ED HIGH COURT

অভিষেককে আড়াল করে রিপোর্ট, আদালতে ভর্ৎসনার মুখে ইডি

রাজ্য কলকাতা

লিপস অ্যান্ড বাউন্ডসের আর্থিক লেনদেন সংক্রান্ত তথ্য আড়াল করার চেষ্টা করছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। সোমবার এনিয়ে আদালতের তীব্র ভর্ৎসনার মুখে পড়েন ইডি’র আধিকারিকরা। বিচারপতি অমৃতা সিনহা বলেন, আপনারা (ইডি) কি তথ্য আড়াল করার চেষ্টা করছেন? একজন সাংসদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট নেই, তাঁর বাড়ির ঠিকানা নেই। তাহলে কীসের তদন্ত হচ্ছে? বিচারপতি বলেন, আপনাদের দেওয়া রিপোর্টে অভিষেকের নামে তিনটি বিমা আছে বলে জানানো হয়েছে। এই রিপোর্ট কি মেনে নেওয়া যায়? আদালতের স্পষ্ট নির্দেশ ছিল, লিপস অ্যান্ড বাউন্ডসের সিইও এবং ডিরেক্টরদের সম্পত্তির হিসাব জমা দেবে ইডি। আদালতের নির্দেশের পর যে রিপোর্ট জমা পড়েছে তা দেখে তদন্তের গতিপ্রকৃতি নিয়ে সন্দেহ তৈরি হচ্ছে। সাংসদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট না থাকলে তাঁর বেতন কীভাবে হচ্ছে? 

শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলার শুনানি চলছে বিচারপতি অমৃতা সিনহার এজলাসে। এই মামলাতেই গ্রেপ্তার হয়েছে লিপস অ্যান্ড বাউন্ডসের একসময়ের ডিরেক্টর সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র। এই সংস্থার সিইও স্বয়ং তৃণমূল সাংসদ অভিষেক ব্যানার্জি। তাঁর পরিবারের লোকজনই এই সংস্থার ডিরেক্টরের পদে ছিলেন। সোমবার আদালতে প্রথমার্ধেই ইডি লিপস অ্যান্ড বাউন্ডস সংক্রান্ত রিপোর্টের ওপর শুনানি ছিল। এদিন বিচারপতি সিনহা শুনানি বন্ধ রেখে বিকালে ইডি অফিসারদের আদালতে হাজির থাকার নির্দেশ দেন। বিকালে ইডি’র অফিসার মিথিলেশ মিশ্র সহ দুজন অফিসার আদালতে হাজির হয়েছিলেন। বিচারপতি সিনহা পুনরায় এই মামলার শুনানি গ্রহণ শুরু করেন। তিনি ইডি’র অফিসারকে সরাসরি প্রশ্ন করেন, লিপস অ্যান্ড বাউন্ডসের সিইও’র সম্পত্তি সংক্রান্ত যে রিপোর্ট জমা পড়েছে সেখানে তাঁর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের কোনও উল্লেখ নেই। সিইও ব্যাঙ্ক আকাউন্ট না থাকলে কোম্পানি চালান কী করে? এই সংস্থাতে কীভাবে টাকা আসে? কীভাবে ব্যবসা হয়? আয়ের উৎস কী? এসব কিছুই এই রিপোর্টে উল্লেখ নেই। তাহলে কীসের তদন্ত হচ্ছে?  শুধু তিনটি বিমা আছে বলে উল্লেখ রয়েছে রিপোর্টে। এসব তদন্তের মানে কী? তাঁর বাড়ির ঠিকানা কী? ১৮৮এ হরিশ চ্যাটার্জি স্ট্রিটের বাড়িতে কে থাকেন? সেকথারও কোনও উল্লেখ নেই। এই সংস্থার ডিরেক্টরদের সম্পত্তির মধ্যে কারুর নামে ওই বাড়িটি আছে কিনা তাও রিপোর্টে উল্লেখ নেই। ফলে এই রিপোর্টে তদন্তের কোনও ছবি পাওয়া যাচ্ছে না। একবারে দায়সারা তদন্ত এবং তার রিপোর্ট।

এদিন ইডি’র রিপোর্টের ওপর বিচারপতি অমৃতা সিনহার পর্যবেক্ষণের পর আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন, কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা নিয়োগ দুর্নীতির তদন্ত অত্যন্ত দায়সারাভাবে করছে। ইডি যে রিপোর্ট সোমবার জমা দিয়েছে সেখানে অপরাধীদের আড়াল করার চেষ্টা হয়েছে। তদন্তের নামে ছেলেখেলা হচ্ছে। এদিন বিচারপতির প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেননি ইডি’র অফিসাররা। অভিষেক ব্যানার্জিকে ডেকে পাঠিয়ে ৯ ঘণ্টা ধরে যে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল, তার কোনও প্রতিফলন ইডি’র জমা দেওয়া রিপোর্টে নেই। সেই কারণেই আদালত মামলাটি পুনরায় শুনানির জন্য রেখেছে। 

স্কুলে নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় লিপস অ্যান্ড বাউন্ডসের নাম অনেক আগেই সামনে এসেছে। গত ১৪সেপ্টেম্বর আদালত এই সংস্থা সম্পর্কে বিস্তারিত রিপোর্ট আদালত দেখতে চেয়েছিল। এই সংস্থা কবে সরকারি নথিভুক্ত হয়েছিল বা রেজিস্ট্রেশন কবে হয়েছিল তাও আদালত জানতে চেয়েছিল। ইডি যে রিপোর্ট জমা দিয়েছে সেখানে আদালতের প্রশ্নের উত্তর মেলেনি। এই সময়ের মধ্যেই লিপস অ্যান্ড বাউন্ডসের অফিসের ঠিকানা পরিবর্তন হয়েছে। অফিসের ঠিকানা কেন পরিবর্তন হয়েছে সেকথা ইডি আদালতকে জানাতে পারেনি।  এই সংস্থার কাজ কী ছিল তা এখনও পরিষ্কার করেনি ইডি। লিপস অ্যান্ড বাউন্ডসের অফিসে তল্লাসি চালিয়ে ইডি যে সমস্ত নথি উদ্ধার করেছে তা দেখেই তদন্তকারী সংস্থা বলেছে এই সংস্থা নিয়োগ দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত। আগেই এই সংস্থার কর্মচারী সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রকে (কালীঘাটের কাকু) গ্রেপ্তার করেছিল ইডি। তিনি এখন জেলে রয়েছেন। এর মধ্যেই কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রের একটি পৃথক কোম্পানির সঙ্গে লিপস অ্যান্ড বাউন্ডসের যোগসূত্র খুঁজে পেয়েছে। কালীঘাটের কাকুর এই আলাদা কোম্পানির নাম এসডি এন্টারপ্রাইজ। আদালতকে জানানো হয়েছে এই সংস্থার সঙ্গে লিপস অ্যান্ড বাউন্ডসের আর্থিক লেনদেন হয়েছে।  

প্রসঙ্গত, এই সংস্থার এক সময় ডিরেক্টর ছিলেন অভিষেক ব্যালনার্জির স্ত্রী রুজিরা ব্যানার্জি। এই সংস্থার মাথায় ছিলেন অভিষেক ব্যানার্জির পরিবারের লোকজন। তাঁর বাবা এবং মাকে ডিরেক্টরের পদে বসানো হয়েছিল। সংস্থার অন্যান্য আধিকারিকদের হদিশ তদন্তকারী সংস্থার হাতে এসেছে।  ইডি আদালতে সংস্থার ডিরেক্টরদের সম্পত্তির হিসাবও খুব আবছাভাবে রিপোর্টে রেখেছে। এদিন বিচারপতি ইডি’র অফিসারদের সরাসরি প্রশ্ন করেন তদন্তে গতি আনতে অসুবিধা কোথায় হচ্ছে? আপনারদের কি আরও বেশি অফিসারের প্রয়োজন? বিচারপতির এই প্রশ্নের উত্তরে ইডি’র অফিসার মিথিলেশ মিশ্র বলেন, আরও অফিসারের প্রয়োজন আছে। তবে আমাদের একটু সময় দিলে ভালো হয়। আদালত কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাকে বলেছে মামলাটি পুনরায় ২৯সেপ্টেম্বর শুনানির জন্য রাখা হচ্ছে। এর মধ্যে রিপোর্টের জন্য তথ্য জোগাড় করুন।

Comments :0

Login to leave a comment