Ssc corruption cbi report

নিয়োগ দুর্নীতির আরেক রিপোর্ট পেশ সিবিআই’র

কলকাতা

এসএসসি শিক্ষক এবং শিক্ষাকর্মী নিয়োগে ব্যাপক জালিয়াতি করা হয়েছে জানিয়ে শুক্রবার ফের একটি রিপোর্ট কলকাতা হাইকোর্টে জমা দিল সিবিআই। এই রিপোর্টে জানানো হয়েছে, এসএসসি’র প্রাক্তন চেয়ারম্যান সুবীরেশ ভট্টাচার্যের নির্দেশে ফেল করা প্রার্থীদের পাশ করানো হয়েছে। 
উল্লেখ্য, সুবীরেশ ভট্টাচার্য এখন জেলে রয়েছেন। 
সিবিআই রিপোর্টে জানিয়েছে, এসএসসি’র তৎকালীন এক মহিলা প্রোগ্রামিং অফিসার নম্বর বাড়ানোর কাজটি করতেন। এমনভাবে নম্বর বাড়ানো হতো, যাতে ফেল করা প্রার্থীরা বা শূন্য পাওয়া প্রার্থীরা প্যানেলে অথবা ওয়েটিং লিস্টে চলে আসে। অনেক আগেই সিবিআই গাজিয়াবাদের নাইসা কমিউনিকেশন প্রাইভেট লিমিটেড নামে একটি সংস্থার নাম হাইকোর্টকে জানিয়েছে। এই সংস্থাকে দিয়েই এসএসসি তার দুর্নীতির কাজ সুচারুভাবে সম্পন্ন করেছিল। এই নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় ‘নাইসা’ সংস্থার বিরুদ্ধে বহু অভিযোগ এনেছে সিবিআই। শুক্রবার যে রিপোর্ট জমা পড়েছে সেখানে নাইসা’র এক বাঙালি অফিসারের নাম সামনে এসেছে।
এদিন সিপিআই(এম) নেতা সুজন চক্রবর্তী এসএসসি দুর্নীতি সম্পর্কে এক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, একটা সংগঠিত অপরাধ হয়েছে এসএসসি’র নিয়োগে। ৮০ শতাংশ নিয়োগই হয়েছে জালিয়াতি করে। শুধু সুবীরেশ ভট্টাচার্য নন, এর সঙ্গে অনেকেই জড়িত রয়েছেন। সুবীরেশ ভট্টাচার্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিকে ডি-লিট দেওয়ার প্রস্তাবক। তাই তিনি এসএসসি’র চেয়ারম্যান থাকাকালীন একটি কলেজের অধ্যাপক থাকতে পারেন। পরে আবার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যও হতে পারেন। স্কুলে যত নিয়োগ হয়েছে, তার মধ্যে সবটাই দুর্নীতি হয়েছে। অনেকেই ধরা পড়েছেন। কার নির্দেশে এই কেলেঙ্কারি হয়েছে সেটা প্রকাশ হোক!  
এসএসসি’র নবম-দশম, একাদশ-দ্বাদশ, গ্রুপ-ডি এবং গ্রুপ-সি’র উত্তরপত্র বা ওএমআর শিট মূল্যায়ন করার দায়িত্ব (বরাত) পেয়েছিল গাজিয়াবাদের নাইসা। এই নিয়োগের ক্ষেত্রে ওএমআর শিট স্কুল সার্ভিস কমিশনের দপ্তরেই স্ক্যান করা হয়েছিল। এসএসসি’র মূল্যায়নের পর নম্বর সহ তালিকা এসএসসি তুলে দিয়েছিল নাইসা’র হাতে। সমস্ত বিভাগের নিয়োগের একটি করে কমিশন কপি নিজেদের ডেটাবেসেও রেখে দিয়েছিল। কলকাতা হাইকোর্ট নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেবার পরই এই তদন্তকারী সংস্থা গাজিয়াবাদে যায়। সেখানে দীর্ঘ তল্লাশির পর গাজিয়াবাদে নাইসার এক প্রাক্তন কর্মী পঙ্কজ বনসলের বাড়ি থেকে তিনটি হার্ডডিক্স উদ্ধার করে সিবিআই। এরপরই কলকাতায় সুবীরেশ ভট্টাচার্যের অফিস এবং বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে একটি হার্ডডিক্স উদ্ধার হয়। 
এই হার্ডডিক্সগুলি উদ্ধারের পরই কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা জানিয়েছিল, নিয়োগের ক্ষেত্রে কেলেঙ্কারি হয়েছে। পরীক্ষার্থীদের ওএমআর শিট দেখে সিবিআই তার রিপোর্টে জানিয়েছে, শূন্য বা এক, দুই নম্বর পেয়েছে এমন প্রার্থীদের নম্বর বাড়িয়ে ৫২ থেকে ৫৩ করে দেওয়া হয়েছে। কলকাতা হাইকোর্টেই তদন্তকারী সংস্থা জানিয়েছে, এমন ভুয়ো নিয়োগের সংখ্যা ২১ হাজার ছাড়িয়ে যাবে। তবে এখনও স্ক্রুটিনির কাজ করছে সিবিআই। সিবিআই জানিয়েছে, সুবীরেশ ভট্টাচার্য সেসময় জানিয়েছিলেন এসএসসি যেভাবে ওএমআর শিটে নম্বর বাড়ানোর কাজ করবে তা সবটাই জানিয়ে দেওয়া হয় নাইসা‘কে। এব্যাপারে এসএসসি’কে সাহায্য করবেন নাইসা’র ভাইস প্রেসিডেন্ট। 
এরপর করোনা সংক্রমণের সময় এসএসসি’র বিরুদ্ধে একের পর এক অভিযোগ কলকাতা হাইকোর্টে জমা পড়ে। শেষ পর্যন্ত প্রমাণিত হয় জালিয়াতি হয়েছে ওএমআর শিটে। গাজিয়াবাদ থেকে উদ্ধার হওয়া হার্ডডিক্স এবং কলকাতা থেকে উদ্ধার হওয়া হার্ডডিক্স একই তথ্য দেয়নি। বিকৃত তথ্য সিবিআই’র হাতে চলে আসে। গত ৬ ডিসেম্বর কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় ৪০জন ভুয়ো প্রার্থীর নাম এবং ওএমআর শিট এসএসসি’র ওয়েবসাইটে প্রকাশের নির্দেশ দিয়েছিলেন। এসএসসি ভুয়ো ৪০ জনের নাম এবং ওএমআর শিট প্রকাশ করতে বাধ্য হয়েছিল। প্রকাশিত ওএমআর শিটে দেখা গিয়েছে সাদা খাতা জমা দিয়েছেন এমন প্রার্থীরাও চাকরি পেয়েছেন। এমনকি রোল নম্বর ভুল লিখেছেন এমন প্রার্থীও নিয়োগপত্র পেয়েছেন।
আগেই গত ৩০ নভেম্বর আদালতে এসএসসি হলফনামা জমা দিয়ে নিজেই জানিয়েছিল নবম-দশমের ১৮৩ জন ভুয়ো শিক্ষকের নাম। আদালতের নির্দেশে তাঁদের তালিকাও প্রকাশ হয়েছে। এসএসসি ভুয়ো প্রার্থীদের হদিশ দেবার পরই বিচারপতি জানতে চান কীভাবে এই প্রার্থীদের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় ঢোকানো হয়েছিল। এসএসসি জানায় ‘মূলত র্যায়োঙ্ক জাম্প’ করে এই প্রার্থীদের নিয়োগ করা হয়েছে। আদালত সেদিন নির্দেশ দিয়েছিল এই ভুয়ো প্রার্থী যাঁরা চাকরি করছেন তাঁদের নাম ওয়েবসাইটে দিতে হবে এবং দুটি সংবাদপত্রে এঁদের নাম প্রকাশ করতে হবে। 
এদিন আদালত মন্তব্য করেছে, এসএসসি নিজেই ভুয়ো নিয়োগ খুঁজে পাচ্ছে, অন্যদিকে এই নিয়োগ টিকিয়ে রাখার জন্য এসএসসি শীর্ষ আদালতে স্থগিতাদেশ চাইতে মামলা করছে। এদিকে সিবিআই আদালতকে জানিয়েছে, ভুয়ো প্রার্থীর সংখ্যা ১৮৩ নয় এই সংখ্যা ৯৫২। সব মিলিয়ে আদালতের নির্দেশে এখনও পর্যন্ত এসএসসি ২২৩ জন ভুয়ো শিক্ষকের নাম প্রকাশ করেছে।
এসএসসি’র গ্রুপ-ডি নিয়োগ দুর্নীতির একটি মামলার শুনানির সময় ওএমআর শিট জালিয়াতির প্রমাণ ধরা পড়েছে। ১০০ জন ভুয়ো শিক্ষাকর্মীর নাম পাওয়া গেছে। এরমধ্যে দেখা গেছে গাজিয়াবাদ থেকে সিবিআই’র উদ্ধার করা ওএমআর শিটে শূন্য পেয়েছেন তাঁরা কলকাতা থেকে উদ্ধার করা ওএমআর শিটে ৪৩ নম্বর পেয়েছেন। এমন শূন্য থেকে ৪৩ পেয়েছেন ১০ জন প্রার্থী। এছাড়া নম্বর বাড়িয়ে নিয়োগপত্র দেওয়া হয়েছে বহুপ্রার্থীকে। গ্রুপ-ডি পদে শিক্ষাকর্মী নিয়োগে দুর্নীতি যাচাই করতে আদালত মামলাকারীদের আইনজীবী, সিবিআই’র আইনজীবী এবং এসএসসি’র আইনজীবীকে একসঙ্গে বসার নির্দেশ দিয়েছে। এসএসসি দপ্তরে আইনজীবীদের বসতে হবে। আগামী ১৪ ডিসেম্বরের আগে আইনজীবীদের রিপোর্ট আদালতে জমা দিতে হবে। ১৬ ডিসেম্বর মামলাটি শুনানির জন্য রাখা হয়েছে।

 

 

Comments :0

Login to leave a comment