Editorial

নাছোড় আন্দোলনকে সেলাম

সম্পাদকীয় বিভাগ


কলকাতা শহর অনেক আন্দোলন দেখেছে, কিন্তু ন্যায্য প্রাপ্য আদায়ে এমন নাছোড় আন্দোলনকে সেলাম জানাতেই হবে। হাজারতম দিনে পা রাখতে চলেছে শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির প্রতিবাদে যোগ্য চাকরি প্রার্থীদের অবস্থান আন্দোলন। আগামী ৯ ডিসেম্বর শনিবার তাদের অবস্থান আন্দোলন হাজারতম দিনে পদার্পণ করবে। রেড রোড আর মেয়ো রোডের সংযোগস্থলে গান্ধী মূর্তির সামনে তাঁরা অবস্থান করেই চলেছেন। কারণ তাঁদের চাকরি লুট হয়ে গেছে তৃণমূল সরকারের নিয়োগ দুর্নীতিতে। শিক্ষামন্ত্রী সহ তৃণমূলের দাপুটে নেতা মন্ত্রী বিধায়করা জেলে, টাকার পাহাড় বের হচ্ছে তাঁদের বাড়ি থেকে। কিন্তু এখনও প্রাপ্য চাকরি পাননি আন্দোলনকারীরা। তাই লড়াইতেও তাঁরা অনড়। রোদ ঝড় বৃষ্টি উপেক্ষা করে রাস্তায় বসে প্রতিবাদে অবস্থান করছেন যোগ্য প্রার্থীরা। তাঁদের প্রতি সংহতি ও সহমর্মিতা জানাতে বামফ্রন্টের পক্ষ থেকে মিছিল করা হবে শনিবার। ঐদিন দুপুরে ধর্মতলায় লেনিন মূর্তির সামনে জমায়েত করে মিছিল গান্ধী মূর্তির সামনে গিয়ে শেষ হবে এবং সেখানে সংক্ষিপ্ত সভাও হবে। উল্লেখ্য, বামপন্থীরা নেতারা এই দীর্ঘ আন্দোলনকে প্রথম থেকেই নানাভাবে সমর্থন জানিয়েছেন, আন্দোলনকারীদের পাশে থেকেছেন। শারদোৎসব সহ নানা আনন্দ অনুষ্ঠানের দিনেও সিপিআই(এম) নেতৃবৃন্দ তাঁদের পাশে গিয়ে বসেছেন। 
কিন্তু প্রশ্ন হলো, কয়েক হাজার যুবক-যুবতীকে এক হাজার দিন ধরে অবস্থান করতে হচ্ছে কেন? সবাই জেনে গেছে তাঁদের চাকরি চুরি হয়েছে, আদালতের নির্দেশে সিবিআই তদন্তে একথা এখন প্রমাণিতও হয়ে গেছে, শিক্ষামন্ত্রী ও শিক্ষাকর্তা সহ শাসকদলের বড় বড় নেতা, বিধায়ক জেলে বসে দিন কাটাচ্ছেন। তবু রাজ্য সরকার অবস্থানকারীদের দাবি মেটাতে পদক্ষেপ নিচ্ছে না কেন? হক আদায়ে একদল বঞ্চিত মানুষকে কেন দিনের পর দিন রাস্তার ধারে বসে থাকার কষ্ট করতে হবে। এই আন্দোলনকারীদের প্রাপ্য দেওয়ার দায়িত্ব যে সরকারের তারা প্রাপ্য মেটানোর বদলে নানা কৌশল করেছে। কখনো পুলিশ দিয়ে আন্দোলন তুলে দেওয়ার চেষ্টা করেছে, কিন্তু আদালতের হস্তক্ষেপের জন্য ব্যর্থ হয়েছে। কখনো মুখ্যমন্ত্রী নিজে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে যোগ্যদের চাকরি দেওয়া হবে। কিন্তু কাজ এতটুকুও এগোয়নি। বরং মুখ্যমন্ত্রী দায় আদালতের দিকে ঠেলার চেষ্টা করে বলেছেন, আদালতে মামলা চলার জন্যই চাকরি দেওয়া যাচ্ছে না। এই অপপ্রচারকে সোজাসুজি আদালতই নস্যাৎ করে দিয়েছে। 
প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের টেট থেকে শুরু করে এসএসসি, কয়েক হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি হয়েছে রাজ্যের শিক্ষাক্ষেত্রে। শুধু তৃণমূলের নেতামন্ত্রীদের পরিবারের সদস্যরাই বেআইনিভাবে শিক্ষকতার পদে নিযুক্ত হয়েছেন এমন নয়, তৃণমূলের নেতাদের লক্ষ লক্ষ টাকা দিয়ে স্কুলে চাকরি পেয়েছেন সে সংখ্যাও অনেক। নিয়োগ দুর্নীতি আসলে এরাজ্যের শিক্ষাক্ষেত্রকে হত্যা করার প্রক্রিয়ার একটি অংশ। এই প্রক্রিয়ায় তৃণমূল নেতাদের পকেট ভরাতে ব্যবহৃত হয়েছে, যে বিপুল টাকা তৃণমূল নেতা মন্ত্রীদের ঘর থেকে উদ্ধার হচ্ছে তা সেই বেআইনি লেনদেনের হিমশৈল মাত্র। এই দুর্নীতির হাত ধরে ঘটেছে রাজ্যের শিক্ষাক্ষেত্রের দুর্নাম। কেন্দ্রের শাসকদল মুখে যতই এরাজ্যের শাসকদলের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ করুক, তারাও শিক্ষাক্ষেত্র বাঁচাতে আগ্রহী নয়। নয়া শিক্ষানীতির নামে সরকারি শিক্ষা পরিকাঠামোকে শিকেয় তুলে বেসরকারি পুঁজির সামনে শিক্ষা ব্যবসার সুযোগকে উন্মুক্ত করে তোলাই তাদের উদ্দেশ্য। তৃণমূলের শিক্ষা দুর্নীতি সেই পদক্ষেপকেই সহায়তা করছে। দুই শাসকদলের কোপে সাধারণের জন্য শিক্ষার সুযোগ  বলে কোনও কিছু থাকবে না যা গুণমানসম্পন্ন বলে মানুষের ভরসাযোগ্য ও বিশ্বাসযোগ্য হতে পারে।

Comments :0

Login to leave a comment