পূর্ব মেদিনীপুরের ভগবানপুরে কাজলাগড় প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে রবিবার আক্রান্ত হলেন কর্তব্যরত চিকিৎসক। দুর্ঘটনায় গুরুতর জখম এক যুবককে প্রয়োজনীয় চিকিৎসার স্বার্থে জেলা হাসপাতালে স্থানান্তরের সুপারিশ করায় তাঁকে বেপরোয়া মারধর করা হয়। তার আগে অবশ্য নিয়মমাফিক রোগীর প্রাথমিক চিকিৎসা করে দিয়েছিলেন তিনি। হাসপাতালে পরিকাঠামোর অভাব কেন, এই প্রশ্ন তুলে এদিন চিকিৎসককেই মারধর করা হয়! খোদ বিডিও অফিসের পাশে অবস্থিত স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এই হামলায় তীব্র চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে জেলাজুড়ে।
কলকাতার আর জি কর হাসপাতালের ঘটনার পর থেকেই নিরাপত্তা সহ বিভিন্ন দাবিতে রাজ্যজুড়ে জুনিয়র চিকিৎসকদের অবস্থান চলছে। এর মধ্যেই মুখ্যমন্ত্রী ‘ফোঁস’ করতে বলায় তৃণমূল বিধায়ক ও নেতারা ক্রমাগত জুনিয়র চিকিৎসকদের হুমকি দিয়ে চলেছেন। এই পরিস্থিতিতে ভগবানপুরে কর্তব্যরত চিকিৎসককে মারধরের ঘটনায় স্বাস্থ্যকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়েছে।
জানা গিয়েছে, পূর্ব মেদিনীপুরের ভগবানপুর এগরা রাজ্য সড়কে মোটরবাইক দুর্ঘটনায় জখম এক যুবককে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হয় ভগবানপুরের কাজলাগড় প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। সেখানে তাঁকে প্রাথমিক চিকিৎসার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক মিন্টু দে পরিবারের লোকজনকে জানান, রোগীর কলার বোনের মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে। তাঁকে দ্রুত তমলুক মেডিক্যাল কলেজ এবং হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া দরকার। কারণ প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এই চিকিৎসার যথাযথ পরিকাঠামো নেই। একথা শুনেই জখম যুবকের সঙ্গীরা উত্তেজিত হয়ে পড়েন। কেন প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসা হবে না, তার কৈফিয়ৎ চাওয়া হয় চিকিৎসকের কাছে। কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁদের বোঝানোর চেষ্টা করেন, গুরুতর আহত হয়েছেন ওই যুবক। ফলে তাঁকে জেলা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া জরুরি। এসময় কোন কথা না শুনে প্রথমে ধাক্কাধাক্কি, পরে মারধর শুরু হয়ে যায়। এর মধ্যেই কোনক্রমে নিজেকে অন্যত্র সরিয়ে প্রাণ বাঁচান চিকিৎসক। তবে এই ঘটনার পর থেকেই কাজলাগড় স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ওই চিকিৎসক মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন।
এই হামলার ঘটনায় উদ্বিগ্ন চিকিৎসক মহল বলছে, স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ভেতরেই যদি আক্রমণ হয় তাহলে চিকিৎসকদের নিরাপত্তা কোথায়! জুনিয়র চিকিৎসকদের আন্দোলনের দাবি যে ন্যায্য, এই ঘটনা তারই প্রমাণ। এদিকে চিকিৎসক নিগ্রহের ঘটনায় লিখিত অভিযোগ দায়ের হয়েছে ভগবানপুর থানায়। এখনও পর্যন্ত পুলিশ কাউকেই গ্রেপ্তার করেনি। পুলিশ আধিকারিক জানান, ‘‘তদন্ত চলছে। সিসিটিভি ফুটেজ দেখে অপরাধী চিহ্নিত করার কাজ চলছে।’’ এই বিষয়ে ভগবানপুর ১ নম্বর ব্লকের বিডিও’কে ফোন করা হলে তিনি কিছু বলতে চাননি।
ভগবানপুরে চিকিৎসক নিগ্রহের ঘটনা জানাজানি হতেই জেলার সর্বত্র ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন চিকিৎসকরা। তমলুকের একজন চিকিৎসক জানান, "আর চুপ করে বসে থাকা সম্ভব নয়। কলকাতার নামকরা মেডিক্যাল কলেজ দেখিয়ে দিয়েছিল কর্তব্যরত চিকিৎসকদের কোন নিরাপত্তা নেই এরাজ্যে। এবার গ্রামের স্বাস্থ্যকেন্দ্রও প্রমাণ করলো, রাজ্যের কোনও প্রান্তেই কর্তব্যরত চিকিৎসককে নিরাপত্তা দিতে পারছে না সরকার। স্বাস্থ্যব্যবস্থা একেবারেই ভেঙে পড়েছে। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ‘ফোঁস’ ভাষণের পরে চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে নানাভাবে উসকানি দিয়ে চলেছেন তাঁর দলের বিধায়ক, সাংসদ, নেতারা। চিকিৎসকদের সম্পর্কে খারাপ প্রচার চলছে। তারই জেরে ভগবানপুরেও এই হামলা হলো।’’
Doctor Attacked
এবার ভগবানপুরের স্বাস্থ্যকেন্দ্রে আক্রান্ত কর্তব্যরত চিকিৎসক
×
Comments :0