Editorial

মান রাখার নামে অপমান

সম্পাদকীয় বিভাগ

নানা কারণে সংসদের অধিবেশন ভণ্ডুল হয় সেটা নতুন কোনো ঘটনা নয়। আবার এইভাবে অধিবেশনে অচলাবস্থা তৈরির পেছনে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মুখ্য ভূমিকা থাকে বিরোধীদের। সরকারের অনড় মনোভাবের বিরুদ্ধে বিভিন্ন জরুরি বিষয়ে আলোচনার দাবিতে প্রতিবাদ-বিক্ষোভের জেরে সংসদ অচল হয়ে যায়। কিন্তু মোদী জমানায় নজিরবিহীনভাবে লক্ষ্য করা যাচ্ছে সংসদের কার্যাবলি অচল করার দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছে মোদীভক্তরাই। সংসদের উভয় কক্ষেই সংখ্যাগরিষ্ঠ শাসক দল। লোকসভায় গরিষ্ঠতা বিরাট। কথায় কথায় বিরোধীদের ফুৎকারে উড়িয়ে দেবার চেষ্টা হয়। অধিবেশন চলে শাসক দলে মর্জি মতো। এত কিছুর পরও হই হট্টগোল পাকিয়ে সংসদ অচল করে রাখতে কেন এত মরীয়া হয়ে উঠেছে বিজেপি তা অনেকেরই বোধগম্য হচ্ছে না।


আসলে মোদীর নেতৃত্বে কেন্দ্রে সরকার গঠনের পর থেকেই নিজেদের স্বার্থে নিজেদের প্রয়োজন অনুযায়ী সংসদকে ব্যবহার করছে শাসক দল। বিরোধীদের কণ্ঠরোধ করা যেন অভ্যেসে দাঁড়িয়ে যাচ্ছে। সংসদে কোন বিষয়ে কতটা আলোচনা হবে ঠিক করছে সরকার পক্ষ। বিরোধীরা বলার জন্য কতটা সময় পাবে সেটাও ঠিক করছে সরকার। গণতন্ত্রের মৌলিক ধারণা সংসদ থেকেই নির্মূল করে দেবার অভিযান চলছে। দেশ ও জাতির পক্ষে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে বিরোধীরা আলোচনা চাইলে প্রত্যাখ্যান করা হয়। সরকার তথা প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে অস্বস্তিকর হতে পারে এমন কোনো বিষয় নিয়ে আলোচনা কোনো অবস্থাতেই সংসদে করতে দেওয়া হয় না।


আদানি গোষ্ঠীর জালিয়াতি ও কারচুপি নিয়ে যখন দেশ তোলপাড়, বিদেশে যার ধাক্কা লেগেছে জোরালোভাবে, সেটা নিয়ে আলোচনা চায় বিরোধীরা। এই আদানির সঙ্গে মোদী ঘনিষ্টতা নিয়েও গুরুতর প্রশ্ন রয়েছে জনমানসে। বিরোধীরা চান মোদী নিজে সংসদে দাঁড়িয়ে মানুষের প্রশ্নের উত্তর দিন। এই দাবিতে বিরোধীরা অনড়। আমজনতাও চায় আদানি রহস্যের উদ্‌ঘাটন হোক সংসদীয় কমিটির তদন্তে। কিন্তু আদানি নিয়ে কোনো আলোচনা চায় না সরকার। আলোচনা হলেও খুলে যেতে পারে মোদীর মুখোশ। বিড়ম্বনার শেষ থাকবে না। তাই মোদীর নির্দেশেই বিষয়টিকে এড়িয়ে বিতর্ক অন্যদিকে ঠেলে দিতে সংসদে বিশৃঙ্খল আচরণ করে সভা বানচাল করছেন মন্ত্রী-সাংসদরা। অজুহাত হিসেবে সামনে এনেছে রাহুল গান্ধীর লণ্ডনে করা মোদী জমানায় ভারতের গণতন্ত্রের বিপন্নতা নিয়ে মন্তব্যকে। মোদীর আমলে গণতান্ত্রিক পরিসরকে সংকুচিত করা, বিরোধী কণ্ঠরুদ্ধ করার কথা বলে রাহুল নাকি ভারতের অপমান করেছেন। তাই রাহুলকে ক্ষমা চাইতে হবে। নাহলে সরকারই সংসদ চলতে দেবে না। ভাবা যায় সরকার পক্ষের সাংসদ ও মন্ত্রীরা সংসদ অচল করার কথা বুক ফুলিয়ে বলছে। যাদের দায়িত্ব সংসদ চালানো তারা সেটা বন্ধ করে দিচ্ছে। এরপরও তারা গণতন্ত্রের কথা বলছে। দেশের সংসদীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার উপর এর চেয়ে বড় আঘাত আর কি হতে পারে।
 

Comments :0

Login to leave a comment