বই
প্রকৃতি এবং সুস্থিত জীবনের ইতিনেতি ও তার মায়াঘোর
ভবানীশংকর চক্রবর্তী
কবি দ্রষ্টা ।তাঁর দেখা অতীত,বর্তমান ও ভবিষ্যের ঘটন- অঘটনের দৃশ্য ভেসে ওঠে তাঁর মানসচোখে।সেইসব দৃশ্যপটের নান্দনিকতা কবিকে শান্তি দেয়।আবার তাদের নেতিবাচকতা কবিকে বিষণ্ণ ও অশান্ত করে। এই বিষাদ কবিতার ভেতর দিয়ে তাঁকে নিয়ে চলে আলোকতীর্থের সন্ধানে।তার জন্য যে শব্দ কবিতায় ব্যবহার করেন, তা সব পাঠকের পছন্দ নাও হতে পারে।কিন্তু তাঁর দৃষ্টি ও দৃষ্ট দৃশ্যপট তাতে মিথ্যে হয়ে যায় না।কোনো কাব্যগ্রন্থের শিরোনামহীন মুখবন্ধে যখন কবিতার ভাষায় কবি বলেন-
আজ আর গান নয় হাওয়া লেগে ভেসে যায় জাতকের ভাষা
ভরে নিই নায়ে তার ভেসে যাওয়া পাতাতখন মনে হয় ,সমগ্র কাব্যগ্রন্থের অন্তস্বর শুনতে পান পাঠক।কবি শঙ্খ অধিকারী তাঁর ' এলোমেলো পাণ্ডুলিপি ' কাব্যগ্রন্থে এভাবেই ভেসে যাওয়া 'জাতকের ভাষা 'কে ভরে নিয়েছেন দুই মলাটের ' নায়ে ' ।
শঙ্খ-র কবিতায় মগ্নতা বেশি।বলা যেতে পারে কবি মগ্নতাবিলাসী।সে মগ্নতা প্রকৃতি ও সুস্থিত জীবনের ভাবনা ও তার মায়াঘোরে ।বোধহয় তাই বারবার তাঁর কবিতায় ব্যবহৃত হয়েছে নারী,নদী,চাঁদ,জোছনা,রাত্রি,ফুল,পরাগ,হলুদ ,ভ্রমর,কুঞ্জবন,
ঝরাপাতা,আকাশ,
নক্ষত্র, পৃথিবী ইত্যাকার নৈসর্গিক নামশব্দ।আবার সে মগ্নতা যখন নেতি,হতাশা,বিষাদ,
অবক্ষয়,অমানবিকতায়,তখন তাঁর নম্র অথচ তীব্র উচ্চারণ পাঠককে নিয়ে যায় এক বিশ্বস্ত এবং অন্যরকম অনুভবের দিকে।সেই নম্র উচ্চারণের উচ্চকিত বিষাদ তখন অন্ধকারে পথ খোঁজে।আর অশ্রুত সুরে বাজতে থাকে পাঠকের হৃদয়ে।যেমন __
এদেশে বৃষ্টি হবে না আরও এক হাজার শ্রাবণ
মৃত নদী হেঁটে হেঁটে পার হবে মায়ারূপী শৃগালের দল
(অচল, পৃ৩৩)
কিংবা-
পথভ্রষ্ট নক্ষত্ররা খসে পড়ে কক্ষপথ থেকে
এখন আমাকে সেই রাত শুধু খোঁজ(খোঁজ নেয় রাত্রি,পৃ৫৫)।
খুব মন দিয়ে কবিতাগুলি পড়লে ভালোবাসা ও ভালো লাগার 'এলোমেলো পাণ্ডুলিপি 'র পাঠোদ্ধার করার আনন্দ পাবেন।
সৌজন্য চক্রবর্তীর প্রচ্ছদ সুন্দর।বইটি সুমুদ্রিত কিন্তু প্রমাদবর্জিত হলে ভালো হত খুব।কাগজ চলনসই।বাঁধাইও বেশ ভালো।এক কথায় কবিতারসিক পাঠকদের সংগ্রহযোগ্য।
এলোমেলো পাণ্ডুলিপি
শঙ্খ অধিকারী
মলয় প্রকাশনী
রমানাথ মজুমদার স্ট্রিটস্থ
কলকাতা - ৭০০০০৯
মূল্য -আশি টাকা
Comments :0