আবারও বিজেপি শাসিত ছত্তিশগড়ে এক দলিত ব্যক্তিকে রাস্তার ধারে খুঁটিতে বেঁধে পিটিয়ে মেরে ফেলল উন্মত্ত জনতা। বিজেপি’র শাসনকালে দেশের বিভিন্ন এলাকায় মহিলা, দলিত, আদিবাসী ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ নজিরবিহীন আক্রমণের শিকার হচ্ছেন। আক্রান্তদের তালিকায় সংযোজন ছত্তিশগড়ের রায়গড় জেলায় চক্রধর নগর থানার অন্তর্গত বানোরার ডুমারপালি গ্রাম। রবিবার চুরির অভিযোগে পঞ্চরাম ওরফে বুটু সারথি(৫৫) নামে এক দলিত ব্যক্তিকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। এই ঘটনা দলিত সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে ক্রমবর্ধমান অত্যাচার ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের একটি গুরুতর উদাহরণ।
এই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত তিন জনকে গ্রেপ্রার করেছে পুলিশ দাবি করেছে। দেহ ময়নাতদন্তে পাঠানো হয়েছে বলে জানানো হয়েছে।
জানা গেছে রবিবার রাতে গ্রামবাসীরা পঞ্চরামের বিরুদ্ধে চুরির অভিযোগ এনে একটি খুঁটির সঙ্গে বেঁধে রাখে। পরের দিন উত্তেজিত জনতা আইন হাতে তুলে নিয়ে তাকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করে। পুলিশ একাধিক ধারায় মামলা নথিভুক্ত করেছে। রায়গড় সহ গোটা ছত্তিশগড়ে দলিতদের বিরুদ্ধে এমন ঘটনা বারবার ঘটছে। চুরির অভিযোগে দলিত ব্যক্তিকে জনতার হাতে খুন করার ঘটনা এটাই প্রথম নয়। এর আগেও রায়গড়ের লাইলুঙ্গা থানা এলাকায় অরবিন্দ সারথি নামে এক দলিত ব্যক্তিকে থানায় পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছিল। সে ক্ষেত্রে পুলিশের তদন্ত প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলে সিবিআই তদন্তের সুপারিশ করেছিলেন বিশেষ বিচারক। তবে সেই মামলাটি এখনও বিলাসপুরে বিচারাধীন এবং নির্যাতিতার পরিবার ১৫ বছর ধরে ন্যায়বিচারের অপেক্ষায় রয়েছেন। এই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি স্পষ্ট করে যে সরকার ও প্রশাসন দলিতদের বিরুদ্ধে হিংসা বন্ধ করতে ব্যর্থ।
জনতা আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া এবং দলিতদের বিরুদ্ধে বারবার এমন ঘটনা দেখায় যে ছত্তিশগড়ে মানবাধিকারের প্রতি সরকারের জবাবদিহিতা ক্রমাগত হ্রাস পাচ্ছে। এটি শুধু আইন-শৃঙ্খলার ব্যর্থতা নয়, এটি এমন একটি বিষয় যা সমাজে বিদ্যমান জাতিগত বৈষম্যকে তুলে ধরে।
এমতাবস্থায় পঞ্চরাম সারথি খুনের ঘটনায় উত্তেজিত জনতার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছে বহু সংগঠন। সংগঠনগুলো বলছে, ভুক্তভোগী পরিবার যাতে ন্যায়বিচার পায় এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে সেদিকে সরকারের পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।
“রবিবার সকালে খবর পাওয়া যায় যে, বানোরা গ্রামের বাসিন্দা পুনি রামের ছেলে পঞ্চ রাম সারথি, ডুমারপালি গ্রামের বীরেন্দ্র সিদার বাড়িতে চুরির উদ্দেশ্যে ঢুকেছে। তাকে ধরে নিয়ে মারধর করা হয়। যার ফলে তার মৃত্যু হয়। সোমবার বিলাসপুর রেঞ্জের আইজিপি সঞ্জীব শুক্লা জানিয়েছেন, ‘‘যে ঘটনাটি চক্রধর নগর থানার অন্তর্গত ডুমারপালি গ্রামে ঘটেছে। মূল অভিযুক্ত, বীরেন্দ্র সিং সিদার, লোকনাথ প্রধানের ছেলে অজয় প্রধান এবং অশোক প্রধানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ধৃতেরা সকলেই ডুমারপালি গ্রামের বাসিন্দা। বিষয়টির আরও তদন্ত চলছে আরও গ্রেপ্তার হতে পারে।’’
রায়গড় জেলায় মানবাধিকার কর্মী ডিগ্রি প্রসাদ চৌহান অভিযোগ করে বলেন,‘‘ এক ব্যক্তিকে চুরির অভিযোগে গ্রামবাসীররা তাকে ধরে ফেলে এবং তাকে দড়ি দিয়ে খুঁটিতে বেঁধে পিটিয়ে হত্যা করে। রায়গড়ে চুরির অভিযোগ এনে দলিতদের দলবদ্ধভাবে মারধরের ঘটনা এটি প্রথম নয়। এর আগে, রায়গড় জেলার লাইলুঙ্গা থানায় এক দলিত, অরবিন্দ সারথিকে চুরির অভিযোগে থানায় পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছিল। ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে সেদিকে সরকারের লক্ষ রাখা উচিত।’’
Dalit Man Beaten to Death
চুরির অভিযোগে দলিতকে পিটিয়ে খুন, ছত্তিশগড়ে গ্রেপ্তার ৩
×
Comments :0