NATUNPATA JANA AJANA SITAVOG MIHIDANA

নতুনপাতা জানা অজানা সীতাভোগ মিহিদানার গল্প

ছোটদের বিভাগ

NATUNPATA JANA AJANA SITAVOG MIHIDANA 16 JUNE

সীতাভোগ মিহিদানার গল্প
তপন কুমার বৈরাগ্য

লর্ড কার্জন বর্ধমানের রাজা বিজয়চাঁদকে রাজাধিরাজ
উপাধি দিতে আসবেন। বড়লাট রাজাকে বললেন--আমার 
উপস্থিতিকে আপনাকে স্মরণীয় করে রাখতে হবে।
এক আমার নামে এক স্মৃতি সৌধ বানাবেন আর দুই 
আমাকে এমন দুটি নতুন মিষ্টান্ন খাওয়াবেন যা কেউ কখনো 
সেই মিষ্টি খায়নি।
রাজা তো পড়লেন মহাফাঁপরে।বহু টাকা খরচ করে তিনি
তৈরি করলেন কার্জন গেট কিন্তু মিষ্টান্নর সমস্যা কিভাবে
সমাধান করা যাবে?


অনেক ভেবে চিন্তে তিনি সেই সময় বর্ধমানের সেরা মিষ্টি
প্রস্তুতকারক ভৈরবচন্দ্র নাগ মহাশয়কে নিজ রাজপ্রাসাদে ডাকলেন।
ভৈরববাবু রাজা বিজয়চাঁদের সব কথা মন দিয়ে শুনলেন।
তারপর একগাল হেসে বললেন--মহারাজ, চিন্তা করবেন
না।আমি এমন দুটি নতুন মিষ্টান্ন তৈরি করে দেব যা খেয়ে
বড়লাটের তাক লেগে যাবে। রাজা বললেন সত্যিই যদি
সাহেবকে তাক লাগিয়ে দিতে পারেন তবে আমার গলার
মহামূল্যবান হারটা আপনার গলায় পরিয়ে দেব।
ভৈরবচন্দ তো মহাখুশি। কয়েকদিন চিন্তা করে তিনি বের
করলেন সম্পূর্ণ দুটি মিষ্টান্ন।
প্রথম মিষ্টান্নটি তৈরি করলেন গোবিন্দভোগ চালের গুঁড়ো,
বেসন,জাফরান, গাওয়া ঘি এবং চিনির রস দিয়ে।
নাম দিলেন মিহিদানা।


তিনি দ্বিতীয় মিষ্টান্ন তৈরি করলেন গোবিন্দভোগ চাল,
ছানা,দুধ,চিনির রস দিয়ে। নাম দিলেন সীতাভোগ।
বড়লাট এই মিষ্টান্ন খেয়ে এতোই খুশি হলেন যে রাজাকে
রাজাধিরাজ উপাধি দেওয়ার পর তাঁকে বুকে জড়িয়ে
ধরলেন। বড়লাট চলে গেলে বিজয়চাঁদ নিজের গলার
মহামূল্যবান হারটা ভৈরবচন্দ্রের গলায় পড়িয়ে দিলেন।
সুতরাং ১৯০৩সালে সীতাভোগ ,মিহিদানা ইতিহাসের
পাতায় ঠাঁই পেয়ে গেল।জেনে আশ্চর্য হতে হয় এক
বছরের মধ্যে এই দুটি মিষ্টান্ন জনপ্রিয়তার শীর্ষে উঠে
এলো।এক বছর পর ১৯০৪সালে কান্তকবি রজনীকান্ত
সেন লিখলেন--সরষের মতো হতো মিহিদানা।


প্রখ্যাত কৌতুক  অভিনেতা নবদ্বীপ হালদার গেয়ে 
উঠলেন--বর্ধমানে সীতাভোগ মিহিদানা দরবেশ।
আজ সারা পৃথিবীর মানুষ জানেন বর্ধমানের মিহিদানা
সীতাভোগের কথা। বর্ধমানে এসে কেউ যদি  না মিহিদানা
সীতাভোগের স্বাদ না নেন তবে তাঁর জীবনে একটা
বিরাট শূন্যতা থেকে যায়।

Comments :0

Login to leave a comment