মুক্তধারা
বই
ক্রীড়া সাংবাদিকের নেপথ্য কাহিনি
প্রশান্ত পাল
খেলার মাঠ জীবনের একটি অংশ মাত্র। অতি ক্ষুদ্র। অথচ এর থেকে বেশি জীবনের প্রতিফলন আর কোথাও দেখা যায় না। সেই খেলার টানে কতজন কত কিছুই না করেন! মনিকা সেলেসকে ছুরি মারেন গুন্টার পার্শ, মারাদোনাকে ‘ঈশ্বর’ মেনে গির্জা বানান কেউ, সাইকেল নিয়ে ভারত চষে বেরান সুধীর কুমার চৌধুরি...
এই তালিকায় পড়েন সাংবাদিকরাও। খেলার টানে ছুটে ফেরেন এক দেশ থেকে আরেকে। প্রতিবন্ধকতা কী কম! ভাষা, আবহাওয়া, খাবার থেকে মোবাইল চার্জারের প্লাগ পয়েন্ট পর্যন্ত! এক ক্রীড়া সাংবাদিকের বিশ্বকাপ ‘কভার’ করার নেপথ্য কাহিনিই দুই মলাটে বুনে দেওয়া হয়েছে পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা জুড়ে। ‘খেলাচ্ছলে’ নাম রাখা হলেও, খেলার ছলে আদৌ কিছুই করা যায় না। অন্তত ক্রীড়া সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে তো নয়ই। চৌখষ, অনুসন্ধানী হতে হয় প্রতি মুহূর্তে। আর সব কিছুর শেষে থাকে পাঠকদের বাস্তব ঘটনা, প্রিয় চরিত্রের মুখে কথা তুলে দেওয়ার ‘কাজ’। অবিকৃত রেখে। তা ভাষা বোঝা থাক বা না থাক! এই যেমন ব্রাজিলে পেলের চারটি কথা লেখার জন্য, ‘‘...ডিনার হাতে আমরা ঘুর ঘুর করছিলাম সেই সংবাদিকের পেছনে। অবশেষে উঠলেন। আমাদের দিকে তাকিয়ে হাসি এবার চওড়া, ‘প্লেটটা নিয়ে আসি। খেতে খেতে হবে?’ আমরা প্লেট নামিয়ে নোটবই কলম নিয়ে রেডি ততক্ষণে।’’
‘খেলাচ্ছলে’ আসলে সংকলন। রাশিয়া, ব্রাজিল ঘুরে যেমন চ্যাম্পিয়ন্স লিগ, বিশ্বকাপ ‘কভার’ করার অসংখ্য গল্প আছে। তেমনই আছে অলিম্পিকের অনেক খুঁটিনাটি ঘটনা। জর্জ বেস্টের নিঃশেষ হয়ে যাওয়া, আন্দ্রে এসকোবারের করুণ পরিণতি বা গুরু শিষ্যের অজস্র অজানা গল্পকথা। সেই সঙ্গেই এই বই সোচ্চারে প্রতিবাদ করেছে কৃষ্ণাঙ্গদের উপর শ্বেতাঙ্গদের নিপীড়নের। পদে পদে কিভাবে জাতি-বর্ণ বিদ্বেষের শিকার হয়েছেন মাইকেল হোল্ডিং, থিয়েরি অঁরি, মাখায়া এনতিনি বা উসেইন বোল্টরা তার অ্যাখ্যানও ধরা রয়েছে ২১৫ পৃষ্ঠার বইতে। নাম ‘খেলাচ্ছলে’ হলেও অনেক গম্ভীর সমস্যার অবতারণাও করেছেন লেখক।
খেলাচ্ছলে
কাশীনাথ ভট্টাচার্য। উত্তরণ পাবলিশার্স। উত্তর কামারপোল, ডায়মন্ড হারবার। দক্ষিণ ২৪ পরগনা। ৩০০ টাকা
Comments :0