Black money seized in Kolkata

এবার কয়লাকাণ্ডে, ফের কলকাতায় উদ্ধার টাকার স্তূপ

কলকাতা

 শহর কলকাতার বুকে ফের নগদ টাকার স্তূপ উদ্ধার। 
ফের ইডি’র তল্লাশি অভিযান। তবে শিক্ষক নিয়োগকাণ্ডে নয়, এবার কয়লা পাচারকাণ্ডের তদন্তে দক্ষিণ কলকাতার বালিগঞ্জে এক নির্মাণকারী সংস্থার অফিসে ঝটিকা তল্লাশিতে উদ্ধার নগদ ১ কোটি ২০ লক্ষ টাকা। তবে রাত পর্যন্ত টাকা গোনার কাজ চলছে। রাত নটা পর্যন্ত সেই টাকার পরিমাণ জানা গেছে ১ কোটির বেশি। থরে থরে সজানো সেই টাকার বান্ডিল। টাকার পরিমাণ আরও বাড়তে পারে বলে জানা গেছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ইডি সূত্রে।
স্বাভাবিকভাবেই ফিরে এসেছে সেই নিয়োগকাণ্ডে ধৃত পার্থ চ্যাটার্জির ঘনিষ্ঠ বান্ধবী অর্পিতা মুখার্জির দুটি ফ্ল্যাট থেকে নগদে ৪৯কোটি ৮০ লক্ষ উদ্ধারের সেই দৃশ্য! গত ২২জুলাই টালিগঞ্জের হরিদেবপুরে অর্পিতা মুখার্জির ফ্ল্যাট থেকে ইডি’র তল্লাশি অভিযানে উদ্ধার হয় নগদ ২১ কোটি ৯০ লক্ষ টাকা। তার পাঁচদিন পরেই ২৭ জুলাই বেলঘরিয়ার আবাসনে পার্থ চ্যাটার্জির ঘনিষ্ঠ বান্ধবীর ফ্ল্যাট থেকে নগদ উদ্ধার হয়েছিল ২৭কোটি ৯০ লক্ষ টাকা। তারপর সেপ্টেম্বর মাসেই চিট ফান্ড হালিশহর পৌরসভার তৃণমূলী চেয়ারম্যান রাজু সাহানীর নিউটাউনের ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার হয় নগদ ৮০ লক্ষ টাকা। ঐমাসেই মেটিয়াবুরুজ থানা থেকে ঢিল ছোঁড়া দূরত্বে রাজ্যের এক দাপুটে মন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ পরিবহণ ব্যবসায়ীর বাড়িতে ইডি’র তল্লাশি অভিযানে খাটের তলা থেকে উদ্ধার হয় ১৮কোটির বেশি নগদ টাকা। তারপর হাওয়ার শিবপুর থেকেও উদ্ধার হয় বিপুল পরিমাণ নগদ টাকা। এরপর গত মাসে মুর্শিদাবাদে মমতা ব্যানার্জির মন্ত্রীসভার প্রাক্তন সদস্য, তৃণমূলের বর্তমান বিধায়ক জাকির হোসেনের বাড়ি, অফিস, চালকল, গুদাম থেকে ১১ কোটি টাকার বেশি নগদ উদ্ধার হয়।
নগদ কালো টাকা উদ্ধারের সেই কুৎসিত দৃশ্য ফের এদিন দেখা গেল শহরে। বুধবার সন্ধ্যা সাতটা নাগাদ বালিগঞ্জের গড়চায় ৫এ, আর্ল স্ট্রিট ঠিকানায় গজরাজ গ্রুপের সংস্থার অফিসে হানা দেয় ইডি’র ১০-১৫ জনের তদন্তকারী আধিকারিকদের একটি দল। দিল্লি থেকেও ইডি’র আধিকারিকরা কলকাতায় আসেন এদিনই। কলকাতার আধিকারিকদের সঙ্গে তাঁরাও যোগ দেন এই তল্লাশি অভিযানে। 
বালিগঞ্জের ঠিকানায় এটি একটি নির্মাণকারী সংস্থা। আমদানি-রপ্তানির কারবারও রয়েছে। বালিগঞ্জ ছাড়াও দক্ষিণ কলকাতার একাধিক ঠিকানায় এই সংস্থার অফিস রয়েছে। বালিগঞ্জের ঠিকানার অফিসে ঢুকে তল্লাশি চালাতেই একটি ব্যাগে মেলে বান্ডিল বান্ডিল নগদ টাকা। আনা হয় টাকা গোনার মেশিন। রাত নটা পর্যন্ত সেই টাকার পরিমাণ জানা যায় ১কোটি ২০ লক্ষ। যদিও ইডি’র তরফে সরকারিভাবে টাকার পরিমাণ রাত পর্যন্ত জানানো হয়নি। রাত পৌনে দশটা নাগাদ টাকা নিয়ে যাওয়ার গাড়িও এসে পৌঁছায় ঐ সংস্থার অফিসের বাইরে। 
কিন্তু কেন এই তল্লাশি ? তদন্তকারী সংস্থার একটি সূত্রে জানা গেছে, বেশ কিছুদিন ধরেই এই সংস্থার আর্থিক লেনদেনে নজর রাখা হচ্ছিল। কয়লা পাচারকাণ্ডে মানি লন্ডারিংয়ের তদন্তে নেমে ইডি’র আধিকারিকরা দেখতে পান কলকাতা শহরে একাধিক শিখণ্ডী এবং পরিচিত কিছু বড় সংস্থার মাধ্যমে কয়লার টাকা লেনদেন হয়েছে। একাধিক সংস্থায় কয়লা পাচারের টাকা ঢুকেছে, বিনিয়োগও হয়েছে। যা আসলে কালো টাকা সাদা করারই চেনা কৌশল। তদন্তকারী আধিকারিকদের একটি সূত্রের দাবি তাঁরা একাধিক সংস্থার খোঁজ পেয়েছেন, যাদের মাধ্যমে কালো টাকা সাদা করার কাজ হয়েছে। তার মধ্যেই গজরাজ গ্রুপের এই সংস্থা রয়েছে বলে ইডি সূত্রের খবর।


কয়লা মাফিয়া অনুপ মাঝি ওরফে লালার টাকা বিভিন্ন সংস্থায় ঢুকেছিল। সেই সূত্রেই তদন্তে ইতিমধ্যে এসেছে একাধিক সংস্থার নামও। ইডি’র দাবি নগদ টাকা উদ্ধারের জন্য তল্লাশি ছিল না। এই সংস্থায় ঢুকেছিল কয়লা পাচারের টাকা। সেখান থেকে আবার টাকা একাধিক অন্য সংস্থায় পাড়ি দিয়েছে। কয়েকজন প্রভাবশালীও রয়েছে এই চক্রে। সেই সূত্রেই তল্লাশি চালাতে গিয়ে উদ্ধার হয় এই নগদ টাকার স্তূপ।
এদিকে তদন্তকারী সংস্থার একটি নির্দিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ‘লিপস অ্যান্ড বাউন্ডস প্রাইভেট লিমিটেড’ এবং ‘লিপস অ্যান্ড বাউন্ড ম্যানেজমেন্ট সার্ভিসেস এলএলপি’— এই সংস্থায় এর আগেই বেশ কিছু সন্দেহজনক লেনদেনের হদিশ মিলেছিল। উল্লেখ্য, এই লিপস অ্যান্ড বাউন্ড অভিষেক ব্যানার্জির পারিবারিক সংস্থা। একসময় অভিষেক ব্যানার্জি এই সংস্থার কর্ণধার ছিলেন। ২০১৪ সালে লোকসভা ভোটের আগেই বোর্ড অব ডিরেক্টরস থেকে পদত্যাগ করেন। জানা গেছে একটি নির্মাণকারী সংস্থার মাধ্যমে এই দুই সংস্থায় টাকা ঢুকেছিল। সেই সংস্থার সঙ্গে আবার সরাসরি যোগ ছিল কয়লা মাফিয়া অনুপ মাঝি ওরফে লালার। অর্থাৎ কয়লা পাচারের কারবারের টাকাই ঢুকেছিল ঘুরপথে, সেই টাকার পরিমাণ ছিল  ৪ কোটি ৩৭ লক্ষ।
 

Comments :0

Login to leave a comment