শক্তিশালী বিস্ফোরণে কেঁপে উঠলো মুর্শিদাবাদ। বিস্ফোরণে মৃত্যু হয়েছে তিনজনের। বিস্ফোরণে একটি বাড়ির ছাদ ভেঙে পড়েছে। নিহতদের নাম মামুন মোল্লা, সাকিরুল ইসলাম ও মুস্তাকিন সেখ। ঘটনার পর এলাকায় মোতায়েন করা হয়েছে বিশাল পুলিশ বাহিনী। ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়েছে গোটা এলাকায়। মুর্শিদাবাদের সাগরপাড়া থানার সাহেবনগর গ্রাম পঞ্চায়েতের খয়েরতলা গ্রামে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। বরিবার রাত দশটা নাগাদ বিকট শব্দে কেঁপে ওঠে গ্রাম। গ্রামের মানুষ বেড়িয়ে দেখেন স্থানীয় বাসিন্দা মামুন মোল্লার বাড়িতে বিস্ফোরণ হয়েছে। বাড়ি থেকে আহতদের চিৎকার শোনা যাচ্ছে। ভেঙে পড়ে পাকা বাড়ির দেওয়াল। বাড়ির ছাদও ভেঙে পড়েছে। বিস্ফোরণের তীব্রতায় ভেঙেছে জানলা, দরজাও। গ্রামের মানুষই এগিয়ে এসে আহতদের উদ্ধারে হাত লাগান। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় মোস্তাকিম সেখ নামের এক ব্যক্তির। বাড়ির মালিক মামুন মোল্লা ও সাকিরুল ইসলাম নাম এই দুজনকে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে আসা হয়। রাতেই তাঁদের মৃত্যু হয়।
মামুন মোল্লার প্রতিবেশী ইসলাম মণ্ডল বলেন, ‘‘ শীতের রাত আমরা সবাই ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। হঠাৎ বিকট আওয়াজ শুনে ঘুমে ভেঙে যায়। বাইরে গিয়ে দেখি মামুন মোল্লার বাড়ির ওই অবস্থা। ঝলসানো রক্তাক্ত দেহ বের করে আনা হচ্ছে। দেখে আমরাও আতঙ্কিত হয়ে পড়ি।’’
গ্রামবাসীদের দাবি, ওই বাড়িতে বোমা বাঁধা হচ্ছিল। মামুন মোল্লা নামের ওই ব্যক্তি আগেও এলাকায় বিভিন্ন ঝামেলায় জড়িয়েছেন। প্রায় ১৫ দিন আগে পাশের গ্রামের অন্য এক গোষ্ঠীর সঙ্গে গ্রাম্য বিবাদ বাঁধে মামুন মোল্লা গোষ্ঠীর। ধারণা, সেই ঝামেলাকে কেন্দ্র করেই বোমা বাঁধা হচ্ছিল। তবে বিস্ফোরণের তীব্রতা দেখে গ্রামবাসীদের ধারণা, ব্যবহার করা হচ্ছিল শক্তিশালী কোন বিস্ফোরক।
মৃত যুবক সাকিরুল ইসলামের বাবা বাবলু সরকার জানান,‘‘ গ্রামের এক মেয়ের বিয়ে নিয়ে পাশের গ্রামের এক গোষ্ঠীর সঙ্গে বিবাদ হচ্ছিল। কিছুদিন আগে মামুন নামের এক ব্যক্তি গাড়িও থানায় আটকে রাখে। ছেলে মামুনের সঙ্গে থাকতো। তাই এই ঘটনা ঘটল।’’ তিনি জানান, ছেলের কাপড়ের দোকানও রয়েছে। তবে ছেলে কী করছিলেন মামুন মোল্লার বাড়িতে? বলতে পারছেন না তিনি। মামুন মোল্লার দিদি ফাহুমা খাতুন দাবি করেন, ভাই বোমা বাঁধার কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না।
এদিন সকালেই গ্রামে যান সিপিআই(এম) নেতা আবু বাক্কার, ইউনুস সরকার। এই ঘটনা প্রসঙ্গে প্রশ্ন তুলে আবু বাক্কার বলেন, ‘‘মাঝে মধ্যেই বোমা, গুলি উদ্ধারের খবর উঠে আসে সংবাদ মাধ্যমে। তবে এতো বোমা, অস্ত্র গ্রামে গ্রামে থাকে কীভাবে। পুলিশ সতর্ক থাকলে এই ঘটনা এড়ানো যেতো। এলাকায় বেশ কিছুদিন ধরেই ঝামেলা হচ্ছিল। পুলিশের উচিৎ ছিল নজর রাখা।’’ গ্রামবাসীদের সঙ্গে কথাও বলেন তাঁরা। ঘটনায় তৃণমূলের সঙ্গে যোগের অভিযোগ তুলেছেন প্রাক্তন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর রঞ্জন চৌধুরী।
অতিরিক্ত জেলা পুলিশ সুপার রাসপ্রীত সিং বলেন, ‘‘ রাতে বোমা বিস্ফোরণের খবর এসেছে। তৎক্ষণাত পুলিশ এলাকায় গিয়েছে। পরে খবর পাওয়া যায় ৩ জনের মৃত্যু ঘটেছে। তথ্য প্রমাণ জোগার করা হয়ছে। প্রাথমিক ধারণ, দরজা জানলা বন্ধ করে বোমা বাঁধা হচ্ছিল। সেজন্যই বাড়ির ওই অবস্থা হয়েছে।’’
রাত থেকেই এলাকায় মোতায়েন রয়েছে সাগরপাড়া থানার পুলিশ। সকালে এলাকায় যায় সিআইডির বম্ব স্কোয়াড। মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে চলে তল্লাশি।
Murshidabad Explosion
মুর্শিদাবাদে বোমা বিস্ফোরণে ৩ জনের মৃত্যু
×
Comments :0