পরীক্ষা দিয়ে ফেরার পথে সোমবার সকালে এক তরুণীকে মাথায় গুলি করে খুন করল দুই যুবক। প্রকাশ্য দিবালোকে লোকজনের মাঝখানেই এই ঘটনা ঘটায় তারা। ঘটনাস্থল, যোগীরাজ্য। পুলিশি ঘেরাটোপের মধ্যে আতিক আহমেদ ও তার ভাইকে গুলি করে হত্যার দু’দিনের মাথাতে একই কায়দায় আরও একটি খুন। কারা এই দুই যুবক, কেনই বা তরুণীকে খুন, এদিন রাত পর্যন্ত জানায়নি উত্তর প্রদেশের বিজেপি সরকারের পুলিশ। একজনকেও গ্রেপ্তার করা হয়নি। জম্মু-কাশ্মীরের প্রাক্তন রাজ্যপাল সত্যপাল মালিক পুলওয়ামাকাণ্ড নিয়ে বিস্ফোরক অভিযোগ করলেও তা নিয়ে শব্দ খরচ করেনি অধিকাংশ সংবাদমাধ্যমই। কিন্তু উত্তর প্রদেশের এনকাউন্টার, যোগী-রাজের সাফল্য নিয়ে প্রচারে ঝাঁপিয়ে পড়ে সেই গদি মিডিয়াই। কার্যত উৎসব করা হয়। তাই রোশনির ভিডিও সামনে আসতেই বিরোধীরা প্রশ্ন তুলেছেন, ‘‘এবারও কি এই হত্যার উৎসব পালন করবে গদি মিডিয়ার শিয়ালরা এবং বিজেপি?’’
যোগী রাজ্যে জঙ্গলরাজের এই ‘ঠোক দো’ সংস্কৃতির নিদর্শন এবার জালাউনে। বছর ২১’র রোশনি আহিরওয়ার স্নাতক স্তরে পড়তেন। এদিন ছিল ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের পরীক্ষা। রাম লক্ষ্মণ প্যাটেল মহাবিদ্যালয়ের ছাত্রী দলিত পরিবারের সন্তান ওই তরুণী পরীক্ষা দিয়ে ফিরছিলেন। হঠাৎই মোটরবাইকে করে দু’জন এসে তাঁর সামনে দাঁড়ায়। একজন পিস্তল বের করে রোশনির মাথা লক্ষ্য করে গুলি চালায়। মুহূর্তের মধ্যে রাস্তায় লুটিয়ে পড়েন রোশনি। রক্তে ভেসে যেতে থাকে চারপাশ। কলেজের ইউনিফর্মও রক্তে লাল হয়ে যায়। সোসাল মিডিয়া ও সংবাদমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিও’তে ধরা পড়েছে নৃশংসতা। রোশনির মা-বাবা রাজ আহিরওয়ার নামে এক যুবকের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছেন। তাকে জেরা করা হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, তাঁরা ওই দুই অভিযুক্তকে ধরতে গিয়েছিলেন। কিন্তু আকাশের দিকে পিস্তল ছুঁড়ে দিয়ে পালিয়ে যায় দু’জনই। ভিডিও’তে দেখা যাচ্ছে, মাটিতে মুখ থুবড়ে পড়ে রয়েছেন রোশনি।
রক্তে ভেসে যাচ্ছে চারপাশ। পাশেই পড়ে রয়েছে পিস্তল। পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে তদন্ত শুরু করেছে বলে দাবি করা হয়েছে। জালাউনের পুলিশ সুপার ডা. ইরাজ রাজার দাবি, ‘‘অভিযুক্তদের দ্রুত গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। আমরা অনেক প্রমাণ জোগাড় করেছি।’’ দিনের আলোয় বা রাতের আঁধারে গুলি, খুন এগুলো খুবই সাধারণ ঘটনা হয়ে গিয়েছে উত্তর প্রদেশে।
দু’দিন আগেই শনিবার রাতে আতিক ও আশরফ খুনের ‘লাইভ’ দেখেছে গোটা দেশ। সাংবাদিকদের সামনে কিছু বলতে যাচ্ছিল আতিক। এক ঝটকায় ছিটকে পড়ে যায় সে। পুলিশের সামনেই পরপর গুলি চালাতে থাকে এক যুবক। সাংবাদিক সেজে তিনজন মিলে এই কাজ করেছে বলে প্রচার চালানো হয়। এরও কয়েকদিন আগে এনকাউন্টারে খুন করা হয় আতিকের ছেলেকে। যোগী রাজ্যে এনকাউন্টারও নতুন নয়।
আদিত্যনাথ মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর থেকে এরকম এনকাউন্টারে অন্তত ১৬৯ জনকে খুন করা হয়েছে। ‘ঠোক দো’, ‘অপারেশন ল্যাঙরা’ এসব নাম প্রচলিত হয়ে ওঠে। দশ হাজারের বেশি এনকাউন্টার হয়েছে। আতিক-আশরফের খুন নিয়ে হাজারো প্রশ্ন উঠলেও তার কোনও জবাব নেই। হত্যাকারীরা গুলি চালিয়ে ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান দিয়ে চেঁচিয়ে ওঠে। বিজেপি’র প্রশাসনই যে পরিকল্পনা করে এই কাজ করিয়েছে, সেই সন্দেহও উঠে আসে অনেকের বক্তব্যে।
যোগী আদিত্যনাথ নেতৃত্বাধীন উত্তর প্রদেশে আইন-শৃঙ্খলার এই ঘৃণ্য চেহারাই নিয়মিত সামনে আসে তা নয়। মেয়েদের নিরাপত্তা, তাঁদের সুরক্ষা নিয়ে আদিত্যনাথ সরকারের কোনও মাথাব্যথা নেই। ধর্ষণ, শ্লীলতাহানি নিত্যদিনের ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। রোশনি খুনের পর গোটা দিন কেটে গেলেও এর কারণ সম্পর্কে কোনও দিশা দেখাতে পারে না পুলিশ।
Comments :0