Jamal Sardar

জামাল সর্দারকে ১০ দিনের পুলিশ হেপাজত

রাজ্য

সোনারপুর থানা থেকে ধৃত জামাল সর্দারকে বের করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে আদালতে ।

অনিল কুন্ডু- বারুইপুর

সোনারপুরের প্রতাপনগর অঞ্চলের ত্রাস ধৃত তৃণমূল কর্মী জামাল সর্দারকে ১০ দিন পুলিশ হেপাজতে রাখার নির্দেশ দিল বারুইপুর আদালত। শনিবার বারুইপুর আদালতে পুলিশ তাকে হাজির করলে বিচারক এই নির্দেশ দেন। সোনারপুর থানার পুলিশ ধৃত এই তৃণমূল কর্মীর বিরুদ্ধে খুনের চেষ্টা, শ্লীলতাহানি, প্রতারণা, তোলাবাজির মামলা রুজু করেছে। বাড়িতে সালিশি সভার নামে এক মহিলাকে শিকল দিয়ে বেঁধে নির্মম অত্যাচারের ঘটনা প্রকাশ হতেই নির্যাতিতা ওই মহিলা সোনারপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করায় পুলিশ জামিন অযোগ্য ধারায় ধৃত তৃণমূল কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা করে। এদিকে থানায় অভিযোগ হওয়ায় পরিস্থিতি বেগতিক বুঝে বাড়িতে তালা ঝুলিয়ে পরিবার নিয়ে চম্পট দিয়েছিল জামাল সরদার। অভিযোগের ৮দিন পর পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়। সোনারপুর থানার এক পুলিশ আধিকারিক শনিবার জানিয়েছেন, ভাঙড়ের চন্দনেশ্বর ও সোনারপুরের বর্ডার এলাকায় রাস্তা থেকেই তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। 
জানা গেছে, পুলিশি জেরায় সে জানিয়েছে প্রতাপনগরের সাঙ্গুর মল্লিক পাড়ার বাড়ি ছেড়েছিল মঙ্গলবার দুপুরে। ওই দিন সন্ধ্যায় বাড়ি তালাবন্ধ করে ছেলেকে নিয়ে পাঁচিল টপকে পালায় তার স্ত্রী। পরিবার নিয়ে সে ঘুটিয়ারীশরিফে শ্বশুড়বাড়িতে আশ্রয় নেওয়ার পরিকল্পনা করেছিল। গ্রেপ্তারের আশঙ্কায় সেখানে বাঁশবাগানে রাত কাটিয়েছে। পরের দিন সকাল হতেই মুখে মাস্ক পড়ে সেখান থেকে ট্রেনে বিধাননগর হয়ে বাগুইহাটি এলাকায় গা ঢাকা দিয়েছিল। সেখানেও পুলিশ হানা দিতে পারে এই আশঙ্কায় ডানকুনিতে গিয়েছিল। সেখান থেকে আবার ফিরে আসে বাগুইহাটি এলাকায়। সোনারপুরের মিলনপল্লীতেও শেল্টার নিয়েছিল। সেখান থেকে ভাঙড়ের চন্দনেশ্বর ও সোনারপুর বর্ডার এলাকায় থাকার পরিকল্পনা করে। এদিকে পুলিশ গোপন সূত্রে খবর পেয়ে সোনারপুর – ঘটকপুকুর গামী রাস্তায় হানা দেয়। রাস্তাতে মুখে মাস্ক পড়ে থাকায় তাকে দেখে পুলিশের সন্দেহ হয়। মাস্ক খোলাতেই ধরা পড়ে জামাল সর্দার। ওই পুলিশ আধিকারিক আরো জানান, জামাল সর্দার দূরে পালানোর ছক কষেছিল। স্ত্রী, ছেলেকে শ্বশুড় বাড়িতে রাখার পরিকল্পনা করেছিল। এমনকি মোবাইলের সিমও পরিবর্তন করে সে। কিন্তু শেষ রক্ষা হলো না। মোবাইল ও মুখে মাস্কপড়ার কারণেই ধরা পড়লো প্রতাপনগরের ত্রাস জামাল সর্দার। তাকে গ্রেপ্তারের পর দফায় দফায় পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করে বলে জানা গেছে। গ্রামের মানুষ যেভাবে একের পর এক তার বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে মুখ খোলায় গ্রেপ্তারের আশঙ্কায় সে মাস ছয়েকের জন্য গা ঢাকা দিতে চেয়েছিল। এমনকি পুলিশের কাছে আত্ম সমর্পণেরও কথাও ভেবেছিল। কিন্তু তার আইনজীবী নিষেধ করায় সে আত্মসমর্পণ করেনি। এমনটাই পুলিশি জেরায় সে জানিয়েছে বলে জানা গেছে। 


সালিশি সভার নামে গ্রামবাসীদের উপর নির্মম অত্যাচার, মহিলাদের নির্যাতন, জমি দখল, প্রতারণায় প্রতাপনগর অঞ্চলে নিজেকে রবিন হুড হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করেছিল অত্যাচারী ধৃত এই তৃণমূল কর্মী। কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছে এক সময় গ্রামে সাইকেল চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়া এই জামাল সর্দার। তৃণমূল নেতাদের প্রশ্রয়েই প্রাসাদোপম বাড়ি তৈরি থেকে নিজের বিলাস বহুল জীবনযাপন সবই মানুষের উপর অত্যাচার, জমি দখল, প্রতারণার টাকায় ফুলেফেপে উঠেছে। এমনটাই জানিয়েছেন স্থানীয় গ্রামবাসীরা। 
শনিবার বেলা প্রায় পৌনে ১২ টা নাগাদ সোনারপুর থানা থেকে বের করে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় বারুইপুর আদালতে। থানা থেকে বেরনোর সময় কার্যত হুঁশিয়ারি দিয়ে জামাল সর্দার বলে, ‘‘আমার বিরুদ্ধে সংবাদমাধ্যমে যারা ইন্টারভিউ দিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে মামলা করবো। তাকে চক্রান্ত করে ফাঁসানো হয়েছে বলে দাবি করে ধৃত তৃণমূল কর্মী। তার দুই সাকরেদ মুজিদ খাঁ ও অরবিন্দ সর্দারকেও এদিন আদালতে হাজির করা হয়। 
জামাল সর্দার ধরা পড়লেও এখনো তার সাকরেদরা এলাকায় দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। এমনই অভিযোগ করেছেন স্থানীয় গ্রামবাসীরা। তার বির্রুদ্ধে নির্যাতিতা মহিলার অভিযোগ ছাড়াও জমি দখল, প্রতারণার আরো একটি অভিযোগ জমা পড়েছে সোনারপুর থানায়। এই দুটি অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে। ধৃত সোনারপুরের ত্রাস এই তৃণমূল কর্মীকে নিজেদের হেপাজতে নিয়ে তদন্তের স্বার্থে জেরা করার প্রয়োজন রয়েছে বলে পুলিশের ওই আধিকারিক জানিয়েছেন।

Comments :0

Login to leave a comment