Christmas 2023

বড়দিনের ছুটিতে পর্যটকের ঢল ডুয়ার্স থেকে দীঘায়

রাজ্য জেলা

বড়দিনের ছুটিতে অযোধ্যা পাহাড়ে পর্যটকদের ভিড়

বড়দিনের ছুটিতে মূর্তি নদী সহ বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্রে মানুষের ভিড়। পর্যটকদের কাছে অত্যন্ত পছন্দের জায়গা ডুয়ার্স। ডুয়ার্সের নদী, পাহাড়, জঙ্গল নিরিবিলি পরিবেশ পর্যটকদের আকৃষ্ট করে। বছরের বিভিন্ন সময় ডুয়ার্সের বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্রে পর্যটকদের ভিড় লক্ষ্য করা যায়। বড়দিনেও তার ব্যতিক্রম নয়। সোমবার ডুয়ার্সের অন্যতম পর্যটনকেন্দ্র মূর্তিতে পর্যটকদের ঢল নামলো। বড়দিনের আনন্দে মেতে উঠে পর্যটকরা। পাশাপাশি ডুয়ার্সের অন্যান্য পর্যটন কেন্দ্র এবং পিকনিক স্পট গুলিতে যথেষ্ট ভিড় রয়েছে। মূর্তিতে অবস্থিত আই লাভ মূর্তি ফলক এবং মূর্তি নদীতে নেমে সেলফি নিতে ব্যস্ত পর্যটকরা। রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তের পর্যটকরা হোটেল, রিসর্টগুলিতে রাত্রি যাপন করে এদিন সকাল থেকেই বেরিয়ে পড়েছেন। শিশু থেকে শুরু করে বয়োজ্যেষ্ঠ সকলেই বড়দিনের আনন্দে মেতে উঠেছে। কেউ পরিবার নিয়ে কেউ আবার বন্ধুদের সাথে আনন্দ হুল্লোরে মেতে 

বড়দিনের ছুটিতে হাজার হাজার পর্যটক পাহাড়মুখী। কালিম্পং, কার্শিয়াং, লাভা, লোলেগাঁও, সিলং সহ বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়ছেন পর্যটকরা।  উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন পার্কেও ভিড় বাড়ছে। তুষারপাতের সম্ভাবনা রয়েছে দার্জিলিংয়ের সান্দাকফুতে। হালকা বৃষ্টির সঙ্গে তুষারপাত হতে পারে মঙ্গলবার পূর্বাভাস রয়েছে হাওয়া অফিসের। সোমবার বড়দিনে জমজমাট দার্জিলিং। রোদ ঝলমলে আকাশে দেখা যাচ্ছে ঝকঝকে কাঞ্চনজঙ্ঘাকে। পর্যটকরা উপভোগ করছেন সেই দৃশ্য।


এদিন সকাল থেকেই টাকি পর্যটন কেন্দ্রে মানুষের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। দূরদুরান্ত থেকে মানুষ এসে উপস্থিত হয়েছেন টাকিতে ইছামতি নদীর ঘাটে। কলকাতা সহ রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ এসেছেন। ইছামতি নদীর জল সীমানা বরাবর পূর্ব পাড়ে প্রতিবেশী বাংলাদেশ। এপারে ভারতের টাকি। রাজবাড়ী, জমিদার বাড়ি, মিনি সুন্দরবন সহ নৌকায় ভ্রমণ এবং নৌকায় করে বাংলাদেশের খুব কাছ থেকে দেখার ইচ্ছা পর্যটকদের তা চললো দিনভর। বরানগরের বাসিন্দা মৌমিতা দে প্রতিবছরই পঁচিশে ডিসেম্বর তার পরিবার এবং বন্ধু-বান্ধবের সাথে টাকিতে আসেন। এ বছরও তার কোন ব্যতিক্রম হয়নি। সারাদিন টাকির বিভিন্ন জায়গায় ঘুরবেন নৌকায় চড়বেন সেলফি তুলবেন খাওয়া-দাওয়া করবেন আবার ফিরে যাবেন গঙ্গা পাড়ে বাংলানগরে। এমনটাই তিনি জানান। 


বড়দিনের ছুটির আমেজে অযোধ্যা পাহাড়ে ভিড় পর্যটকদের। পুরুলিয়া এখন পর্যটকদের ভিড়ে ঠাসা। বান্দোয়ানের দুয়ারশিনি, মানবাজার দুই ব্লকের দুর্গাডি, জয়চন্ডী পাহাড়, গড় পঞ্চকোট, বড়ন্তই, অযোধ্যা পাহাড় সর্বত্র শুধুই পর্যটক। পর্যটন কেন্দ্র থেকে শুরু করে পুরুলিয়া শহরের হোটেল গুলিতে এখন ভিড়ে ঠাসা। একই চিত্র ট্রেন বা বাসে। সর্বত্রই কোন টিকিট নেই। শুধু পশ্চিমবঙ্গ নয়, পার্শ্ববর্তী রাজ্য থেকেও বহু মানুষ প্রকৃতিকে উপভোগ করতে হাজির হয়েছেন পরিবার-পরিজন নিয়ে। বড়দিনের ছুটিতে অযোধ্যা পাহাড়ে শুধু গাড়ি আর গাড়ি। স্থানীয় মানুষেরাও বেরিয়ে পড়েছেন পিকনিকে। ভিন জেলা থেকে আসা পর্যটকরা জেলার প্রাকৃতিক পরিবেশ নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করলেও রাস্তাঘাট নিয়ে বেশ কিছু মানুষ অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। শীতের এই মিষ্টি আমেজে পুরুলিয়া তাদের কাছে পর্যটনের অন্যতম প্রধান কেন্দ্র হয়ে উঠেছে। অনেকেরই বক্তব্য একবারে মন ভরল না। ফের আসতে হবে পুরুলিয়া। জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহ অব্দি অযোধ্যা পাহাড় থেকে শুরু করে গড় পঞ্চকোট, বড়ন্তি প্রভৃতি জায়গায় কোন হোটেল, লজ, রির্সট বা হোম স্টে খালি নেই। যারা হঠাৎ ঠিক করেছিলেন এই ছুটিতে পুরুলিয়া আসবেন। তাদের অনেককে এবার নিরাশ হতে হলেন। 


 

বড়দিনে চড়ুই ভাতির আনন্দের সাথে সাথে সমুদ্র স্নান সেরে নিতে চাইছেন, রহড়া থেকে আসা দুই  শিক্ষক পরিবার মোহন কুমার মান্না এবং পবিত্র মান্না। তাঁরা বলেন, ইংরেজি বছর শেষে বড়দিনের ছুটিতে পরিবারের সকলের নিয়ে ছুটি কাটাতে বেরিয়ে পড়লাম দীঘার মুখে।
রবিবার রাত থেকে শত শত ছোট বড় গাড়ি উপকূলে ভিড় জমিয়েছে। দীঘা সহ পূর্ব মেদিনীপুরের সমুদ্র উপকূলের সমস্ত জায়গা ভরাট হয়ে গেছে জনসমাগমে। দীঘা, মন্দারমণি, তাজপুর, রসুলপুর মৎস্য বন্দর, খেজুরির হিজলী শরীফ সহ, মেরিন বীজ ঢেকে গেছে রংবেরঙের পোশাক পরিহিত শিশু থেকে বৃদ্ধ। সকলেই মেতে উঠেছে ক্রিসমাস বড়দিনের আনন্দে পর্যটন কেন্দ্রগুলো। হোটেল মালিকদের মুখে চওড়া হাসি। এখন সৈকত শহরে তিল ধারনের জায়গা নেই। এই সুযোগ নিচ্ছেন অনেকে হোটেল মালিক। হোটেলের রেট যেমন খুশি তেমন হাঁকিয়ে বেড়াচ্ছেন। শুধু তাই না, কলকাতা থেকে দীঘাগামী বেসরকারি বাস ১৫০ টাকার পরিবর্তে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা হাঁকাচ্ছে। তবু আসছেন ছুটি কাটাতে ভ্রমণ পিপাসু পর্যটক। 


 

ভিড় সামাল দিতে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা প্রশাসন কোমর বেঁধে লেগে পড়েছেন। পর্যটক এবং মহিলাদের নিরাপত্তার জন্য। নেশাগ্রস্থ হয়ে যাতে সমুদ্রে স্নানে না নামে। পূর্ব মেদিনীপুর পুলিশ প্রশাসন পর্যটকদের নিরাপত্তা, আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় নতুন পরিকল্পনা নিয়েছে। উৎসব মরশুমে এবার নিরাপত্তার দায়িত্বে মহিলা পুলিশ কর্মীদের" উইনারস" টিম কে নামানো হয়েছে।
উল্লেখ্য; দীঘায় আগত মহিলা পর্যটকদের বিভিন্ন সময়, ইভ টিজারদের বেয়াদপি মুখ বুজে সহ্য করতে হয়। তার সম্মুখীন আর যাতে হতে না হয়,  মহিলা পর্যটকরা তাদের সমস্যার কথা সহজে মহিলা পুলিশ প্রশাসনকে বলতে পারেনা। তাই পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পুলিশ এই ভিড়ের মধ্যে যাতে কোন অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে আগেভাগেই তার প্রস্তুতি নিয়ে ফেলেছেন। মেরিন ড্রাইভ, দীঘা, মন্দারমনি, তাজপুর এলাকায় নুলিয়া যেমন রয়েছে ,সিভিক, পুলিশ সহ সিসি ক্যামেরা এবং সমুদ্রে টহলদারির ব্যবস্থাও রয়েছে। ডিএসডিএ’র প্রধান করণিক চন্দন কর্মকার জানান, প্রশাসনিক সতর্কতা অন্যান্য বারের থেকে বেশি থাকবে। পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য সমস্ত রকম ব্যবস্থা করা হয়েছে।

Comments :0

Login to leave a comment