বই
সবুজ-মেরুন গ্যালারি ও মাঠের গল্প
ঋদ্ধি রিত
শোনা যায় ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের সময় ভারতীয় জাতীয়তাবাদীদের
বিদ্রোহ ভারতীয়দের কল্পনাশক্তিকে জাগরিত করে তোলা এবং আন্দোলনকে সাহায্য
করার জন্য উত্তর কলকাতার মোহনবাগান অঞ্চলের মিত্র ও সেন পরিবারের সাহায্যে
ভূপেন্দ্রনাথ বসু ১৮৮৯ সালের ১৫ আগস্ট ‘মোহনবাগান স্পোর্টিং ক্লাব’ প্রতিষ্ঠা
করেন। কথিত আছে, মোহনবাগান ভিলায় ইডেন হিন্দু হস্টেলের বিরুদ্ধে এই দল প্রথম
খেলেছিল। প্রথম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর ঠিক আগে অধ্যাপক এফ. জে. রো জিজ্ঞাসা
করেছিলেন যে, এই দল কোনও রাইফেল শ্যুটিং বা আংলিং বা এই জাতীয় খেলার সঙ্গে
যুক্ত কিনা। মোহনবাগান এই জাতীয় খেলার সঙ্গে যুক্ত নয় জেনে তিনি পরামর্শ
দিয়েছিলেন দলের নাম পালটে ‘মোহনবাগান অ্যাথলেটিক ক্লাব’ রাখতে। ক্লাবের
কর্মকর্তারা এই পরামর্শ মেনে নিয়ে ক্লাবের নাম পরিবর্তন করেন।
শতাব্দী প্রাচীন এই ক্লাব যেমন বহু লেখকের কলমে স্থান করে নিয়েছে, তেমনই
সাংবাদিকদের করা শিরোনামের কেন্দ্রেও থেকেছে। আসলে, মোহনবাগান মানেই একটা
নস্টালজিয়া। যুগ-কাল-ধর্ম পেরিয়ে, প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে মোহনবাগান বাংলা ও
বাঙালি এক চিরন্তন সত্যি, সুতীব্র আবেগ, পাগলপারা ভালোবাসা। প্রথম ভারতীয়
ফুটবলের হিসাবে রাষ্ট্রপতির হাত থেকে পদ্মশ্রী গ্রহণ করেছেন গোষ্ঠ পাল। মাত্র
এক বছর আগে দলে এলে, ১৯১১ অমর একাদশে থেকে যেত গোষ্ঠ পালের নাম।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, নগেন্দ্রপ্রসাদ সর্বাধিকারী, ১৯১১ সালের শিল্ড জয় থেকে '৭৫
এর পাঁচ গোলের নেপথ্যের কাহিনি—এইরকম নানা তথ্যে ভরা অর্ঘ্য বন্দ্যোপাধ্যায়
এবং রূপক বসুর বই ‘মোহনবাগান, সবুজ ঘাসের মেরুন গল্প’।
বইয়ে উঠে এসেছে বাঙালির প্রিয় উত্তম কুমারের মোহনবাগান প্রেমের বিষয়ও।
এমনকি রাজনৈতিক পটপরিবর্তন হোক বা রাজ্য রাজনীতি, এমনকি মাঝেমধ্যে
কেন্দ্রীয় রাজনীতির বিপরীত শিবিরের লোককেও এক জায়গায় এনে ফেলেছে এই ক্লাব।
বাংলার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু ছিলেন মোহনবাগান সমর্থক। শোনা যায়,
জ্যোতি বসুও মোহনবাগানের খবর রাখতেন ভালোই। ভারতবর্ষের সংসদের অধ্যক্ষ বা
কলকাতার প্রাক্তন মহানাগরিক সুব্রত মুখোপাধ্যায়, কার সাথে যোগ ছিল না এই
ক্লাবের! খোদ চুনি গোস্বামী বলেছিলেন, ‘সোমনাথদা সব কাজ ফেলে ছুটে আসতেন খেলা
দেখতে। গ্যালারি থেকে উৎসাহ দিতেন।’ মোহনবাগান শুধু তো একটা ক্লাব নয়, বাংলা
ও বাঙালির নিঃশ্বাসে মিশে যাওয়া এক বিশ্বাস। চুনি গোস্বামী, বদ্রু ব্যানার্জি, সুব্রত ভট্টাচার্য,
বাইচুং ভুটিয়া, সুনীল ছেত্রী থেকে চিমা ওকেরি, সানি নর্ডি, ব্যারেটো
কখনো কখনো সবাই গায়ে দিয়েছে সবুজ -মেরুন জার্সি।
মোহনবাগান : সবুজ ঘাসের মেরুন গল্প
অর্ঘ্য বন্দ্যোপাধ্যায় ও রূপক বসু। শালিধান। ৩৫০ টাকা।
Comments :0