RABIKATHA SHUVA DASGUPTA

রবিকথা শুভ দাশগুপ্ত

সাহিত্যের পাতা

RABIKATHA  SHUVA DASGUPTA 20 MAY

রবীন্দ্রনাথ

শুভ দাশগুপ্ত

 

 

 

পরমারাধ্য কবিবরেষু,
মাননীয় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর মহোদয়,
ধরা-ছোঁয়ার অনেক উর্দ্ধে এখন আপনি।
আমাদের জীবনের প্রত্যহিকতায়,
কলকাতা কিংবা বোলপুরের শান্তিনিকেতনে,
ইংল্যান্ডে কিংবা মংপুতে, কোথাও আর আপনার
মানবিক চলাফেরার চিহ্নটুকুও নেই।
যে মানচিত্রকে আপনি ভারতবর্ষ বলে দেখেছিলেন
আপনার প্রস্থানপর্বের অনতিবিলম্বে সে মানচিত্র
বদলে গেছে অনেকখানি।
পাঞ্জাব সিন্ধু-গুজরাট-মারাঠার সিন্ধু
এখন পরদেশ,
সেখানে যেতে গেলে এখন পাসপোর্ট লাগে।
 

 

 

 

মান্য কবিবর,
সেই বদলে যাওয়া মানচিত্রের রক্তাক্ত পটভূমিতে
দাঁড়িয়ে আমি একজন সামান্য মেয়ে।
আমাদের মতো মেয়েদের জীবনে আপনি এক
আশ্চর্য স্বপ্নময় দ্বীপভূমি।
যেখানে যাবার স্বপ্ন আমাদের উদ্দীপ্ত করে,
আর যেখানে পৌঁছতে না পারার চিরকালীন গ্লানি
আমাদের বিদীর্ণ করে, বিদ্ধ করে।
দেশভাগের মর্মান্তিক যন্ত্রণা কে সম্পত্তি করে
আমাদের ধ্বস্ত পরিবার একদিন এসে বাসা বেঁধেছিলো
টালির ঘরে, শহর থেকে বহুদূরের গ্রামে।
বাবা কখনো দোকানদারী, কখন ছাত্র-পড়ানো,
কখনো এটা-সেটা ক’রে প্রখর জীবনস্রোতে
বৌ-ছেলে-মেয়ে নিয়ে আজীবন চেষ্টা করেছেন
ভেসে থাকতে, বেঁচে থাকতে।
তাঁর সম্বল বলতে কিছু ছিল না,
না টাকা-পয়সা, না আশা-ভরসা,
ছিল সাহস, আর ছিলেন আপনি।
হ্যাঁ, উঠতে-বসতে চলতে-ফিরতে
কথায়-কথায় বাবা বলতেন আপনার কথা,
 

 

 

আপনার কবিতা আর গানের কথা,
আপনার নোবেল প্রাইজ পাওয়ার কথা,
আপনার নাইটহুড ত্যাগের কথা,
আপানার গোরা-চোখের বালি-যোগাযোগের কথা,
গীতাঞ্জলী-ছিন্নপত্রের কথা।
আর এসব কথা যখন বলতেন
দারিদ্রলাঞ্ছিত সেই দীনহীন মানুষটির
সমস্ত চোখ মুখ ভ’রে জ্বলে উঠতো আলো।
আমরা যারা শুনতাম – আমি,দাদা, মা,
আমাদের দৃষ্টির চেনা পরিধির সীমা ডিঙিয়ে
অসীম এক আকাশ উঠতো জেগে,
যে উদার নীলিমায় কেবল গান, কেবল ছবি, কেবল প্রশান্তি।
দারিদ্র আর অসাফল্যের টানাপোড়েনে বোনা
আমাদের উদ্বাস্তু জীবনে আপনি ছিলেন
এক অশেষ মাধুরী।
 

 

 

কবি, আপনার জানার কথা নয়, আমরা জানি,
আমরা, দেখেছি অনটন আর নিরুপায় দারিদ্র
কি ভয়ঙ্কর আগ্নেয় শক্তিতে জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে দিয়েছে
আমাদের নিরন্ন জীবনকে।
তবু যখন দিনগত পাপক্ষয়ের উপান্তে এসে
একটুখানি মাটির দাওয়ায় বাবা বসতেন
চৈত্রের সন্ধ্যার বাতাস কপালে নিয়ে,
তখন নুয়ে-পড়া দুমড়ে-যাওয়া সেই হতমান মানুষটি
কি বিশ্বাসে যে গেয়ে উঠতেন –
 

 

 

 

“নাই নাই ভয়, হবে হবে জয়, খুলে যাবে এই দ্বার।”
গাইতেন, আর তাঁর গাল বেয়ে নেমে আসত
ব্যথার পরশ-লাগা অশ্রুধারা।
সব হারিয়েও বাবার বুক জুড়ে ছিলেন আপনি,
আমরা তখন অবোধ শিশু।
সেদিন ছিল শ্রাবণের এক অবিরাম বৃষ্টির রাত,
আমাদের ভাঙা ঘরের চাল ফুটো
হয়ে ঝরছিল স্রোতধারা,
আকাশে সেদিন ঘন দুর্যোগ।
মাত্র সাতদিনের জ্বরে আমার বিদ্ধস্ত মা
তখন শেষ পথের যাত্রী।

 

Comments :0

Login to leave a comment