Opposition Lok Sabha

নিজের ঢাক পেটালেন মোদী, ওয়াক আউট বিরোধীদের

জাতীয়

Opposition Lok Sabha


হস্তিনাপুর হোক বা মণিপুর, রাজা অন্ধ হয়ে থাকলে মহিলাদের উপর অত্যাচারের ঘটনা ঘটে। বৃহস্পতিবার লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতা অধীর চৌধুরির এইরকম বক্তব্যের পরেই লাফিয়ে উঠলেন অমিত শাহ। নির্দেশের ভঙ্গিতেই অধ্যক্ষকে বললেন, সংযত হতে বলুন। তার কিছুক্ষণ আগেই লোকসভায় এসে নিজের আসনে বসেছেন ‘রাজা’। তখন সবে আলোচনা শুরু করেছিলেন অধীর চৌধুরি, ২০ জুলাই থেকে শুরু হওয়া সংসদের অধিবেশনে শুক্রবার প্রথমবার এসে ঢুকেছেন ‘রাজা’। তাতেই উৎফুল্ল সরকার পক্ষের বেঞ্চ থেকে ‘ভারত মাতার জয়’, আর ‘মোদী মোদী’ চিৎকার। বক্তব্য থামিয়ে অপেক্ষা করতে থাকেন অধীর চৌধুরি। তারপরেই বলেন, এই জন্যেই বিরোধীরা অনাস্থা এনেছে। এটাই গণতন্ত্রের শক্তি, যে প্রধানমন্ত্রী আসতে বাধ্য হয়েছেন। টেবিল চাপড়ে সম্মতি জানান বিরোধীরা।

বৃহস্পতিবার অনাস্থা প্রস্তাবের উপর আলোচনার শেষ দিন এমন চড়া সুরেই বাঁধা ছিল অধিবেশন। জবাবি ভাষণ দিতে উঠে ২ ঘণ্টা ১২ মিনিট বক্তৃতা করেন প্রধানমন্ত্রী। আগের দিন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহ ২ ঘণ্টা ৪ মিনিট বক্তৃতা করেছিলেন। এদিন প্রধানমন্ত্রীও মূলত বিরোধীদের যুক্ত মঞ্চকে আক্রমণেই ব্যস্ত ছিলেন। পাশাপাশি নিজের এবং তাঁর সরকারের ‘সাফল্য’-এর ফিরিস্তি দিতেই থাকেন। সংসদের অধিবেশন শুরু হওয়ার পর থেকে বাইরে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী যে নির্বাচনী প্রচারের কায়দায় বক্তৃতা দিয়েছেন, এদিনের ‘জবাব’ তার থেকে কিছু পৃথক ছিল না। টানা দেড় ঘণ্টা ধরে তিনি এইসব বলে গেলেও মণিপুর নিয়ে তখনও পর্যন্ত কোনও কথা বলেননি। মণিপুর নিয়ে প্রধানমন্ত্রী কোনও কথা বলছেন না বলে বিরোধীরা ওয়াকআউট করেন। তাঁরা ‘মণিপুর, মণিপুর’ স্লোগান দিতে দিতে বেরিয়ে যান। ইন্ডিয়া মঞ্চে নেই এমন দুই দল বিআরএস এবং শিরোমণি আকালি দলের সাংসদরাও বেরিয়ে যান ওয়াকআউট করে। বিরোধীদের বেরিয়ে যেতে দেখে প্রধানমন্ত্রী বলে ওঠেন, গণতন্ত্রে যাদের আস্থা নেই তারা শুধু শোনাতে পারে, শোনার ধৈর্য নেই! প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যে কটাক্ষ ধেয়ে আসে, গোটা অধিবেশনে আপনি কি করছিলেন? 
বিরোধীরা বেরিয়ে যাওয়ার পরেও তাঁর সরকারের গুণগান এবং বিরোধীদের আক্রমণ চলতে থাকে প্রধানমন্ত্রীর। শেষ পর্যন্ত ১ ঘণ্টা ৫২ মিনিট পরে মণিপুরের প্রসঙ্গে আসেন।

বিরোধীদের মণিপুর নিয়ে রাজনীতি না করার পরামর্শ দেন। মণিপুরের সমস্যার জন্যেও কংগ্রেসকেই দায়ি করেন। এদিনের আলোচনায় মোদী মণিপুরের থেকেও বেশি কংগ্রেসের নাম নিয়েছেন। ৫০ বার কংগ্রেস বলেছেন, মণিপুর সেখানে ১৮ বার। আর নিজের নাম নিজেই বলেছেন ৮ বার! রাহুল গান্ধীর ‘ঘৃণার বাজারে ভালোবাসার দোকান’ বক্তব্য নিয়ে যে বেকায়দায় পড়েছেন, বিশেষত কর্ণাটকের ভোটে, স্পষ্ট হয়েছে মোদীর বক্তব্যে। এদিন রাহুলের নাম না করে তিনি বলেন, আমার ঘৃণার দোকান, ওনাদের ভালোবাসার দোকান? আসলে ওদের লুটের দোকান। বিরোধীদের বিরুদ্ধে সেই পুরানো রেকর্ড বাজিয়ে মূলত দেশদ্রোহী, পরিবারবাদী এবং দুর্নীতির অভিযোগ করেছেন। নতুন কোনও কথা না থাকলেও তিনি নিজেই দাবি করেছেন, বিরোধীরা অনাস্থা আনলেও আসলে তারা চার-ছয় হাঁকিয়েছেন! সেঞ্চুরি করেছেন!
সরকারের সাফল্য বোঝাতে এদিনও তিনি বিচিত্র সব দাবি করেছেন। বলেছেন, তিনি তৃতীয়বার প্রধানমন্ত্রী হলে ভারত অর্থনৈতিকভাবে দুনিয়ার তৃতীয় শক্তিধর দেশ হবে।

আইএমএফ বলেছে, ভারতের দারিদ্র্য কমে গেছে। ব্যাঙ্ক, হ্যাল, এলআইসি- বেসরকারি হাতে তুলে দেওয়ার বিরোধিতা প্রসঙ্গে দাবি করেছেন, বিরোধীরা এই সব প্রতিষ্ঠানের বদনাম করেছে! সেইগুলি মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে। বিরোধীদের বক্তব্য, বাস্তবে এইগুলি মাথা উঁচু করে আছে, অর্থাৎ বিপুল লাভজনক বলেই সেগুলির লাভের গুড় তাঁর ঘনিষ্ঠ শিল্পপতিদের খাওয়ার জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। হিংসাদীর্ণ মণিপুরে না যাওয়ার যুক্তি দিতে গিয়ে বলেছেন, তাঁর মন্ত্রীরা সবাই মিলে ৪০০ বার এবং তিনি নিজে ৫০ বার গেছেন উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলিতে। 
২০১৯ সালে দ্বিতীয়বার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর থেকে এদিনের আগে প্রধানমন্ত্রী মাত্র ৭ বার সংসদে বক্তব্য রেখেছেন। এরমধ্যে ৫ বার রাষ্ট্রপতির ভাষণের পরে ধন্যবাদ সূচক প্রস্তাব, যেটা করতেই হয় প্রধানমন্ত্রীকে। এর বাইরে মাত্র দু’বার তিনি বলেছেন। একবার লোকসভার অধ্যক্ষপদে ওম বিড়লার শপথ গ্রহণ সমারোহের সময়ে। এটাও নিয়মের মধ্যেই পড়ে। অর্থাৎ প্রায় সাড়ে চার বছরে আসলে বলেছেন একবার, সেটাও রামজন্মভূমি তীর্থক্ষেত্র ট্রাস্ট বানানো নিয়ে। এত বড় দেশের এত রকম সমস্যা নিয়ে কখনও কোনও বিষয়ে সংসদে বলেন না প্রধানমন্ত্রী। উপস্থিতও থাকেন না অধিকাংশ সময়ে। এবারও মণিপুর নিয়ে বলানোর জন্য বিরোধীদের দাবি অগ্রাহ্য করতে গোটা বাদল অধিবেশনটাই বানচাল করেছে বিজেপি সাংসদরা। এত ঔদ্ধত্যের পরেও মোদী এদিন বিরোধীদের উদ্ধত বলেছেন!

কংগ্রেস সাংসদ গৌরব গগৈ ওয়াকআউটের পরে এদিন বলেছেন, অনাস্থা প্রস্তাব আনার দুটি লক্ষ্য ছিল, মণিপুরের মানুষ যাতে ন্যায়বিচার পান এবং প্রধানমন্ত্রী যাতে মণিপুর নিয়ে মুখ খুলতে বাধ্য হন। এই অনাস্থার জন্যেই দেশের মানুষ বহুদিন পরে প্রধানমন্ত্রীকে সংসদে বলতে দেখলেন। কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ এদিন প্রশ্ন তুলেছেন, যে মণিপুর নিয়ে আলোচনা হচ্ছে, সেখান থেকেই বিজেপি’র সাংসদ এবং কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রাজকুমার রঞ্জন সিং। যাঁর বাড়িও এই হিংসায় জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে, কেন বিজেপি তাঁকে সংসদে এই নিয়ে আলোচনা করতে দিল না? এদিকে কলাবতীকে নিয়ে তাঁর বক্তব্য অমিত শাহ সংসদে অসত্য তথ্য দিয়েছেন বলে কংগ্রেস সাংসদ মানিকচাম টেগোর অধ্যক্ষের কাছে অভিযোগ জানিয়েছেন। বিরোধীশূন্য লোকসভায় এদিন অনাস্থা প্রস্তাব পরাস্ত হয়েছে বলে জানিয়ে দেন লোকসভা অধ্যক্ষ ওম বিড়লা। তিনি বলেন, প্রস্তাবের বিরুদ্ধেই অধিকাংশ সদস্য রয়েছেন। এদিন অধিবেশনের শেষ পর্বে কংগ্রেস নেতা অধীর চৌধুরিকে সাসপেন্ড করার প্রস্তাব পাশ করানো হয়। সংসদে অধীর চৌধুরি অসংসদীয় আচরণ করেছেন বলে অভিযোগ আনে বিজেপি। প্রিভিলেজ কমিটির সিদ্ধান্ত না হওয়া পর্যন্ত অধীর চৌধুরি সাসপেন্ড থাকবেন বলে জানানো হয়েছে।

 

Comments :0

Login to leave a comment