঁধে প্রস্তুত আছি। ভোট দেবই। কমিশন, প্রশাসন ব্যবস্থা করলে ভালো। নাহলে নিজেরাই করে নেব।

Comments :0

Login to leave a comment