২০১৫ সাল থেকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর অন্তত ২০টি বিদেশ সফরের সঙ্গী হয়েছিলেন তাঁর অতি ঘনিষ্ঠ শিল্পপতি বন্ধু গৌতম আদানি। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বা প্রধানমন্ত্রীর সফরের আগে পরে আদানি যে দেশেই গিয়েছেন সেখানে আদানি গোষ্ঠীর বাণিজ্য বিস্তারের চুক্তি হয়েছে। এরমধ্যে অন্যতম কয়েকটি হলো অস্ট্রেলিয়া, ইজরায়েল, শ্রীলঙ্কা প্রভৃতি।
কুড়ি বছর আগেও শিল্পপতি হিসেবে যার নাম কেউই প্রায় শোনেননি, মুম্বাইয়ে হিরে কেনাবেচা করতেন, গুজরাটের পূর্বতন মুখ্যমন্ত্রী এবং ভারতের বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর সৌজন্যে তিনি হয়ে উঠেছেন ভারত তথা এশিয়ার ধনীতম শিল্পপতি এবং বিশ্বের তৃতীয় ধনীতম ব্যক্তি।
এমন অবিশ্বাস্য দ্রুতগামী উত্থান ভারতের কর্পোরেট গোষ্ঠীগুলিকে আজকে অবস্থানে আসতে একাধিক প্রজন্ম সময় লেগেছে। একমাত্র ব্যতিক্রম আদানি গোষ্ঠী।
দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সমুদ্র বন্দরের মালিক যেমন আদানি গোষ্ঠী তেমনি মোদীর কল্যাণে আরব সাগর ও বঙ্গোপসাপরের তীরে ১১টি বন্দরের দখল পেয়েছে আদাদিরা। ত্রয়োদশ বন্দরটি আদানিদের উৎসর্গ করেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। বরাত পাওয়া তাজপুরের সেই বন্দরটি অবশ্য এখনও তৈরি হয়নি। কয়লাশিল্পে কোল ইন্ডিয়ার পরেই আদানির স্থান। বিদ্যুতে এনটিপিসি-র পরে। দেশের ভোজ্য তেলের বাজারের সিংহভাগ তাদের দখলে। এইভাবে অর্থনীতির প্রধান খুঁটি ও সর্বেসবা হয়ে উঠছে আদানিরা।
মোদী পথ অনুসরণ করে তৃণমূল নেত্রী ও আদানিদের বাণিজ্য সাম্রাজ্য প্রসারে সক্রিয় ভূমিকা পালন করছেন। শুধু তাজপুর সমুদ্র বন্দর আদানিদের হাতে সমর্পণ করেই তিনি ক্ষান্ত হননি। ঝাড়খণ্ডে আদানিদের বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ রপ্তানির জন্য জোর জবরদস্তি পুলিশ দিয়ে জমি দখল করে আদানিদের হাতে তুলে দিয়েছেন। বেশ কয়েকটা গ্রামের হাজার হাজার দরিদ্র আদিবাসী পরিবারকে চিরতরে ভিটেমাটি ছাড়া করে যে দেউচা কয়লাখনি তৈরি হচ্ছে সেটাও নৈবেদ্য হিসেবে অর্পিত হচ্ছে আদানিদের কাছে।
মমতার আদানি প্রেম মোদীর থেকে কোনও অংশে কম নয়। সম্ভবত সেকারণেই নির্বাচনী বন্ডের নামে যে বিপুল কর্পোরেট অর্থ রাজনৈতিক দলের তহবিলে ঢোকে তার দ্বিতীয় বৃহত্তম অংশের গন্তব্য হয় তৃণমূল।
মোদী বিহনে আদানির উত্থান বিজেপি-র কাছে যতই অপ্রিয় ও অস্বস্তির বিষয় হোক না কেন তাকে অস্বীকার করার উপায় নেই। অর্থাৎ মোদী ও বিজেপি-র সমর্থনে ও সহযোগিতায় গুজরাটের এক কোনা থেকে উঠে গোটা দেশ ও বিদেশে সাম্রাজ্য বিস্তার করেছে আদানিরা।
একই রকমভাবে না হলেও তৃণমূলেরও অনেকে দুর্নীতির মাধ্যমে লুট করা অর্থ বাণিজ্য বিস্তারে ব্যবহার করেছে। তৃণমূলের নেতা মন্ত্রী থেকে আরম্ভ করে সাংসদ-বিধায়কদের একটা বড় অংশ সরাসরি বা পরোক্ষে লাগামছাড়া দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত। অযোগ্যদের চাকরি বিক্রি করে যেমন শত শত কোটি টাকা কামানো হয়েছে তেমনি গোরু পাচার, কয়লা পাচার, বালি পাচার ইত্যাদির মাধ্যমেও শত শত কোটি টাকা কামানো হয়েছে।
এই টাকাতেই তৃণমূল নেতারা গুচ্ছ সম্পদের মালিক হয়েছেন এবং নানা ধরণের ব্যবসা বাণিজ্য শুরু করেছেন। এখন দেখা যাচ্ছে ভিন রাজ্যে এমনকি ভিন দেশেও বিপুল লগ্নি হয়েছে। এক নেতা গোয়াতে হোটেল বানিয়েছেন, ত্রিপুরায় চা বাগান কিনেছেন। কেউ পুরীতে হোটেলের মালিক। গোয়া, ত্রিপুরা, মেঘালয় তৃণমূল গড়ার নামে ঝটিকা সফরের আড়ালে চোর নেতাদের চুরির টাকা বিনিয়োগ হচ্ছে নানা ব্যবসায়।
Comments :0