Newsclick

পুরকায়স্থদের গ্রেপ্তারি বহাল রাখল দিল্লি হাইকোর্ট

জাতীয়

দাঁতে দাঁত চেপে কেন্দ্রের মোদী সরকারের উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হেনস্তার বিরুদ্ধে নিজের অবস্থানে ঋজু রয়েছে নিউজক্লিক। যেদিন এই সংবাদ পোর্টালের প্রতিষ্ঠাতা-সম্পাদক প্রবীর পুরকায়স্থ এবং এইচআর প্রধান অমিত চক্রবর্তীকে গ্রেপ্তারের পদক্ষেপ বাতিলের আরজি খারিজ করে দিল দিল্লি হাইকোর্ট, সেদিনই নিউজক্লিকের পক্ষ থেকে জানিয়ে দেওয়া হলো— সেই একই মিথ্যা ও বানানো অভিযোগ নিয়ে ফের তাদের দপ্তরে তল্লাশি চালিয়েছে সিবিআই, বারবার অনুসন্ধান চালিয়েও নিউজক্লিকের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগের কোনও প্রমাণ পায়নি ইডি, আয়কর দপ্তর, দিল্লি পুলিশের ইকনমিক অফেন্স উইংয়ের মতো তদন্তকারী সংস্থাগুলি। একইসঙ্গে নিউজক্লিক জানিয়ে দিল, ভারতীয় সংবিধান অনুযায়ী সাংবাদিকতায় স্বাধীনতার জন্য লড়াই চালিয়ে যাবে তারা। 
দিল্লি পুলিশের স্পেশাল সেল গত ৩ অক্টোবর ইউএপিএ’র ধারায় গ্রেপ্তার করেছে পুরকায়স্থ ও চক্রবর্তীকে। দিল্লির নিম্ন আদালত প্রথমে তাঁদের ৭ দিনের জন্য পুলিশি হেপাজতে এবং তারপর ১০ অক্টোবর তাঁদের ১০ দিনের জন্য বিচারবিভাগীয় হেপাজতে পাঠায়। এর মধ্যে তাঁরা দু’জনেই দিল্লি হাইকোর্টে ওই গ্রেপ্তারি ও হেপাজতের নির্দেশ বাতিলের আরজি পেশ করেন। শুক্রবার সেই আরজিই খারিজ করে দিয়েছেন দিল্লি হাইকোর্টের বিচারপতি তুষার রাও গেদেলা। পুরকায়স্থ ও চক্রবর্তী তাদের আবেদনে বলেছিলেন, গ্রেপ্তার করার সময়ে লিখিতভাবে তাঁদের কারণ জানানো হয়নি এবং নিম্ন আদালত দু’জনকেই হেপাজতে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছে তাঁদের আইনজীবীদের অনুপস্থিতিতে। এদিন বিচারপতি গেদেলা সেই আরজি খারিজ করতে গিয়ে যুক্তি দিয়েছেন, আবেদনকারীদের গ্রেপ্তার করার ক্ষেত্রে কোনও পদ্ধতিগত ত্রুটি হয়নি অথবা আইনি বা সাংবিধানিক ধারা লঙ্ঘন করা হয়নি। তাঁদের হেপাজতের নির্দেশও আইনসম্মত। তাঁর কারণ, গ্রেপ্তার করার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ধৃতদের লিখিতভাবে তার কারণ জানানো বাধ্যতামূলক নয় ইউএপিএ-তে। তবে দেখা যাচ্ছে, গ্রেপ্তার করার পরে ধৃতদের তার কারণ সম্পর্কে অবহিত করা হয়েছিল। তাই ধৃতদের আবেদনের কোনও সারবত্তা নেই।   
অন্যদিকে, এদিনই এক বিবৃতিতে নিউজক্লিক বলেছে, তাদের বিরুদ্ধে সাম্প্রতিক পদক্ষেপে সর্বশেষ যুক্ত হয়েছে সিবিআই। ইডি, আয়কর দপ্তর, দিল্লি পু‍‌লিশের ইকনমিক অফেন্স উইং এবং দিল্লি পুলিশেরই স্পেশাল সেলের পরে এটি কেন্দ্রী‌য় সরকারের পঞ্চম সংস্থা, যারা ঘুরেফিরে বিদেশ থেকে বেআইনিভাবে অর্থ সংগ্রহের একই সাজানো অভিযোগ নিয়ে থেকে থেকেই তদন্ত করছে আর একের পর এক এফআইআর দায়ের করে চলেছে নিউজক্লিকের বিরুদ্ধে। কিন্তু তারা জোরের সঙ্গে জানাচ্ছে যে, ব্যবসায়িক লেনদেনের ক্ষেত্রে নিউজক্লিক সংশ্লিষ্ট সমস্ত ভারতীয় আইন মেনে চলে, বিশেষত বিদেশ থেকে অর্থ পাওয়ার ক্ষেত্রে। তারা সব অর্থই পেয়েছে যথাযথ ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থার মাধ্যমে এবং সবগুলি সম্পর্কে আইন মেনে নির্দিষ্ট কর্তৃপক্ষকে যথা সময়ে অবহিতও করা হয়েছে। ইতিমধ্যে দিল্লি হাইকোর্টে এই সংক্রান্ত এক মামলার সাপেক্ষে রিজার্ভ ব্যাঙ্কও তা জানিয়ে দিয়েছে দিল্লি পু‍‌লিশের ইকনমিক অফেন্স উইংকে। তা সত্ত্বেও সেই পুরানো মিথ্যা ও বানানো অভিযোগকে সামনে রেখে গত ১১ অক্টোবর ফের সিবিআই তল্লাশি চালিয়েছে নিউজক্লিকের মুখ্য সম্পাদক প্রবীর পুরকায়স্থর বাড়িতে ও এই সংবাদ পোর্টালের দপ্তরে। যে সংবাদ পোর্টালটি একটানা প্রকৃত ভারতের চেহারা তুলে ধরে ক্ষমতাসীনের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে সত্যি বলে চলেছে, তার কণ্ঠরোধ করার এ এক মরিয়া প্রচেষ্টা। বাস্তবে নিউজক্লিকের সমস্ত তথ্য ও অ্যাকাউন্টের ফাইল তন্ন তন্ন করে ঘেঁটে এবং সমস্ত স্তরের কর্মীদের জেরা করেও ইডি গত দু’বছরে এই সংবাদ পোর্টালের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগও দায়ের করতে পারেনি। শুধু তা নয়। দিল্লি পু‍‌লিশের ইকনমিক অফেন্স উইং নিউজক্লিকের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দিতে পারেনি। আয়কর দপ্তর আদালতে নিজেদের অভিযোগের পক্ষে যুক্তি ও প্রমাণ দিতে পারেনি। আর দিল্লি পুলিশ ইউএপিএ’র ধারায় যে অভিযোগ এনেছে, তাও সম্পূর্ণ ভুয়ো। এই অভিযোগ কোথাও টিকবে না। বাস্তবে কেন্দ্রীয় সরকার নিউজক্লিকের সমস্ত তথ্য এবং নথিপত্র হাতে নিয়েও একটিও অভিযোগ দাঁড় করাতে পারেনি। সিবিআই’র সর্বশেষ এফআইআর-এ স্পষ্ট, সরকার ডাইন খুঁজতে ব্যস্ত, যাতে স্বাধীন সংবাদ মাধ্যম হিসাবে নিউজক্লিক আর কাজ করতে না পারে। নিউজক্লিক সরকারের সমস্ত সংস্থার সঙ্গে সহযোগিতা করার পাশাপাশি দেশের বিচারবিভাগের উপর পূর্ণ আস্থাশীল। সাংবাদিকতায় স্বাধীনতার পক্ষে নিউজক্লিক অনড় থাকবে।

 

 

Comments :0

Login to leave a comment