কৃষি নির্ভর জেলা নদীয়া। বামফ্রন্টের সময়ে সমস্ত কৃষক সমাজের উন্নতির লক্ষ্যে, একের পর এক উন্নয়নমূলক ভূমিকা পালন করেছিল। সেচ ব্যবস্থার উন্নতি, কৃষি চাষের বৈচিত্রকরণ, কৃষি সমবায় গুলোর মধ্যে দিয়ে কৃষক সমাজকে অর্থনৈতিকভাবে সহায়তা প্রদান, জেলা পরিষদ, পঞ্চায়েত সমিতির মাধ্যমে সরকারি সহায়তার মধ্য দিয়ে নতুন নতুন লাভজনক চাষে কৃষকদের উৎসাহিত করার প্রকল্প সহ বহুবিধ উন্নয়নের মধ্যে দিয়ে কৃষক সমাজ সহায়ক ভূমিকা পালনের মধ্যে দিয়ে সরকার পরিচালিত হতো। কিন্তু পরিবর্তনের জমানায় দেখা যাচ্ছে সরকারি উদাসীনতা। নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধের মধ্যে দিয়ে একের পর এক ডিপটিউবওয়েল বন্ধ প্রায় অবস্থায় চলে যাচ্ছে। সমবায় গুলোতে নির্বাচন বন্ধ করে দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত করেছে। নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের মতো, কৃষি উপকরণের দামও লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। বাড়ছে বিদ্যুতের দামও। অথচ কৃষক ফসলের ন্যায্য দাম পাচ্ছেন না।
বুধবার কৃষ্ণনগরে প্রতিবাদ মিছিল এবং অবস্থান বিক্ষোভ কর্মসূচিতে কথাগুলি বলেন, গণ আন্দোলনের জেলা সম্পাদক তথা কৃষক সভার সাধারণ সম্পাদক মেঘলাল শেখ। সভা থেকে মেঘলাল শেখ, রমা বিশ্বাসের নেতৃত্বে ৪ জনের প্রতিনিধি দল জেলা শাসকের কাছে বাইশ দফা দাবিতে স্মারকললিপি তুলে দেন। সভা থেকে ২০ এপ্রিল ব্রিগেড সমাবেশকে সফল করার জোরালো বার্তা ধ্বনিত হয়। ব্রিগেড সমাবেশকে সর্বাত্মক সফল করার আহবানে আগামী ১২, ১৬ ও ১৭ এপ্রিল জেলার তিনটি কেন্দ্রীয় পদযাত্রাতে সর্বস্তরের মানুষকে অংশ নেবার বার্তাও জানানো হয়েছে।
এদিন সারা ভারত কৃষক সভা, সিআইটিইউ, সারা ভারত খেতমজুর ইউনিয়ন, পশ্চিমবঙ্গ বস্তি উন্নয়ন সমিতির নদীয়া জেলা কমিটির যৌথ উদ্যোগ কৃষ্ণনগরে প্রতিবাদ মিছিল এবং অবস্থান বিক্ষোভ কর্মসূচি হয়েছে। অবস্থান বিক্ষোভ সভা পরিচালনা করেন অলকেশ দাস, চঞ্চল কর, নসরতোল্লা সেখ, সমর দত্ত প্রমুখ।
এদিন কৃষ্ণনগর পাবলিক লাইব্রেরি মাঠে জমায়েত হয়ে এক দৃপ্ত মিছিল করে মিছিলে অংশগ্রহণকারীরা কালেকটারি মোড়ে জেলাশাসক দপ্তরের সামনে এসে অবস্থান বিক্ষোভ কর্মসূচিতে অংশ নেন। বিক্ষেভ সভায় অলকেশ দাস বলেন, আগামীতে প্রতিটি ব্লকে প্রতিটি পঞ্চায়েতে দাবি পূরণের লক্ষ্যে ঐক্যবদ্ধ মানুষের আন্দোলন তীব্র থেকে তীব্রতর হবে। রাজ্যের সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পকে সুনিশ্চিত করা, সমকাজে সমবেতনর দাবিতেও লড়াই সংগ্রাম তীব্র হবে।
বিক্ষোভ সভায় সিআইটিইউ নদীয়া জেলার সাধারণ সম্পাদক এস এম সাদি বলেন, কেন্দ্রের বিজেপি ও রাজ্যের তৃণমূল গৃহীত নীতিতে সমাজের সর্ব অংশের মানুষের মতো গভীরভাবে আক্রান্ত শ্রমজীবী মানুষ। কোনও শ্রমিকের ন্যূনতম মজুরি সুনিশ্চিত নয়। স্থায়ী কাজের জায়গায়ও ঠিকা ও চুক্তি ভিত্তিক শ্রমিক নিয়োগ করা হচ্ছে। মহিলা শ্রমিকদের প্রাপ্য মজুরি প্রদানেও বৈষম্য। কল্যাণী শিল্পাঞ্চল ধুঁকছে। বন্ধ হয়ে যাচ্ছে একের পর এক কারখানা। পলাশীর সুগার মিল বন্ধ। লুট হয়ে যাচ্ছে সুগার মিলে হাজার হাজার বিঘা জমি, মাটি। আক্রান্ত তাঁত শিল্পের ওপরে নির্ভরশীল হাজার হাজার শ্রমিকের জীবন জীবিকা। একদিকে নেতা-মন্ত্রীদের প্রত্যক্ষ পরোক্ষ মদতে লুট তোলাবাজির কারবার। অন্যদিকে একাংশের পুলিশ প্রশাসন পথে নেমে তোলাবাজির চালাচ্ছে।
জেলা খেত মজুর ইউনিয়নের নেতা সুকুমার চক্রবর্তী বলেন, কৃষি আক্রান্ত হলে খেত মজুর সমাজের কখনও উন্নতি হতে পারে না। দেশ ও রাজ্যে দুই শাসকের নীতিতে ক্রমশ কৃষির থেকে মানুষকে সরে যেতে হচ্ছে। বাড়ছে অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিকের সংখ্যা। রেগা প্রকল্প বন্ধ। কাজ করেও মজুরি বকেয়া, এমন শ্রমিকের তালিকাও পঞ্চায়েতে পঞ্চায়েতে ভুরি ভুরি। রেগা, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, গ্রামের উন্নয়ন, সমাজ কল্যাণ প্রকল্পে বরাদ্দ কমছে। ভুয়ো জব কার্ডের মধ্যে দিয়ে লুট হয়েছে রেগা প্রকল্পের টাকা।
বস্তি উন্নয়ন সমিতির জেলা সম্পাদক সৌমেন মাহাতো বলেন, সমাজের সর্বস্তরের গরিব মানুষের মতো জেলার বিভিন্ন প্রান্তে থাকা বস্তিবাসীর জীবনও বিপর্যস্ত। জীবিকার সমস্যায় আক্রান্ত। বস্তিবাসীর জীবনমানের উন্নয়নের জন্য, শিক্ষার প্রসারের জন্য, বাল্যবিবাহ রোধে ধারাবাহিক ভূমিকা পালনের ক্ষেত্রে কোন সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নেই শাসক সরকারের।
Comments :0