Threat BJP

হুমকি বিজেপি বিধায়কের, মসজিদে ঢুকে ‘চুন চুন’ করে মারব মুসলিমদের

জাতীয়

মসজিদে ঢুকে মুসলিমদের ‘চুন চুন’ করে মারার হুমকি দিয়েছেন বিজেপি বিধায়ক নীতীশ রানে। জনৈক সন্ত রামগিরি মহারাজের সমর্থনে রানের এমন উসকানিমূলক ভাষণকে ঘিরে তোলপাড় মহারাষ্ট্র সহ গোটা দেশ। পরিস্থিতি বেগতিক বুঝে শেষে নীতীশ রানের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করতে বাধ্য হয়েছে আহমেদনগর পুলিশ। এমনকি মুসলিমদের সম্পর্কে আরও কুরুচিকর মন্তব্যের জন্য সন্ত রামগিরি মহারাজের বিরুদ্ধেও অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। গত ১৪ আগস্ট রামগিরি মহারাজ মুসলিম সম্প্রদায় এবং হজরত মহম্মদকে নিয়ে অত্যন্ত অবমাননাকর মন্তব্য করেছিলেন।
রবিবার হিন্দু সন্ত মহন্ত রামগিরি মহারাজের সমর্থনে শ্রীরামপুর এবং তোপখানার জনসভায় ভাষণ দেন রানে। সেই দুই জনসভাতেই রানে হুমকি দেন, ‘‘ওরা যদি রামগিরি মহারাজের ওপর হামলা করে তাহলে আমরাও মসজিদে ঢুকে মুসলিমদের ধরে ধরে ‘চুন চুন’ করে মারব।’’ তাঁর এমন উসকানিমূলক ভাষণ শুনে উপস্থিত জনগণ তুমুল হর্ষধ্বনি দিয়ে সমর্থন জানায়। রানে সকল হিন্দু সমাজের ডাকা বিক্ষোভসভায় অংশ নিয়ে এমন ভাষণ দেন। উল্লেখ্য, ১৪ আগস্ট নাসিক জেলায় এক ধর্মীয় সভায় সন্ত মহন্ত রামগিরি মহারাজ ইসলাম ধর্ম এবং হজরত মহম্মদকে নিয়ে অত্যন্ত কুরুচিকর ও উসকানিমূলক ভাষণ দিয়েছিলেন।
সন্তের ভাষণের পরিপ্রেক্ষিতে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা দেখা দিতে পারে আঁচ করেই নীতীশ রানে উলটে মুসলিমদেরই হুমকি দিয়েছেন রানে। অবশ্য পুলিশ তাঁর বিরুদ্ধে দু’টি এফআইআর দায়ের করেছে ধর্মীয় উসকানি ছড়ানোর দায়ে। পুলিশের ব্যবস্থা প্রসঙ্গে রানে সোমবার আত্মপক্ষ সমর্থনে দাবি করেন, ‘‘আমি গতকাল শ্রীরামপুর এবং আহিল্যনগরে ভাষণ দিয়েছি। দু’টি সভাতেই আমি সন্ত মহন্ত রামগিরি মহারাজের সমর্থনে বক্তব্য রেখেছি। আমি দেখাতে পারি, অন্ততপক্ষে ১০ জন মুসলিম বুদ্ধিজীবী একই ধরনের মন্তব্য করেছেন যা রামগিরি মহারাজ বলেছিলেন।’’ এখানেই না থেমে রানে আরও দাবি করেন যে, ‘‘যাঁরা মহন্ত রামগিরি মহারাজকে সমর্থন করে বিবৃতি দিয়েছেন কিংবা সমাজমাধ্যমে পোস্ট করেছেন তাঁদের প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয়েছে। গত সপ্তাহে পুনেতে রামগিরি মহারাজের বিরোধিতা করে সভা থেকে ‘মাথা কেটে নেওয়ার’ হুমকিও দেওয়া হয়েছে। তাহলে আমরা যখন হিন্দু সমাজের সপক্ষে একই ধরনের কথা বলি তখন কেন আমাদের প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়? সংবিধান এবং পুলিশকে তাদের মতো কাজ করতে দেওয়া হোক। কেন বার বার হিন্দুদের হুমকির মুখে পড়তে হয়?’’ বস্তুত, মুসলিম বিরোধী উসকানি ছড়ানোর সপক্ষে রানে এমনই দাবি করেছেন।
অবশ্য রামগিরি মহারাজের ওই ভাষণের পরে দেশ জুড়ে মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষজন বিক্ষোভ দেখান। তাঁরা রামগিরি মহারাজকে গ্রেপ্তারেরও দাবি তোলেন। রামগিরির উসকানিমূলক ভাষণের পর পরিস্থিতি ক্রমশ উত্তপ্ত হচ্ছিল। তখনই রামগিরি মহারাজের সমর্থনে পালটা সভা করে উগ্র হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলি। সেইরকমই দু’টি সভায় তীব্র মুসলিম বিদ্বেষ ভাষণ দেন রানে। এমনকি হুঙ্কারও দেন যে মুসলিমদের মারবেন মসজিদে ঢুকে বলেও। আসলে দেশে এবং রাজ্যে উগ্র হিন্দুত্ববাদীদের সরকার থাকার ফলেই রানের মতো বিজেপি বিধায়ক-নেতারা যত্রতত্র বিভেদমূলক এবং বিদ্বেষ-বিষে ভরা ভাষণ দিয়ে যাওয়ার সাহস পচ্ছেন।
যেমন রানে উসকানিমূলক ভাষণ আগেও বহুবার দিয়েছেন। গত এপ্রিল মাসেই তাঁর নামে চারটি উসকানিমূলক বা বিদ্বেষ-ভাষণের অভিযোগ দায়ের হয়েছিল। জানুয়ারি মাসে মুম্বাইয়ের মীরা রোডে একটি সাম্প্রদায়িক হিংসার পরিপ্রেক্ষিতে তীব্র উসকানিমূলক বক্তব্য রেখেছিলেন রানে। তার ভিত্তিতেই এপ্রিলে রানেকে অভিযুক্ত করে পুলিশ। তবে এমনভাবে রানের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছিল পুলিশ যাতে ছাড় পেয়ে যাওয়ার সুযোগ থাকে। তাঁর বিরুদ্ধে ধর্মীয় উসকানি ছড়ানোর অভিযোগ দায়ের করা হয়নি। পুলিশের তরফে দাবি করা হয়, বিজেপি বিধায়ক তাঁর ভাষণে ‘রোহিঙ্গা এবং বাংলাদেশী’ শব্দ ব্যবহার করেছেন। তিনি মোটেই ভারতীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে নিশানা করেননি।
 

Comments :0

Login to leave a comment