গত মাসেই হয়েছিল কাঞ্চনজঙ্ঘার দুর্ঘটনা। এক মাস যেতে না যেতেই উত্তর প্রদেশের গোন্ডায় ডিব্রুগড় এক্সপ্রেসের ১২টি বগি লাইনচ্যুত। বৃহস্পতিবারের এই দুর্ঘটনায় অন্তত চারজনের মৃত্যুর খবর মিলিেছে বিকেল পর্যন্ত। হতাহতের সংখ্যা বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে সর্বত্র।
গত বছরের ২ জুন হয়েছিল ওড়িশার বালেশ্বরের কাছে বাহানাগার ভয়াবহ রেল দুর্ঘটনা। তার আগে এবং পরে একের পর এক দুর্ঘটনা চলছেই। একদিকে ‘বুলেট ট্রেন’ বা ‘বন্দে ভারত’-র মতো অত্যাধুনিক খরচসাপেক্ষ ট্রেন। আরেকদিকে সাধারণের যাতায়াতে সমানে ঝুঁকি কেন বাড়ছে, সেই প্রশ্ন বড় হলো এদিনও।
বৃহস্পতিবার বেলা ২টো ৩৮ মিনিট নাগাদ চণ্ডীগড় থেকে ডিব্রুগড় যাওয়ার পথে দুর্ঘটনায় জখম অন্তত ২৫ যাত্রী। জানা গেছে ১২টি বগির মধ্যে তিনটি বগির গেট, জানালা খোলা যাচ্ছে না মাটিতে গেঁথে যাওয়ার কারণে। ওই বগিগুলিতে আটকে থাকতে পারেন বহু যাত্রী। বগিগুলি খুলতে পারলেই জানা যাবে হতাহতের আসল তথ্য। সেই কারণে নিহত আহতের সংখ্যা বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
১৭ জুন এনজিপি থেকে রাঙাপানির কাছে ১১ কিলোমিটারের মধ্যে দুর্ঘটনার মুখে পড়ে শিয়ালদহ মুখী কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস। একটি মালগাড়ি ধাক্কামারে কাঞ্চনজঙ্ঘায়। সেদিন এই লাইনে বিকল ছিল স্বয়ংস্ক্রিয় সিগন্যালিং ব্যবস্থা। প্রাণ হারিয়েছিলেন একাধিক, আহত হন বহু যাত্রী। কিন্তু এওরপরও দুর্ঘটনার দায় এড়াতে চেয়েছে রেল। মালগাড়ির চালককে সরাসরি দায়ী করা হয়, তবে রেলেরই সুরক্ষা কমিশনের রিপোর্ট জানায় দুর্ঘটনার আসল কারণ যান্ত্রিক ব্যবস্থাপনায় গলদ। গত মঙ্গলবার কমিশনার অফ রেলওয়ে সেফটি জানিয়ে দেয় চালক নয়, রেলের ভুলে কাঞ্চনজঙ্ঘার দুর্ঘটনা ঘটেছে।
কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস দুর্ঘটনার এক মাসের মধ্যে ফের উত্তরপ্রদেশের গোণ্ডা ও ঝিলাডির মাঝে পিকাউরায় ডিব্রুগড় এক্সপ্রেস দুর্ঘটনা। প্রায় নিয়মিতভাবে রেল দুর্ঘটনা ঘটছে। রেলের নিরাপত্তা নিশ্চিত না করে বন্দে ভারত এক্সপ্রেস নিয়ে গিমিক চলছে। রেলের পৃথক বাজেটে এখন তুলে নেওয়া হয়েছে।
ডিব্রুগড় এক্সপ্রেসের লাইনচ্যুত হয়ে নিহতদের ক্ষতিপূরণ ঘোষণা রেলের। রেলের তরফে জানানো হয়েছে, দুর্ঘটনায় নিহতদের পরিবারকে ১০ লক্ষ টাকা, গুরুতর জখমদের আড়াই লক্ষ টাকা, এবং অল্প আহতদের পঞ্চাশ হাজার টাকা করে দেওয়া হবে।
আহতদের স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। দুর্ঘটনাস্থলে ৪০ জনের মেডিক্যাল টিম পৌঁছে গিয়েছে। সুরক্ষিত যাত্রীদের স্পেশাল ট্রেনের ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে রেল সূ্ত্রে জানা গেছে। রেলমন্ত্রকের তরফে রেল দুর্ঘটনায় উচ্চপর্যায়ের তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ওই রুটে একাধিক ট্রেন বাতিল এবং বহু ট্রেনের রুট বদল করা হয়েছে। দ্রুত গতিতে চলছে আটকে পড়া যাত্রীদের উদ্ধারের কাজ। রয়েছেন জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা দপ্তরের কর্মীরা। উত্তরপ্রদেশে পুলিশ-প্রশাসনের আধিকারিকরা ঘটনাস্থলে রয়েছেন। দুর্ঘটনার কারণ এখনও স্পষ্ট নয়। ঘটনাস্থলে রেলের আধিকারিকরা। কীভাবে লাইনচ্যুত হয়েছে তা খতিয়ে দেখছেন।
রেলের আধিকারিকরা দাবি করেন, দুর্ঘটনার আগে ট্রেনের চালকরা বিস্ফোরণের আওয়াজ শুনতে পান। তরপরেই ট্রেনের বগি লাইনচ্যুত হয়। কি ধরণের বিস্ফোরণ তা এখনও স্পষ্ট নয়। পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখছেন রেলের আধিকারিকরা। তবে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন অংশ মনে করাচ্ছেন যে এর আগে একের পর এক ট্রেন বেলাইন হয়েছে। গত দশ বছরে কেন্দ্রে বিজেপি সরকারের মেয়াদে নিয়মিত এমন দুর্ঘটনা হয়ে চললেও ব্যবস্থা না নেওয়ার অভিযোগ সর্বত্র। ফলে, সাধারণ যাত্রীদের কাছে প্রতিদিন বাড়ছে রেলযাত্রার বিপদ।
Dibrugarh Express Accident
কাঞ্চনজঙ্ঘার একমাসের মধ্যে ডিব্রুগড়, রেলে যাত্রীদের ঝুঁকি বাড়ছে প্রতিদিন
×
Comments :0