Afghan women protest

কাবুলে শিক্ষার অধিকারের দাবিতে মিছিলে গ্রেপ্তার ৫ মহিলা

আন্তর্জাতিক

Afghan women protest

আফগানিস্তানের বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ নিষেধে তালিবানের ফতোয়ার প্রতিবাদে দেশের বিভিন্ন অংশে সোচ্চার মহিলারা। বৃহস্পতিবার রাজধানী কাবুলে ছাত্রীরা সমবেত ভাবে এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানান। প্রতিবাদ মিছিল থেকে তালিবানের সশস্ত্র লোকেরা ৫ জন মহিলাকে তুলে নিয়ে যায়। পরে ওই প্রতিবাদী মহিলাদের গ্রেপ্তার করার কথা ঘোষণা করে। 


পাশাপাশি কাবুলে মহিলাদের শিক্ষার দাবিতে আওয়াজ তোলার খবর করতে গিয়ে তালিবানের মৌলবাদী রক্ষীদের হাতে গ্রেপ্তার হন ৩ জন সাংবাদিকও।
আফগানিস্থানে পুরুষতান্ত্রিক সমাজ গঠনে একবগ্গা তালিবান শাসকরা মঙ্গলবার মহিলাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করার অধিকার কেড়ে নেওয়ার কথা ঘোষণা করে। বৃহস্পতিবার কাবুল, তাকহার সহ দেশের বিভিন্ন প্রদেশ ও শহরে এর বিরুদ্ধে মহিলা ও যুবতীরা প্রতিবাদ দেখান। 
কিছু দিন আগেই তালিবানের শাসকরা শিশু, কিশোরী এবং যুবতীদের স্কুল ও কলেজে পড়া বন্ধ করতে রীতিমত প্রশাসনিক নির্দেশিকা জারি করেছিল। এবার কেড়ে নেওয়া হলো ছাত্রীদের উচ্চশিক্ষার অধিকারও।


২০২১ সালে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের সঙ্গে গোপণ বোঝাপড়ার ভিত্তিতে তালিবানের সন্ত্রাসবাদীরা কাবুলের মসনদ দখল করে। সেই সময় কর্পোরেট মিডিয়া তালিবানের একদা সন্ত্রাসী অতীত ভুলিয়ে উদার ভাবমূর্তি খাড়ার করার বিস্তর চেষ্টা চালায়। ওয়াশিংটনের প্রেসক্রিপশন মেনেই তালিবানের কট্টরপন্থী চাইরা মানবাধিকারের জয়গানে গলায় মেলায়। 

 

 


কাবুলে ক্ষমতার প্রথম ধাঁপে দাঁড়িয়ে আগ বাড়িয়েই ঘোষণা করে মহিলাদের অর্জিত অধিকার অটুঁট রাখার প্রতিশ্রুতি।
কিন্তু সময়ের সঙ্গেই মহিলা স্বাধীকার বিরোধী অতীতের ধিক্কৃত অবস্থানে ফিরতে থাকে মোল্লা ওমরের শাকরেদরা। একে একে কেড়ে নেওয়া হয় মহিলাদের নাগরিক আধিকারগুলি। মাসখানেক আগেই মহিলাদের পার্ক এবং বাগানে যাওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। তার আগে মৌলবাদী শাসকরা বাড়ি থেকে বের হওয়ার আগে মহিলাদের শরীরে কোনও অংশ যাতে দেখা না যায় তার নির্দেশ দেয়। এছাড়া বহু মহিলাকে সরকারি কাজ থেকে ছাঁটাই করা হয়। ঘরের কোন পুরুষ ছাড়া মহিলাদের বাইরে বের হতেও জারি হয় হুলিয়া। ঘটনাচক্রে বুধবারই কাবুলের একটি আদালত ৬ মহিলাকে বিভিন্ন রকমের আইন ভাঙার অভিযোগে চাবকানোর নির্দেশ দেয়।


মঙ্গলবার কাবুলে জারি নতুন নির্দেশ অনুসারে শুধু সরকারি নয়, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে পারবেন না ছাত্রীরা। বৃহস্পতিবার সোশাল মিডিয়াতে কাবুলের জনা পঞ্চাশেক ছাত্রীকে হিজাব পরে শিক্ষার আধিকারের দাবিতে মিছিল করতে দেখা যায়। খবরে প্রকাশ প্রতিবাদী ছাত্রীদের কাবুল বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ দেখানোর কর্মসূচি ছিল। কিন্তু তার আগেই বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে তালিবানের সশস্ত্র লোকজন ঘিরে ফেলে। এর ফলে ছাত্রীরা কাবুলের অন্য অংশে প্রতিবাদ সভা করতে বাধ্য হন।


আফগানিস্তানে মহিলাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশাধিকার কেড়ে নেওয়ার প্রতিবাদে সরব হচ্ছেন পুরুষরাও। ইতিমধ্যে কাবুল বিশ্ববিদ্যালয় সহ বিভিন্ন সরকারি এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫০ জনের বেশি অধ্যাপক তালিবানী ফতোয়ার প্রতিবাদে পদত্যাগ করেছেন। একই সঙ্গে পরীক্ষায় বসতে অস্বীকার করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বহু ছাত্র। 


সম্প্রতি রাষ্ট্রসঙ্ঘের শিক্ষা এবং সংস্কৃতিক বিষয়ক সংস্থা ইউনেস্কো একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে। ওই রিপোর্টে জানানো হয়, ২০০১ সালে আফগানিস্তানে মার্কিন নেতৃত্বাধীন ন্যাটোর আগ্রাসনে তালিবানের শাসন ব্যবস্থার পতনের পরে অশান্ত দেশটিতে ক্রমশ পরিবর্তন ঘটতে থাকে। এই পর্যায়ে উচ্চ শিক্ষায় মহিলাদের উপস্থিতি বাড়ে প্রায় ২০ শতাংশ।
রাষ্ট্রসঙ্ঘ মহিলাদের শিক্ষার অধিকার কেড়ে নেওয়ার তালিবানের নতুন চক্রান্তের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে। তুরস্ক, সৌদি আরব ছাড়াও বিভিন্ন মুসলিম দেশ সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করেছে। এক্ষেত্রে পিছিয়ে নেই আমেরিকা এবং তার মিত্র শক্তিগুলিও। 
 

Comments :0

Login to leave a comment