অনন্য শিবরাম চক্রবর্তী কিছু কথা
তপন কুমার বৈরাগ্য
শিবরাম চক্রবর্তী হাসিররাজা। তাঁর হৃদয় ছিল রসে
টইটম্বুর। এ যুগের মানুষ হাসতে ভুলে যাচ্ছেন। আজ হাসিকে
আবার মানুষের মাঝে ফিরিয়ে আনতে হলে সকলের বেশি
করে দরকার তাঁর লেখাগুলো পড়া।
এক রাজপরিবারের সন্তান
হয়েও তাকে সারাজীবন চরম
আর্থিক সঙ্কটের মধ্যে দিন কাটাতে হয়েছে।
এই হাসির রাজার জন্ম ১৯০৩ খ্রিস্টাব্দের
১৩ই ডিসেম্বর কলকাতায় মামার বাড়িতে।
বাবা শিবপ্রসাদ চক্রবর্তী ছিলেন আধ্যাত্মিক সাধনায় অনুপ্রাণিত, মা
শিবরানি দেবীও তাঁর পদাঙ্ক অনুসরণ করে চলতেন।
ছোট্ট ছেলেকে মালদহের চাঁচলের রাজপ্রাসাদে রেখে
মাঝে মাঝে নিরুদ্দেশ হয়ে যেতেন। শিবরামকে দেখবার কেউ
ছিলেন না। তিনিও তাই মাঝে মাঝে বাড়ি থেকে পালিয়ে যেতেন।
কখনো পাহাড়ের কোলে, কখনো বা সমুদ্র সৈকতে, আবার
কখনো কলকাতায়। ছোটবেলা থেকে ছন্নছাড়া জীবনের জন্য
তাঁর মাধ্যমিক পরীক্ষা পর্যন্ত দেওয়া হয় নি।
সেবার কৈশোর বয়সে কলকাতায় পালিয়ে এসেছেন।
কয়েকদিন পর
প্রচণ্ড আর্থিক সংকটে পড়েন।
এক তার বয়সী কাগজ বিক্রেতার সাথে তাঁর পরিচয়
হয়। তিনিই তাঁকে খবরের কাগজ বিক্রির পথে নামান।
তখনকার বিখ্যাত পত্রিকা ছিলো দৈনিক বসুমতি'র সম্পাদক
ছিলেন তখন হেমন্ত প্রসাদ ঘোষ।
এখান থেকে পত্রিকা নিয়ে তিনি
ফেরি করতেন।
হেমন্ত প্রসাদ ঘোষ প্রতিদিন দেখতেন এই
কিশোর শিশুদের চকোলেট কিনে দিচ্ছেন, নিজেও তাদের সঙ্গে
আনন্দ করে খাচ্ছেন। শিশুদের সাথে তিনি নানা আনন্দে মেতে
আছেন। তাদের নানা উপহার দিচ্ছেন, গান শুনাচ্ছেন,
রসিকতা
করছেন। প্রতিদিন বিকেলবেলায় তিনি শিশুদের সাথে
মিলিত হতেন।
একদিন হেমন্ত প্রসাদ ঘোষ তাকে কাছে ডাকলেন।
শিবরাম নত মস্তকে তাঁর ঘরে প্রবেশ করলেন।
হেমন্ত বাবু তাকে বললেন – যারা শিশুদের এতো আপন করে
কাছে
টেনে নেয়; তাদের মধ্যে নিশ্চয় ঐশ্বরিক প্রতিভা থাকে।
তুমি শিশুদের জন্য লেখা শুরু করো, দেখবে তুমি শিশু সাহিত্যে
এক উজ্জ্বল নক্ষত্র হয়ে সাহিত্যাকাশে বিরাজ করবে।
সেদিন শিবরাম তার উৎসাহে উৎসাহিত হয়ে শিশু সাহিত্যিক হিসাবে
পথ চলা শুরু করলেন। লিখে ফেললেন প্রথম কবিতার বই 'মানুষ'
তাঁর কবিতা, গল্প উপন্যাস নিয়মিতভাবে দৈনিক বসুমতি, দেশ,
আনন্দবাজারে প্রকাশিত হতে লাগল। যে ছেলেটা অত্যাচারী সাহেব
নিধনের জন্য পিস্তল
ধরেছিলেন সেই ছেলেটার কলম হাতে
লিখে ফেললেন শিশু-কিশোরদের সেরা উপন্যাস 'বাড়ি থেকে
পালিয়ে',। যা তাঁর ভবঘুরে জীবনের কাহিনী বলা যায়। এই
উপন্যাসটি ঋত্বিক ঘটকের পরিচালনায় ১৯৫৮ সালে চলচ্চিত্র রূপে
আত্মপ্রকাশ করে। তাঁর অমর সৃষ্টি হর্ষবর্ধন গোবর্ধনের গল্প।
তেরো বছর বয়সে হেমন্ত প্রসাদ ঘোষের প্রেরণায় সাহিত্য জগতে
আসা। ৬০ বছর ধরে সাহিত্য চর্চা করে দেড়শোর অধিক অমর
সৃষ্টি রেখে গেছেন।
Comments :0