Adani Overseas Allegation

বিদেশেও বারবার ক্ষোভের মুখে আদানি গোষ্ঠী

আন্তর্জাতিক

সতীশ আচার্যের ব্যঙ্গচিত্র টুইটার থেকে।

গৌতম আদানিকে সুরক্ষা দিতে সবাই এক। সবাই মানে সরকার, বিজেপি, সেবি, ‘গোদি মিডিয়া’, সিবিআই, ইডি। ‘এক হ্যায় তো সেফ হ্যায়’ সলোগান নিয়ে এমনই কটাক্ষ ফুটে উঠছে ব্যঙ্গচিত্রে। 
আমেরিকার শেয়ার বাজারের নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠানই এখন সেদেশের আদালতে দায়ের করেছে আদানির বিরুদ্ধে অভিযোগ। যা নিয়ে ফের ক্ষোভের মুখে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। কিন্তু পর্যবেক্ষকরা মনে করিয়েছেন, এবারই প্রথম, বাইরের একাধিক দেশে আদানিকে ঘিরে বহু প্রশ্ন বারবারই উঠেছে। 
আমেরিকার শেয়ার বাজার বিষয়ক সংস্থা হিন্ডেনবার্গ রিপোর্টে আদানির বেনিয়ম নিয়ে ঘুচ্ছ গুচ্ছ অভিযোগ তোলা হয়। আন্তর্জাতিক স্তরেও বের হয় রিপোর্ট। সেবারও আদানির শেয়ারের দর কমতে থাকে। বিনিয়োগ করে লোকসানের মুখে পড়ে এলআইসি’র মতো রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা। কিন্তু আদানির বিরুদ্ধে তদন্তে নামেনি ইডি বা সিবিআই। 
বিরোধী দলগুলি সংসদে যৌথ সংসদীয় কমিটি গড়ে তদন্তের দাবিতে তোলপাড় করলেও দাবি মানেনি মোদী-২ সরকার। 
বিদেশের মাটিতে আদানির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখা যায় অস্ট্রেলিয়ায়। কুইন্সল্যান্ডে আদানির কয়লা খনিতে পরিবেশ এবং জীবিকা ধ্বংসের অভিযোগে এখনও সরব সেদেশের একাধিক আদি জনগোষ্ঠী। 
দেখা গিয়েছে নরেন্দ্র মোদীর বিদেশ সফরের পরপরই আদানি গোষ্ঠীর বড় অঙ্কের বরাত মিলেছে। অস্ট্রেলিয়ার কয়লা আবার আমদানি করা হচ্ছে ভারতেই। দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন সংস্থাগুলিকে সেই কয়লা বেশিদামে কিনতে বাধ্য করার অভিযোগও উঠেছে। যার ফলে দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনের খরচ বাড়ছে। 
শ্রীলঙ্কায় সদ্য আসীন অনুরা কুমারা দিসানায়েকে সরকারও আদানি গোষ্ঠীর চুক্তিতে বেনিয়মের অভযোগ তুলে। শ্রীলঙ্কা সরকার সুপ্রিম কোর্টে জানিয়েছে যে আগের সরকার আদানিকে যে বায়ুবিদ্যুৎ উৎপাদনের বরাত দিয়েছিল তা খতিয়ে দেখা হবে। প্রস্তাবিত প্রকল্পে বিদ্যুতের দাম এবং দেশের সার্বভৌমত্ব- দই নিয়েই ক্ষোভ রয়েছে ন্যাশনাল পিপলস পাওয়ার জোট সরকারের। 
বাংলাদেশেও আদানির বিদ্যুৎ চুক্তি ঘিরে বড় মাপের বিরোধ দানা বেঁধেছে। আদানি পাওয়ার ঝাড়খণ্ড লিমিটেডের বিদ্যুৎ সরবরাহ আদানিরা অর্ধেক করেছে বকেয়া বাড়তে থাকায়। এই বিদ্যুৎ কেনার চুক্তি হয়েছিল পূর্বতন শেখ হাসিনা সরকারের সময়। 
বাংলাদেশ হাইকোর্ট চুক্তি খতিয়ে দেখতে উচ্চপর্যায়ের কমিটি গড়ার নির্দেশ দিয়েছে। আন্তর্জাতিক স্তরের বিদ্যুৎ এবং আইন বিশেষজ্ঞদেরও রাখতে হবে সেই কমিটিতে। 
বাংলাদেশের দুই বিচারপতি ফরাহ মেহবুব এবং দেবাশিস রায়চৌধুরী কর্তৃপক্ষকে জানাতে বলেছে কেন অস্বচ্ছ এ চুক্তি খারিজ করা হবে না। 
বিশেষজ্ঞদে একাংশ বলেছেন, আদানির বিদ্যুতের প্রতি ইউনিট কিনতে বাংলাদেশের খরচ পড়ছে ৮.৪৮ টাকা। ভারতের অন্য বেসরকারি বিদ্যুৎ সংস্থার তুলনায় দাম ২৭ শতাংশ বেশি। ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার দামের তুলনায় ৬৩ শতাংশ বেশি।
বাংলাদেশে রাষ্ট্রায়ত্ত কোনও সংস্থারই বিদ্যুৎ দেওয়ার কথা। কিন্তু বিধি বদলে আদানিকে বিদ্যুৎ বিক্রির ব্যবস্থা করে দেয় নরেন্দ্র মোদী সরকার। বদলানো হয় বিধি। 
চলতি পর্বে আদানির বিরুদ্ধে আমেরিকারই আদালতে অভিযোগ দায়ের করেছে সেদেশের বিচার বিভাগ এবং সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন। হিন্ডেনবার্গের তুলনায় পরিস্থিতি আলাদা। কারণ সরকারি স্তর থেকে দায়ের হয়েছে অভিযোগ। আদালতে জমা নথিতে বলা হয়েছে প্রায় সৌরবিদ্যুৎ কিনতে ২০২৯ কোটি টাকা ঘুষ ভারতের রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় স্তরের সরকারি কর্মীদের দিয়েছে আদানি গোষ্ঠী। এই প্রকল্পে জড়িত আমেরিকার লগ্নিকারী সংস্থা। আমেরিকার শেয়ার বাজার থেকে এই প্রকল্পের জন্য তোলা হয়েছে টাকা।

Comments :0

Login to leave a comment